নিজস্ব প্রতিবেদক:
সাজা ও দণ্ড স্থগিত চেয়ে বিএনপির পাঁচ নেতার আবেদন খারিজ করে দেওয়া পূর্ণাঙ্গ রায় অনুযায়ী, নির্বাচন করতে পারবেন না দলটির বেশ কয়েকজন নেতা। যাদের কেউ কেউ এখন জামিনে আছেন। আইনের বিশ্লেষকরা বলছেন, সাজাপ্রাপ্তদের নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ আগেও ছিল না। এই রায়ের মাধ্যমে বিষয়টি আরও স্পষ্ট হলো। ফলে আরও অনেক রাজনীতিবিদ নির্বাচনের উপযোগিতা হারাবেন।
আজ রবিবার (২২ অক্টোবর) এ বিষয়ে দেওয়া আদেশের পূর্ণাঙ্গ রায় হাইকোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। রায়ে বলা আছে, সাজা কখনও স্থগিত হয় না। হয় নিষ্পত্তি, নয়তো দণ্ড হয়। দুর্নীতি মামলায় দণ্ড পাওয়া কিছু ব্যক্তি বিচারাধীন আপিলে একটি দরখাস্ত দিয়েছেন সাজা স্থগিতের জন্য। কারণ, সাজা স্থগিত হলে তারা সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সম্ভাবনা দেখছিলেন। রায়ের মাধ্যমে স্পষ্ট হলো—আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত দণ্ড বহাল থাকবে, যার অর্থ সাজা কখনও স্থগিত হয় না।
ঢাকার বিভিন্ন আদালতে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও শীর্ষস্থানীয় থেকে শুরু করে বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে অনেক মামলার বিচারকাজ চলছে। এগুলোর মধ্যে প্রায় ৩০টি মামলার বিচারকাজ শেষ পর্যায়ে। এসব মামলার রায়ে যাদের দুই বছর বা এর বেশি কারাদণ্ড হবে, তাদের কেউ সংবিধান অনুযায়ী, আসন্ন নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না। কারণ, সংবিধানের ৬৬(২)-এর (ঘ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, নৈতিক ঙ্খলনজনিত কোনও ফৌজদারি অপরাধে কারও অন্যূন দুই বছরের কারাদণ্ড হলে এবং মুক্তি পাওয়ার পাঁচ বছর পার না হলে, তিনি নির্বাচনে অযোগ্য হবেন।
পূর্ণাঙ্গ রায়ে আদালত বলেছেন, সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুবিধার্থে আপিলকারীদের সাজা স্থগিত করার কোনও সুযোগ নেই। আবেদনকারীরা হলেন– ওয়াদুদ ভূঁইয়া, মো. আব্দুল ওহাব, মো. মশিউর রহমান, এ জেড এম জাহিদ হোসেন ও আমানউল্লাহ আমান। এই পাঁচ আবেদনকারীর বিষয়ে বলা হয়েছে, আবেদনকারীদের জামিন দেওয়া হয়েছে, তবে এটি বলা যায় না যে তারা খালাস পেয়েছেন, বা তাদের অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে, বা তাদের মুক্তি দেওয়া হয়েছে, বা শেষ পর্যন্ত তারা দোষী সাব্যস্ত ও সাজা থেকে খালাস পেয়েছেন। ফলে সংবিধানের ৬৬ (২)(ঘ) অনুচ্ছেদের পরিপ্রেক্ষিতে দণ্ডিতদের ওপর যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে, তা উপযুক্ত আদালতে স্থগিত না হওয়া পর্যন্ত কেউ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। এ ক্ষেত্রে ফৌজদারি কার্যবিধিতে যা কিছুই থাকুক না কেন, সংবিধানই এখানে প্রাধান্য পাবে।
দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম বলেন, ‘পূর্ণাঙ্গ রায় পাওয়ায় আমরা এখন বলতেই পারি যে কোনও সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তি জামিনে থাকলেও নির্বাচনে অংশগ্রহণের যোগ্য হবেন না, যতক্ষণ না পর্যন্ত উপযুক্ত আদালতে তার সাজা বাতিল হয়। ফলে সাজার বিরুদ্ধে আপিল করেছেন বা আপিল বিচারাধীন এমন কেউ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না।’
বিএনপির শীর্ষ নেতাদের বাইরেও অনেক নেতা নির্বাচনের উপযোগিতা হারাবেন। এমনকি রাজধানীতে আট বছর আগের নাশকতার একটি মামলার রায়ে ৯ অক্টোবর বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব, ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান, কুষ্টিয়া-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আহসান হাবিব লিংকন, বিএনপির গ্রাম সরকার বিষয়ক সহ-সম্পাদক বেলাল আহমেদ, সহ-প্রচার সম্পাদক শামীমুর রহমান শামীমসহ ১৫ জনকে চার বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তারাও নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার অযোগ্য হলেন।
জানতে চাইলে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, ‘আগেও কখনও সাজাপ্রাপ্তরা নির্বাচনে অংশ নিতে পারতেন না। যেহেতু সাজা স্থগিত চেয়ে আবেদন করা হয়েছিল, ফলে বিষয়টি বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। মাঝপথে সাজা কখনও স্থগিত হিসেবে বিবেচনা করা যাবে না, নিষ্পত্তি হতে হবে।’