আন্তর্জাতিক ডেস্ক রিপোর্টঃ
আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন করেছে। আইসিসির এমন উদ্যোগের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন নেতানিয়াহু। সোমবার গণতান্ত্রিক ইসরায়েলকে গণহত্যাকারী হামাসের সঙ্গে তুলনা করায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন তিনি।
হামাস নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ারের বিরুদ্ধেও গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন করেছেন আইসিসির কৌঁসুলি করিম খান। আর তা নিয়েই ক্ষেপেছেন নেতানিয়াহু। নেতানিয়াহু বলেছেন, তিনি ঘৃণার সঙ্গে এমন প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন। এর আগে সোমবার একই ধরনের কথা বলেছেনও মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তিনি বলেছেন, হামাসের সঙ্গে ইসরায়েলের তুলনা চলে না। আইসিসির প্রধান করিম খান বলেছেন, নেতানিয়াহু ও তার প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট গাজায় যুদ্ধাপরাধ ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের দায়ভার বহন করেছেন।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন বলেছেন, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির উদ্যোগ যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে পৌঁছানোর চলমান প্রচেষ্টাকে বিপন্ন করবে। ২০০২ সালে প্রতিষ্ঠিত আইসিসির সদস্য রাষ্ট্র নয় যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল।
এদিকে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েল গণহত্যা চালাচ্ছে না—এমন দাবি করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভকারীদের সমালোচনার মুখে সোমবার হোয়াইট হাউজের এক অনুষ্ঠানে এমন দাবি করেন তিনি। হোয়াইট হাউজে ইহুদি-আমেরিকানদের একটি অনুষ্ঠানে বাইডেন বলেন, ‘গাজায় গণহত্যা চালাচ্ছে না ইসরায়েল। আমরা এমন অভিযোগ অস্বীকার করি।’ যুক্তরাষ্ট্রে একাধিক অনুষ্ঠানে ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভের সম্মুখীন হয়েছেন বাইডেন। ইসরায়েলকে কট্টর সমর্থন দেওয়ায় মার্কিন এই প্রেসিডেন্টকে ‘জেনোসাইড জো’ বা গণহত্যাকারী জো বলে অভিহিত করেছেন তারা।
হোয়াইট হাউজের ঐ অনুষ্ঠানে ইসরায়েলকে ৭ অক্টোবরে হওয়া হামলার ভুক্তভোগী হিসেবে উল্লেখ করেছেন বাইডেন। ঐ দিন ইসরায়েলি ভূখণ্ডে ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের হামলায় ১ হাজার ২০০ ইসরায়েলি নিহত হয়। এ সময় আরো কয়েক শ ইসরায়েলিকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যান সশস্ত্র যোদ্ধারা। অনুষ্ঠানে ইসরায়েলিদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষায় দৃঢ় মার্কিন সমর্থনের কথা ব্যক্ত করেছেন বাইডেন।
তিনি বলেন, ‘হামাস নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ার এবং হামাসের অন্যান্য কসাইকে বের করে আনতে ইসরায়েলের পাশে রয়েছি আমরা। আমরা হামাসের হার দেখতে চাই। এ নিয়ে ইসরায়েলের সঙ্গে আমরা কাজ করছি।’ হামাসের হাতে জিম্মি অসুস্থ, বয়স্ক ও আহত ইসরায়েলিদের মুক্তির লক্ষ্যে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যকার আলোচনা স্থগিত হয়েছে। তবে তাদের মুক্তির প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বাইডেন।
তিনি বলেছিলেন, ‘আমরা তাদের বাড়ি ফিরিয়ে আনব। আমরা তাদের বাড়ি ফিরিয়ে আনবই।’ এ সময় গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বানও জানান বাইডেন। এর আগে রবিবার মোরহাউজ কলেজে দেওয়া বক্তৃতার সময়ও যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছিলেন তিনি। হোয়াইট হাউজের ঐ অনুষ্ঠানে যুদ্ধাপরাধের দায়ে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও তার প্রতিরক্ষামন্ত্রীর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত আইসিসির গ্রেফতারি পরোয়ানার বিরোধিতা করেছেন বাইডেন। সোমবার নেতানিয়াহু ও ইয়াহিয়া সিনওয়ারসহ আরো দুই হামাস নেতাকে গ্রেফতারের নির্দেশ দেয় আইসিসি।
মিশরে স্তূপ হয়ে জমে আছে গাজার ত্রাণ- রাফা ক্রসিং বন্ধ থাকায় ফিলিস্তিনি ছিটমহল গাজার জন্য আসা ত্রাণের খাদ্য ও ওষুধ মিশরে স্তূপ হয়ে জমে আছে। এদিকে গাজার উপকূলে যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি করা ভাসমান জেটি থেকে দুই দিন ধরে কোনো ত্রাণসহায়তা পৌঁছায়নি বলে সোমবার সতর্ক করেছেন জাতিসংঘের কর্মকর্তারা।—রয়টার্স
জাতিসংঘের জ্যেষ্ঠ ত্রাণ কর্মকর্তা এডেম ওসোর্নু জানিয়েছেন, ইসরায়েলের আক্রমণের মধ্যে টিকে থাকা গাজাবাসীর কোনো অর্থপূর্ণ স্তরের সমর্থন দেওয়ার মতো পর্যাপ্ত খাদ্য ও জ্বালানি সরবরাহ নেই। তিনি বলেন, ‘গাজায় যা হচ্ছে, তা বর্ণনার ভাষা হারিয়ে ফেলছি আমরা। আমরা এটিকে বিপর্যয়, দুঃস্বপ্ন, নরক বলে বর্ণনা করেছি। এখন পরিস্থিতি ওগুলোর সবই এবং আরো খারাপ।’ জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদকে তিনি জানান, গাজা-মিশর সীমান্তের রাফা ক্রসিং বন্ধ থাকায় অন্তত ৮২ হাজার মেট্রিকটন সরবরাহ মিশরে স্তূপ হয়ে আছে আর ইসরায়েলের কেরেম শালোম ক্রসিং দিয়ে ‘শত্রুতা, চ্যালেঞ্জিং লজিস্টিক অবস্থা ও জটিল সমন্বয় প্রক্রিয়া’র কারণে ত্রাণ প্রবেশ সীমিত হয়ে আছে।