
ক্রীড়া ডেস্ক:
বিদায় রাগিণী আগেই বেজেছে। প্রাপ্তির খাতাও শূন্য। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ‘এ’ গ্রুপে এমন দুটি দলের ম্যাচ আজ রাওয়ালপিন্ডিতে। বাংলাদেশ খেলবে পাকিস্তানের বিপক্ষে। অথচ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি নিয়ে উভয় দেশের সমর্থকদের মাঝে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বপ্ন দানা বেঁধেছিল টুর্নামেন্ট শুরুর আগে।
নাজমুল হোসেন শান্ত ঢাকার সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন শিরোপা জয়ের লক্ষ্যের কথা। তারাই কিনা খেলছেন সাদামাটা ক্রিকেট! ব্যর্থতার চোরাবালিতে আটকে পড়া একটি দল তারা। এই চিত্র পাকিস্তানের ক্রিকেটেও। বাংলাদেশিদের চেয়ে পাকিস্তানিদের দুঃখ আরও বেশি।
স্বাগতিক দলের গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নেওয়া কতটা হতাশার, তা কেবল ভুক্তভোগীরাই জানে। ২৯ বছর পর একটি আইসিসি টুর্নামেন্ট হচ্ছে দেশটিতে। অথচ সেমিফাইনাল, ফাইনালে তারাই দর্শক। এই হতাশা থেকেই কিনা পাকিস্তানি মিডিয়ায় ‘ফান’ শো হচ্ছে নিজেদের দলের পারফরম্যান্স নিয়ে। মজা করে তারা বলাবলি করছে, হাত ধরাধরি করে টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নিচ্ছে ‘দুই ভাই’। তবে এই দুঃখকে ভাগাভাগি করে দিতে পারে বৃষ্টি। পাকিস্তানের আবহাওয়া বিভাগের বার্তা– বৃষ্টিতে ভেসে যেতে পারে খেলা।
বাংলাদেশ-পাকিস্তানের বিদায় আগেই নিশ্চিত হওয়ায় আজকের ম্যাচটি আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। এই আনুষ্ঠানিকতার মাঝেও লুকিয়ে আছে মর্যাদা। উভয় দলই চাইবে জয় দিয়ে টুর্নামেন্ট শেষ করতে। ‘এ’ গ্রুপের পয়েন্ট টেবিলের দুই ‘মিনোসের’ ম্যাচের ফল টুর্নামেন্টে কোনো প্রভাব না রাখলেও সমর্থকদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। এই রাওয়ালপিন্ডিতেই গত বছর বাংলাদেশের কাছে টেস্টে হোয়াইটওয়াশ হয়েছিল পাকিস্তান; যে ফল কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছিলেন না দেশটির সাবেক ক্রিকেটাররা।
বাংলাদেশের কাছে পাকিস্তান চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ম্যাচে হেরে গেলে একেবারে তুলাধোনা হবেন মোহাম্মদ রিজওয়ানরা। স্বাগতিক ক্রিকেটাররাও বিষয়টি জানেন। তাই যে কোনো মূল্যে সান্ত্বনার জয় পেতে চাইবেন চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা। লড়াই যখন মর্যাদার, তখন নাজমুল হোসেন শান্তরাও ছেড়ে কথা বলবেন না। কারণ, তুলাধোনা হওয়ার ভয় তো তাদের মনের জানালায়ও উঁকি দিচ্ছে।
আনুষ্ঠানিকতার ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে এসেছিলেন সিনিয়র সহকারী কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিন। ভারত ও নিউজিল্যান্ডের কাছে হারের পর পাকিস্তানের বিপক্ষে জয়ের সম্ভাবনা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়েছিল তাঁর কাছে। কূটনৈতিক উত্তর দিয়েছেন তিনি, ‘পাকিস্তান তাদের মতো করে পারফর্ম করতে পারেনি। আমরাও পারিনি। দুটি দলই সেরাটা দিয়ে খেলতে চেষ্টা করবে। আমার মনে হয়, ভালো ক্রিকেট খেলা হবে।’ এই টুর্নামেন্টে গত দুই ম্যাচের একটিতেও আড়াইশ রান করতে পারেনি বাংলাদেশ।
দুবাইয়ের ট্রিকি কন্ডিশনে ২২৮ আর রাওয়ালপিন্ডির ফ্ল্যাট ট্র্যাকে ২৩৬ রান করেছে টেনেটুনে। মূলত ব্যাটিং ধসের কারণে ছোট স্কোর করা টাইগারদের। ভারতের বিপক্ষে শুরুতে আর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ইনিংসের মাঝের ওভারগুলোতে উইকেট হারালে বড় সংগ্রহে যেতে পারেননি শান্তরা। অথচ পিন্ডিতে জিততে হলে অন্তত পৌনে তিনশ থেকে তিনশ রান করতে হতো। ভালো পুঁজি না থাকায় বোলাররাও লড়াই করতে পারেননি। শেষ ম্যাচ নিয়েও তাই খুব একটা আশার বাণী শোনা যায়নি সালাউদ্দিনের মুখে। বরং ভবিষ্যদ্বাণী নিয়ে কথার খেলায় মেতেছিলেন তিনি।
বাংলাদেশ-পাকিস্তানের মধ্যকার লড়াই সব সংস্করণে এখন ভালো জমে। টেস্টে টাটকা স্মৃতি আছে। ওয়ানডে ক্রিকেটেও শেষ সাত ম্যাচের চারটিতে জিতেছে টাইগার বাহিনী। তবে শেষ তিন ম্যাচের জয়ী পাকিস্তান। যদিও ওয়ানডে বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম দেখায় বাংলাদেশ বাজিমাত করেছিল ১৯৯৯ সালে। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে এই প্রথম মুখোমুখি হবে তারা। আইসিসির এই টুর্নামেন্টেও পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশ বাজিমাত করলে মন্দ হয় না।
পাকিস্তানের মাটিতে টেস্ট জিতলেও সাদা বলের ক্রিকেটে জেতা হয়নি। ১২ ওয়ানডের সবই জিতেছে পাকিস্তান। রাওয়ালপিন্ডিতে ২০০৩ সালে এ দুই দলের খেলা একমাত্র ম্যাচটি স্বাগতিকরা জিতেছে। পরিসংখ্যান এবং হোমে খেলার সুবিধা বিবেচনা করা হলে আজ পাকিস্তান ফেভারিট।
তবে আবহাওয়ার পূর্বাভাস ঠিক হলে জয়-পরাজয় নিয়ে কোনো দলকেই ভাবতে হবে না। সান্ত্বনা পুরস্কার হিসেবে এক-এক পয়েন্ট করে নিয়ে টুর্নামেন্ট শেষ করতে পারবে। ম্যাচ পণ্ড হবে কিনা বলা না গেলেও বৃষ্টি যে ভোগাবে, তা বোঝা গেছে গতকাল বাংলাদেশের অনুশীলন বাতিল করায়।