ডেস্ক রিপোর্ট:
ইরান-সমর্থিত লেবাননের শক্তিশালী সশস্ত্রগোষ্ঠী হিজবুল্লাহর শীর্ষ একজন কর্মকর্তা বলেছেন, গাজা উপত্যকায় স্থল হামলা শুরু করলে ইসরায়েলকে চড়া মূল্য দিতে হবে। হিজবুল্লাহ ইতিমধ্যে হামাস-ইসরায়েল ‘যুদ্ধের কেন্দ্রে’ রয়েছে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
উত্তরাঞ্চলীয় সীমান্তে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর সাথে হিজবুল্লাহর তুমুল লড়াইয়ের মাঝে ইরান-সমর্থিত গোষ্ঠীটির উপপ্রধান শেখ নাইম কাশেম রোববার এসব কথা বলেছেন। হিজবুল্লাহ বলেছে, শনিবার লেবাননের দক্ষিণ সীমান্তে ইসরায়েলি বাহিনীর সাথে সংঘর্ষে তাদের অন্তত ছয় যোদ্ধা নিহত হয়েছেন। গত ৭ অক্টোবর হামাসের সাথে ইসরায়েলের যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর সীমান্ত এলাকায় সংঘাতে হিজবুল্লাহর সদস্যদের একদিনে সর্বোচ্চ প্রাণহানির ঘটনা এটি।
লেবানন-ইসরায়েল সীমান্তে উত্তেজনা বৃদ্ধির সুস্পষ্ট উদ্দেশ্য রয়েছে জানিয়ে কাশেম বলেছেন, ‘আমরা ইসরায়েলি শত্রুকে দুর্বল করার চেষ্টা করছি এবং তাদের জানাতে চাই, আমরা প্রস্তুত।’ হামাস কর্মকর্তারা বলেছেন, ইসরায়েল যদি গাজায় স্থল আক্রমণ শুরু করে তাহলে হিজবুল্লাহও এই যুদ্ধে যোগ দেবে।
হামাসের সাথে সম্পর্ক রয়েছে ইরান-সমর্থিত লেবাননের সশস্ত্র এই গোষ্ঠীর। হিজবুল্লাহর উপপ্রধান বলেন, তারা ইতিমধ্যে লেবানন-ইসরায়েল সীমান্তে সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছে। এর মাধ্যমে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর উত্তরাঞ্চলীয় তিনটি সেনা ডিভিশনকে সংঘাতে ব্যস্ত রেখে যুদ্ধের গতিপথকে প্রভাবিত করা হচ্ছে।
হিজবুল্লাহর এক সদস্যের জানাজায় অংশ নিয়ে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর উদ্দেশে শেখ নাইম কাশেম বলেন, ‘আপনি কি বিশ্বাস করেন, আপনি যদি ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ গুঁড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন, তাহলে এই অঞ্চলের অন্যান্য প্রতিরোধ যোদ্ধারা কাজ করবে না? আমরা আজ যুদ্ধের কেন্দ্রে রয়েছি। এই যুদ্ধের মাধ্যমে আমরা অনেক কিছু অর্জন করছি।’
গত দুই সপ্তাহে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতারা লেবানন সফর করে হামাস-ইসরায়েলের চলমান যুদ্ধে হিজবুল্লাহ যাতে অংশ না নেয়, সেজন্য গোষ্ঠীটিকে রাজি করাতে লেবাননের কর্মকর্তাদের অনুরোধ জানিয়েছেন। হিজবুল্লাহর নেতা শেখ নাইম কাশেম বিদেশিদের এই প্রচেষ্টার বিষয়ে বলেন, লেবাননের কর্মকর্তাদের প্রতি হিজবুল্লাহর জবাব হলো ইতিমধ্যে ‘আমরা এই যুদ্ধের অংশ’ হয়েছি।
সম্প্রতি লেবানন সফর করে দেশটির কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে হিজবুল্লাহ যাতে যুদ্ধে না জড়ায় সেই প্রচেষ্টা চালানোর আহ্বান জানিয়েছেন ফ্রান্স এবং জার্মানির দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী। শেখ নাইম কাশেম তাদের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘যারা আমাদের সাথে যোগাযোগ করছেন, আমরা তাদের বলছি (ইসরায়েলি) আগ্রাসন বন্ধ করুন; যাতে এই সংঘাতের প্রতিক্রিয়া এবং সম্প্রসারণের সম্ভাবনা বন্ধ হয়ে যায়।
গাজায় ইসরায়েলি সম্ভাব্য স্থল হামলার বিষয়ে হিজবুল্লাহর এই নেতা বলেন, আমাদের বার্তা হল, স্থল অভিযানে অংশ নেওয়া ইসরায়েলি সৈন্যদের জন্য গাজাকে কবরস্থানে পরিণত করবে হামাস এবং প্রতিরোধ যোদ্ধারা।
হামাসের সাথে যুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে ইসরায়েলের উত্তর সীমান্তে ইরান-সমর্থিত লেবাননের সশস্ত্রগোষ্ঠী হিজবুল্লাহর তীব্র হামলার মুখে সীমান্ত এলাকার আরও হাজার হাজার বাসিন্দাকে সরিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু করেছে ইসরায়েল। দুই সপ্তাহের বেশি সময় আগে হামাসের সাথে ইসরায়েলের যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর উত্তর সীমান্ত উত্তপ্ত হওয়ায় বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়ার এই উদ্যোগ নিয়েছে ইসরায়েল। রোববার নতুন করে উত্তর সীমান্তের আরও ১৪টি গ্রামের বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দেওয়ার পর ইসরায়েলিদের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।
উত্তর সীমান্ত এলাকার ২৮টি গ্রামের বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়ার জন্য গত সপ্তাহে একটি পরিকল্পনা প্রণয়ন করে ইসরায়েল। রোববার ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, তারা লেবানন সীমান্ত লাগোয়া উত্তর ইসরায়েলের আরও ১৪টি গ্রামের বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়ার তালিকা তৈরি করেছে।
কাতার-ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা বলছে, গত ২৪ ঘণ্টায় উত্তর ইসরায়েলের সীমান্ত এলাকার ১৪টি গ্রামের বাসিন্দাদের আশ্রয় কেন্দ্রে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এর আগে, গত সপ্তাহে আরও ২৮টি বসতির লোকজনকে রাষ্ট্র-পরিচালিত অস্থায়ী আশ্রয় কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়া হয়। ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর সীমান্ত থেকে বাসিন্দাদের সরে যাওয়ার নির্দেশ অনেকের মাঝে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।
ইসরায়েলের উত্তরের কিরিয়াত এশমোনো শহরের মেয়রের কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সেখানকার বাসিন্দারা। সীমান্ত থেকে মাত্র দুই কিলোমিটার দূরের এই শহরের একজন নারী মেয়রের সামনে চিৎকার করে বলেন, তাকে তেল আবিবে সরিয়ে নেওয়া হবে বলে প্রত্যাশা করছেন তিনি। কিন্তু তার গ্রামের চেয়ে তেল আবিব নিরাপদ হবে বলে মনে করেন না তিনি।
রাজধানীর উদ্দেশে বাসে যাত্রা শুরুর আগে ওই নারী বলেন, ‘বিবি (প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু) আমি এত বছর ধরে আপনাকে ভোট দিয়েছি। কিন্তু আপনার এই সরকার ব্যর্থ হয়েছে। আমার পাঁচ সন্তান এখানে নিরাপদ নয়।’
গত ৭ অক্টোবর হামাসের সাথে ইসরায়েলের যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে উত্তর সীমান্তে লেবাননের হিজবুল্লাহর সাথে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর সদস্যদের ভয়াবহ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। শনিবার উত্তর ইসরায়েল সীমান্তে লড়াইয়ের সময় হিজবুল্লাহর অন্তত ৬ সদস্যের প্রাণহানি ঘটে।
ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, ইসরায়েলি সীমান্ত এলাকায় এবারের এই সংঘাত ২০০৬ সালের ইসরায়েল-হিজবুল্লাহ যুদ্ধের চেয়েও ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। ইরান-সমর্থিত হিজবুল্লাহর প্রধান হাসান নাসরাল্লাহ এখন পর্যন্ত চলমান এই উত্তেজনা নিয়ে প্রকাশ্যে কিছু বলেননি।
তবে রোববার গোষ্ঠীটির নেতা হাসান ফাদলাল্লাহ বলেছেন, হিজবুল্লাহ প্রধান সীমান্ত পরিস্থিতি অত্যন্ত নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন এবং লড়াইয়ে কমান্ডারদের নির্দেশনা দিচ্ছেন। সীমান্তে ইসরায়েলি বাহিনীর সাথে লড়াইয়ে এখন পর্যন্ত হিজবুল্লাহর ১৯ যোদ্ধা নিহত হয়েছেন বলে শনিবার জানিয়েছে ইরান-সমর্থিত এই গোষ্ঠী।