ক্রীড়া ডেস্ক:
ঢাকা টেস্ট জেতা সম্ভব কিনা– জানতে চাওয়া হলে হাসান মাহমুদ বলেন, ২০০ রানের লক্ষ্য দেওয়া গেলে জিততে পারবেন তারা। দক্ষিণ আফ্রিকাকে ২০০ রানের লক্ষ্য দিতে হলে দ্বিতীয় ইনিংসে ৪০২ রান করতে হবে বাংলাদেশকে। বর্তমান বাস্তবতায় প্রায় অসম্ভব একটা ব্যাপার। তবুও হাসান মাহমুদ বললেন, আজ তিন সেশন ব্যাট করা গেলে ৪০০ রান করা সম্ভব! তাত্ত্বিকভাবে অসম্ভবকেও সম্ভব করা যায়। কিন্তু বাস্তবতায় কঠিন। বাংলাদেশের ক্রিকেট আর্কাইভে এ রকম অবাস্তব তত্ত্ব কম নেই। অগ্রজদের মতো বর্তমান দলের অনেকে বুঝে না বুঝে অবাস্তব গল্প শোনান। গতকাল দলীয় প্রতিনিধি হিসেবে সংবাদ সম্মেলনে আসা পেস বোলার হাসান মাহমুদও শোনালেন। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম ইনিংস থেকে এখনও ১০১ রানে পিছিয়ে থাকা দল ২০০ রানের লিড নিয়ে জয়ের পথ তৈরি করার স্বপ্ন দেখা হাসানের আকাশ-কুসুম কল্পনা। দ্বিতীয় ইনিংসে ৩ উইকেটে ১০১ রান– অনেকটা খাদের কিনারায় দাঁড়িয়ে দুর্গম গিরিপথ পাড়ি দেওয়ার স্বপ্নের মতোই।
বাংলাদেশের ১০৬ রানের জবাব দিতে নামা দক্ষিণ আফ্রিকা ষষ্ঠ উইকেট হারায় ১০৮ রানে। সপ্তম উইকেট জুটির কল্যাণে সফরকারীরা প্রথম দিনের খেলা শেষ করে ১৪০ রানে। হাতে ছিল চার উইকেট। শীর্ষ ছয় ব্যাটার যা পারেননি, শেষের চারজন তাই করে দেখান। আরও একটু পরিষ্কার করলে– সপ্তম উইকেটে ২০০ বল মোকাবিলা করে ১১৯ রানের জুটি গড়ে স্বাগতিকদের ব্যাকফুটে ঠেলে দেয় সফরকারীরা। কাইল ভেরেইনা আর উইলিয়ান মুল্ডার রীতিমতো বাজিমাত করেন। প্রোটিয়া এই জুটি ভারতের বিপক্ষে চেন্নাই টেস্টের প্রথম ইনিংসের কথা মনে করিয়ে দেয়। ভারত ১৪৪ রানে ছয় উইকেট হারিয়ে ফেলার পর সপ্তম উইকেটে রবিচন্দ্র অশ্বিন ও রবীন্দ্র জাদেজা ১৯৯ রানের জুটি গড়ে জয়ের ভিত গড়ে দেন। অশ্বিন সেঞ্চুরিও করেছিলেন। মিরপুরে প্রোটিয়া উইকেটরক্ষক ব্যাটার ১১৪ রানের ইনিংস খেললেন ১৪৪ বলে। তাঁর জুটি মুল্ডারের ব্যাট থেকেও এসেছে ৫৪ রান। জাদেজা ও অশ্বিনে চেন্নাই টেস্টের প্রথম ইনিংসেই বাংলাদেশের পরাজয় নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল। ঢাকা টেস্টে মুল্ডার ও ভেরেইনার জুটিতে। আজ অলৌকিক কিছু না হলে ঢাকা টেস্টে বাংলাদেশের পরাজয় লেখা হয়ে গেছে। এখন শুধু পরাজয়ের ব্যবধান কমানোর লড়াই। কারণ বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংসে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম ইনিংস থেকে এখনও ১০১ রানে পিছিয়ে।
আশা করা হচ্ছিল, দ্বিতীয় দিন সকালে বারুদ বোলিং করে প্রোটিয়াদের চার উইকেট তুলে নিয়ে প্রবলভাবে ম্যাচে ফিরবে বাংলাদেশ। কিন্তু সে আশায় গুড়ে বালি ঢেলে দেন প্রতিপক্ষ দলের আগের দিনের দুই অপরাজিত ব্যাটার ভেরেইনা ও মুল্ডার। পেস, স্পিন কোনো কিছুতেই জুটি ভাঙা সম্ভব হচ্ছিল না। একাগ্রতা দিয়ে প্রায় ২৪ (২৩.৪) ওভার খেলে বড় লিডের পথ করে দেন তারা। পেসার হাসান মাহমুদ ব্রেক থ্রু দেন বহু কসরত করে পর পর দুই উইকেট নিয়ে। ডানহতি এ পেসার ভালো বোলিং করে তিন উইকেট শিকার করেন। তাঁর পারফরম্যান্সই বলে দেয় একজন পেসার কম নিয়ে খেলছে বাংলাদেশ। যার নেতিবাচক প্রভাব জুটি ভাঙতে না পারা। অবশ্য চেন্নাইয়ে তিন পেসার নিয়ে খেলেও তো সপ্তম জুটিকে রেকর্ড রান করা থেকে বিরত রাখতে পারেনি। প্রথম দিন তাইজুল পাঁচ উইকেট পেলেও গতকাল কার্যকর ছিলেন না। নাঈম হাসান হুমকি হতে পারেননি। কেবল মেহেদী হাসান মিরাজ দুটি উইকেট পেয়েছেন। ফলে দক্ষিণ আফ্রিকা অলআউট হয় ৩০৮ রানে। অথচ তিন তিনটি ক্যাচ না ফেললে হয়তো আরও আগে বেঁধে ফেলা যেত সফরকারীদের।
বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে প্রথম দিনের মতো সংগ্রাম করতে থাকে। ওপেনিং জুটি ভাঙে চার রানে। কাগিসো রাবাদার শিকার সাদমান ইসলাম। ডাক করেন মুমিনুল হক। চার রানে দুই উইকেট পতনের পর নাজমুল হোসেন শান্তও নড়বড়ে ২৩ রানের ইনিংস খেলেন। ৫৯ রানে তিন উইকেট হারানোর পর মাহমুদুল হাসান জয় ও মুশফিকুর রহিম নিরাপদে দিন পার করেন। জয় ৩৮ রানে আর মুশফিক ৩১ রানে অপরাজিত। চোটের কারণে পাকিস্তান ও ভারতে টেস্ট খেলার সুযোগ না পাওয়া জয় ঢাকায় একটা পরীক্ষায় অন্তত পাস মার্কস পেয়েছেন। উইকেটে লম্বা সময় টিকে থাকতে পারছেন।