ইভিএম সংরক্ষণে নতুন পরিকল্পনা ইসির

প্রকাশিত: ১২:৫৭ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১, ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক:

নির্বাচনে ব্যবহারে অনিশ্চিত ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) সংরক্ষণে পথ খুঁজে পাচ্ছিল না নির্বাচন কমিশন (ইসি)। অস্থায়ীভাবে বিভিন্ন স্কুল-কলেজ ও আঞ্চলিক নির্বাচন অফিসে রাখার পর ইভিএম এর জন্য স্থায়ীভাবে জায়গার সংস্থান হয়নি। তবে স্থায়ীভাবে এই মেশিনগুলো সংরক্ষণ করতে নতুন পরিকল্পনা করছে ইসি

 

সম্পত্তি ইসির অনুষ্ঠিত জানুয়ারি মাসের মাসিক সমন্বয় সভায় ইভিএম সংরক্ষণে নতুন পরিকল্পনার বিষয়টি উঠে আসে। সভায় সভাপতিত্ব করেন ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ।

সভায় ইভিএম সংরক্ষণে মাঠ কার্যালয়ে ওয়ারহাউজ নির্মাণ বিষয়ে ইসির পরিকল্পনা ও উন্নয়ন শাখার উপপ্রধান জানান, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের মতামত অনুযায়ী উপজেলা নির্বাচন কার্যালয়ের ভবনগুলো উর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ করা সম্ভব নয়। এছাড়াও যে-সব উপজেলা ও জেলায় নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব ভবন নেই, সেসব উপজেলা ও জেলায় নিজস্ব ভবন নির্মাণের জন্য একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। অধিকাংশ আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা অঞ্চলে অবস্থিত বিদ্যমান ভবনের ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ সম্ভব বলে জানান। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সিনিয়র সচিব বিদ্যমান অফিসভবনের ঊর্দ্ধমুখী সম্প্রসারণের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের ব্যাপারে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলীর মতামত গ্রহণের লক্ষ্যে একটি সভা আয়োজন করার নির্দেশনা দেন।

ইসি কর্মকর্তারা জানান, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) কোনোভাবেই ব্যবহারের সুযোগ নেই। স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও এই মেশিনগুলো ব্যবহার করা হবে কি না স্পষ্ট নয়। যদি কোনো নির্বাচনেই ইভিএম ব্যবহার না করা হয়, তাহলে এই মেশিনের রক্ষণাবেক্ষণের চ্যালেঞ্জ নিতে হবে।
কর্মকর্তারা আরও জানান, রাজনৈতিক বিতর্ক এবং এই মেশিনের ব্যবহার নিয়ে দলগুলোর মাঝে অনৈক্য থাকায় জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম নিয়ে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিতে চায় না নির্বাচন কমিশন। তাই বলে কয়েক হাজার কোটি টাকার মেশিন তো বাতিল করে দেওয়া যায় না। এজন্য স্থানীয় নির্বাচনে চাহিদার প্রেক্ষিতে ইভিএম ব্যবহারের পরিকল্পনা করা যেতে পারে। তবে বর্তমানে ইভিএম প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ায় সমস্যা দেখা দিয়েছে। তাই নষ্ট হওয়ার ঝুঁকিতে থাকা মেশিনগুলো রক্ষণাবেক্ষণই এখন আসল চ্যালেঞ্জ।

ইসি সূত্র জানায়, ২০২৩ সালে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের পূর্বে এসে প্রায় প্রতিটি সেটেই কোনো না কোনো সমস্যা দেখা দেয়। প্রায় ৪০ হাজারের মতো মেশিন ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ে। অবশিষ্ট এক লাখ ১০ হাজার মেশিনের মধ্যে অধিকাংশে ধরা পড়ে নানা ধরনের ত্রুটি। কিন্তু মেরামতের জন্য ছিল না অর্থের যোগান। ফলশ্রুতিতে হাজার হাজার কোটি টাকার ইভিএম অচল হয়ে যাওয়ার শঙ্কা দেখা দেয়। অকেজো মেশিন মেরামত, সংরক্ষণ প্রভৃতির জন্য সাড়ে ১২শ কোটি টাকার প্রস্তাব দিলে বৈশ্বিক অর্থ সংকটের কারণ দেখিয়ে সেটি নাকচ করে দেয় তৎকালীন সরকার। বর্তমানে অকেজো ইভিএমের সংখ্যা আরও বেড়েছে। সচল মেশিনগুলো তাই রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রকল্পের অর্থ ছাড়া মেয়াদ বৃদ্ধির প্রস্তাব দিলে সরকার ইসির সেই প্রস্তাবও নাকচ করে দেয়।

এক-এগারো সরকারের সময়কার ড. এটিএম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশন ইভিএমের ব্যবহার শুরু করে। সে সময় তারা বুয়েট থেকে ১২ হাজার টাকা ব্যয়ে মেশিন তৈরি করে নেয়। ওই কমিশনের ধারাবাহিকতায় পরবর্তীতে কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন কমিশনও ভোটযন্ত্রটি ব্যবহার করে। তবে ২০১৫ সালে রাজশাহী সিটি নির্বাচনে একটি মেশিন অচল হয়ে পড়ায় তা আর ব্যবহার উপযোগী করতে পারেনি রকিব কমিশন। পরবর্তীতে তারা বুয়েটের তৈরি স্বল্প মূলের ওই মেশিনগুলো পুড়িয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়ে উন্নত মানের ইভিএম তৈরির পরিকল্পনা রেখে যায়।

২০১৭ সালে কেএম নূরুল হুদার কমিশন এসে বুয়েটের তৈরি ইভিএমের চেয়ে প্রায় ২০ গুণ বেশি দামে মেশিন কেনার সিদ্ধান্ত নেয়। ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঠিক পূর্বে বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির (বিএমটিএফ) কাছ থেকে উন্নতমানের ইভিএম তৈরি করে নেয় তারা। এতে মেশিন প্রতি ব্যয় হয় দুই লাখ ৩৫ হাজার টাকার মতো। হাতে নেওয়া হয় তিন হাজার ৮২৫ কোটি টাকার প্রকল্প।

সেই প্রকল্প থেকে দেড় লাখ ইভিএম কেনে রকিব কমিশন। প্রকল্পের সংরক্ষণ, রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতের ব্যবস্থা না থাকায় সেই উন্নত মানের ইভিএমের মেয়াদ ১০ বছর হলেও পাঁচ বছর যেতে না যেতেই অকেজো হওয়া শুরু করে।