আন্তর্জাতিক ডেস্ক
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির উপদেষ্টা কামাল খারাজি দেশটির পারমাণবিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা নিয়ে বিশ্বের উদ্বেগকে আবারও বাড়িয়ে দিয়েছেন। ইসরায়েলের সাথে চলমান উত্তেজনার মাঝে অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়লে ইরানের পারমাণবিক বোমা বানানো ছাড়া কোনও উপায় থাকবে না বলে সতর্ক করে দিয়েছেন তিনি।
দেশটির পারমাণবিক মতবাদে পরিবর্তন আনার ইঙ্গিতও দিয়েছেন কামাল খারাজি। তিনি বলেছেন, যদি ইরানের অস্তিত্ব ইসরায়েলের দ্বারা হুমকির মুখে পড়ে তাহলে ইরান পারমাণবিক মতবাদে পরিবর্তন আনবে।
খারাজি বলেন, ‘‘আমাদের পারমাণবিক বোমা তৈরির কোনও সিদ্ধান্ত নেই। কিন্তু ইরানের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়লে, আমাদের সামরিক মতবাদ পরিবর্তন করা ছাড়া কোনও উপায় থাকবে না।’’
গত এপ্রিলের শুরুর দিকে সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে ইরানের দূতাবাসে বোমা হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েলের ভূখণ্ডকে সরাসরি লক্ষ্য বানিয়ে শত শত বিস্ফোরক ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় তেহরান। এই হামলা-পাল্টা হামলার ঘটনায় আঞ্চলিক চিরশত্রু ইরান ও ইসরায়েলের মাঝে উত্তেজনা প্রায় যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছায়।
পরমাণু অস্ত্র তৈরির বিরুদ্ধে আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির পূর্ববর্তী ফতোয়া সত্ত্বেও ২০২১ সালে ইরানের গোয়েন্দা মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা খারাজি বলেন, বহিরাগত— বিশেষ করে পশ্চিমা দেশগুলোর চাপের কারণে ইরানের পারমাণবিক অবস্থানের পুনর্মূল্যায়ন করা হতে পারে।
তিনি বলেন, ‘‘ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় ইহুদিবাদী শাসকের (ইসরায়েল) আক্রমণ হলে আমাদের প্রতিরোধ ক্ষমতাও পরিবর্তিত হবে।’’ ইরান-ইসরায়েলের এমন উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) সাথে তেহরানের যুক্ত হওয়ার প্রচেষ্টায় মিশ্র ফল দেখা গেছে।
ইরানের পারমাণবিক কর্মকর্তাদের সাথে আইএইএ প্রতিনিধিদের আলোচনাকে ইতিবাচক এবং ফলপ্রসূ হিসাবে বর্ণনা করা হলেও বাস্তব অগ্রগতি অধরা রয়ে গেছে। আইএইএর প্রধান রাফায়েল গ্রোসি ইরানের পারমাণবিক কর্মকাণ্ডের বিষয়ে উদ্বেগ মোকাবিলায় দৃঢ় পদক্ষেপের গুরুত্ব তুলে ধরেছেন। একই সঙ্গে এই বিষয়ে ইরান যথাযথ সহযোগিতা না করায় হতাশা প্রকাশ করেছেন তিনি।
গত বছর ইরানের অজ্ঞাত এক স্থানে পাওয়া ইউরেনিয়াম কণার তদন্তে সহায়তা ও দেশটিতে পারমাণবিক কার্যক্রম পর্যবেক্ষণের সরঞ্জাম পুনরায় স্থাপন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তেহরান। কিন্তু ইরানের এমন আশ্বাসের পর এই কার্যক্রমে উল্লেখযোগ্য কোনও অগ্রগতি হয়নি বলে জানিয়েছে আইএইএ।
গ্রোসি বলেন, ‘‘বর্তমান অবস্থা আমার কাছে একেবারে অসন্তোষজনক। আমরা প্রায় অচলাবস্থার মধ্যে আছি এবং এটি পরিবর্তন করা দরকার।’’
ইরানি কর্মকর্তাদের সাথে গ্রোসির আলোচনার সময় উভয়পক্ষই ২০২৩ সালের চুক্তিকে সহযোগিতার জন্য একটি সম্ভাব্য কাঠামো হিসাবে স্বীকার করলেও এর বাস্তবায়নের গতি ধীর হয়েছে।