সেলিনা আক্তার:
ব্যক্তি শ্রেণির করদাতাদের অনলাইনে রিটার্ন বা ই-রিটার্ন জমার সময় সহায়ক কোনো নথি বা কাগজপত্র আপলোড করতে হবে না। শুধু সংশ্লিষ্ট নথির তথ্যগুলো দিলেই হবে। ইন্টারনেট ব্যাংকিং সিস্টেম আছে– এমন যে কোনো ব্যাংক থেকে কর পরিশোধ করা যাবে।
গতকাল বুধবার সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান খান। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে রাজস্ব ভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও বলেন, শুরুতে করদাতাদের একটি অংশের জন্য ই-রিটার্ন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ভবিষ্যতে সব শ্রেণির করদাতাকেই অনলাইনের মাধ্যমে রিটার্ন দাখিল করতে হবে। সে জন্য নানা উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে, যাতে করদাতারা কর অফিসে না গিয়ে বিনা খরচে রিটার্ন দিতে পারেন। সশরীরে অফিসে গিয়ে কর পরিশোধ ধীরে ধীরে শূন্যতে নামিয়ে আনা হবে।
গত মঙ্গলবার এনবিআরের এক বিশেষ আদেশে করদাতাদের একটি অংশের ই-রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এতে বলা হয়, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এবং গাজীপুর ও নারায়নগঞ্জ সিটি করপোরেশনে অবস্থিত বিভিন্ন আয়কর সার্কেলের অধিভুক্ত সব সরকারি কর্মচারীকে বাধ্যতামূলকভাবে ই-রিটার্ন দাখিল করতে হবে। এ ছাড়া অনলাইনে রিটার্ন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে সব তফশিলি ব্যাংক, মোবাইল টেলিকম সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীর। বহুজাতিক কোম্পানি ইউনিলিভার বাংলাদেশ, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ কোম্পানি, ম্যারিকো বাংলাদেশ, বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ, বাটা স্যু কোম্পানি (বাংলাদেশ) এবং নেসলে বাংলাদেশের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকেও অনলাইনে আয়কর রিটার্ন জমা করতে হবে।
গতকাল সংবাদ সম্মেলনে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ই-রিটার্ন বাধ্যতামূলক না হলেও, যারা অনলাইনে শতভাগ রিটার্ন দাখিল করেছেন, তাদের মধ্যে থেকে নির্বাচিত ব্যক্তিদের সম্মাননা দেওয়া হবে। করপোরেট প্রতিষ্ঠানেগুলোর রিটার্ন যাতে অনলাইনে আসে, সে বিষয়েও উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। এ সময় তিনি বলেন, ভবিষ্যতে এনবিআরে যত উদ্যোগ নেওয়া হবে, অর্থাৎ যা কিছু করা হবে– সব কিছুতেই অটোমেশন থাকবে। এ জন্য একটা মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করা হবে।
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) রাজস্ব আদায়ে বড় ধাক্কা খেয়েছে এনবিআর। লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে রাজস্ব আদায় কম হয়েছে সাড়ে ২৫ হাজার কোটি টাকার বেশি। এই পরিস্থিতিতে অর্থবছর শেষে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে কিনা– জানতে চাইলে আব্দুর রহমান খান বলেন, এনবিআর চেষ্টা করছে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের। গত জুলাই-আগস্টে ব্যবসা-বাণিজ্য প্রায় বন্ধ ছিল। ফলে ভ্যাট-ট্যাক্স আদায় কম হয়েছে। এটা কাভার করতে হবে। ছাত্র-জনতার বিপ্লবের প্রতি সম্মান জানিয়ে করদাতারা এগিয়ে এলে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হতে পারে। কর ফাঁকির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান তিনি।
তিনি বলেন, এবার করমেলা না হলেও প্রয়োজনীয় সব করসেবাই থাকবে। কর অঞ্চল থেকে সব ধরনের সুবিধা পাওয়া যাবে। কল সেন্টারকে আরও প্রসারিত করা হবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিজনেস ফ্যাকাল্টির কিছু শিক্ষার্থীকে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে তৈরি করে তাদের মাধ্যমে করসেবা দেওয়ার বিষয়টিও বিবেচনায় থাকবে।