উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয়করণের কারণে ভোট নিয়ে মানুষের আগ্রহ নেই 

প্রকাশিত: ১:০৬ অপরাহ্ণ, মে ৮, ২০২৪

জেলা প্রতিনিধি,রংপুরঃ 

‘ভোটের পরিবেশ ভালো কিন্তু ভোটার উপস্থিতি কম। আগের মতো ভোট নিয়ে মানুষের তেমন আগ্রহ নেই। দলীয়করণের কারণে সাধারণ মানুষ আর ভোট দিতে চায় না। অনেকেই মনে করেন ভোটের মূল্যায়ন হচ্ছে না। এটা ভালো লক্ষণ নয়।’

এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন ষাটোর্ধ্ব বয়সী সহিদুল ইসলাম। তিনি পীরগাছা উপজেলার তাম্বুলপুর দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের ভোটার।বুধবার (৮ মে) সকাল ৮টায় রংপুরের পীরগাছা ও কাউনিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। একটানা আট ঘণ্টা ভোটগ্রহণ চলবে। দুই উপজেলায় তিনটি পদে ২৭ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এরমধ্যে ২১ জনই আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পদ-পদবিতে রয়েছেন।

এদিকে টাপুর টুপুর বৃষ্টিতে ভোটের পরিবেশ কিছুটা বিঘ্নিত হলেও কর্মী সমর্থকদের উচ্ছ্বাসের কমতি নেই। যদিও সকাল থেকে কয়েকটি কেন্দ্র ঘুরে কোথাও ভোটারদের লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়নি।তাম্বুলপুর দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে কথা হয় নয়া মিয়ার সঙ্গে। এই প্রতিবেদককে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত তো ভালো পরিবেশ আছে, পরে যে কি হয় সেটা নিয়ে আমরা চিন্তিত। ভোর থেকে আকাশের অবস্থা ভালো না। টিপ টিপ করে বৃষ্টি পড়ছে। ধান কাটা মাড়াই চলছে। সকালে ভোট দিলাম, যাতে পরে সমস্যা না হয়।

এই ভোটকেন্দ্রে নারী-পুরুষ মিলে মোট ভোটার ৩ হাজার ৫৩ জন। এর মধ্যে সকাল সাড়ে ৯টা পর্যন্ত ৮৮ জন ভোট দিয়েছেন বলে জানান দায়িত্বরত প্রিসাইডিং কর্মকর্তা আরিফুল ইসলাম।এই কেন্দ্র থেকে ভোট দিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন সম্পা রানী। তার এক হাতে ছাতা আরেক হাতে ছিল নবজাতক শিশু। উচ্ছ্বসিত এই নারী ভোটার জানালেন, এবার প্রথম ভোট দিলেন তিনি। হাস্যোজ্জ্বল মুখে সম্পা রানী বলেন, খুব ভালো লাগছে, একটা সুন্দর ও সুষ্ঠু পরিবেশে জীবনের প্রথম ভোটটা দিতে পারলাম। কোনো রকম সমস্যা হয়নি।

পাশের ভোটকেন্দ্র তাম্বুলপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এই কেন্দ্রে ভোটার সংখ্যা ২ হাজার ৫৬ জন। সকাল ৮টা থেকে নয়টা পর্যন্ত মাত্র ৫০ জন ভোটার উপস্থিত হয়েছেন বলে জানিয়েছে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা জামিল হোসেন। বৈরী আবহাওয়ার সঙ্গে ধান কাটা মাড়াইয়ের প্রভাব ভোটের মাঠে পড়েছে। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভোটার উপস্থিতি বাড়বে বলে মনে করছেন তিনি।

এদিকে ভোটকেন্দ্রগুলো ভোটার উপস্থিতি কম হলেও কেন্দ্রের বাইরে কর্মী সমর্থকদের সরব থাকতে দেখা গেছে। তারা চেষ্টা করছেন, ভোটারদের কেন্দ্রে আনতে। এজন্য বিভিন্ন যানবাহন ব্যবহার করতে দেখা যায়। তবে এখন পর্যন্ত কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।সকাল ১০টার দিকে তাম্বুলপুর দাখিল মাদ্রাসা ভোট কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, অলস সময় কাটাচ্ছেন দায়িত্বরত পুলিশ ও আনসার সদস্যরা। ফাঁকা কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ কক্ষে নেই ভোটার। অনেকটাই সুনসান নীরবতায় চলছে ভোটগ্রহণ।

সেখানকার প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান জানান, ওই কেন্দ্রে নারী ভোটার সংখ্যা ২ হাজার ৬৪ জন। এর মধ্যে সকাল দশটা পর্যন্ত অন্তত দুই শতাধিক ভোটার উপস্থিত হয়েছেন। ভোটের পরিবেশ ভালো রয়েছে।

এদিকে পীরগাছা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ১৪ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এরমধ্যে চেয়ারম্যান প্রার্থীরা হলেন আবু নাছের শাহ মো. মাহবুবার রহমান, তছলিম উদ্দিন চৌধুরী, আব্দুল্লাহ আল মিলন ও মনোয়ারুল ইসলাম মাসুদ। ভাইস চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন শাহ মো. শারেখ খন্দকার জয়, জাফর ইকবাল, আব্দুর রহিম ও ফরহাদ হোসেন অনু। এ ছাড়া নারী ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীরা হলেন রেহেনা বেগম, শারমিন আখতার, জরিনা বেগম, তানজিলা আফরোজ, ইশরাত জাহান সুইটি এবং মাহমুদা খাতুন। এই উপজেলায় তিনজন হিজড়াসহ ২ লাখ ৮১ হাজার ৬৯৮ জন ভোটার রয়েছেন।

অন্যদিকে কাউনিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আনোয়ারুল ইসলাম মায়া, আব্দুর রাজ্জাক ও হুমায়ুন কবির খান মুকুল লড়ছেন। এছাড়াও ভাইস চেয়ারম্যান পদে মাহমুদুল হাসান পিন্টু, মনজুদার রহমান মিলন, সুশান্ত সরকার, শফিকুল ইসলাম, জাহাঙ্গীর কবির ও গনেশ কুমার চন্দ্র শর্মা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। অন্যদিকে নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন সেলিনা খাতুন, রওশন আরা, রাবেয়া বেগম ও আঙ্গুরা খাতুন। কাউনিয়া উপজেলায় ২ হিজড়াসহ ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৪০ হাজার ৫৪৩ জন।

রংপুরের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা আব্দুলাহ আল মোতাহসিম জানান, সকাল থেকে শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ চলছে। কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। আশা করছি শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হবে। ভোটার উপস্থিতি বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে পারে বলেও জানান তিনি।