উপজেলা বিএনপি নেতার নেতৃত্বে থানায় হামলা, গ্রেপ্তার ৫

প্রকাশিত: ১২:৪২ অপরাহ্ণ, মার্চ ১৯, ২০২৫

জয়পুরহাট প্রতিনিধি:

 

চাঁদাবাজির মামলা নেওয়ায় জয়পুরহাটে ক্ষেতলাল থানায় হামলা করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে দুইজন পুলিশ সদস্যসহ ছয়জন আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

মঙ্গলবার থানা চত্বরে ইফতারের আগে এ ঘটনা ঘটে।

জানা যায়, ক্ষেতলাল উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী আশিক পার্থের নেতৃত্ব এই হামলা করা হয় বলে অভিযোগ ওঠেছে। এ ঘটনায় থানায় পৃথক দুটি মামলা দায়ের হয়েছে। একটি মামলা থানা হামলা ও পুলিশকে আহত করার অন্যটি চাঁদাবাজির মামলা।

জয়পুরহাটের পুলিশ সুপার মুহম্মদ আবদুল ওয়াহাব জানান, থানায় হামলা ও পুলিশকে আহত করার মামলায় পাঁচজন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

গ্রেপ্তার পাঁচজন হলেন, দেলোয়ার হোসেন ওরফে বাবু (৪৭), মো. বিপ্লব হোসেন (২৪), মো. ফারুক হোসেন (৩২), উজ্জল (৩৪) ও সজিব (২৮)।

আহতরা হলেন, ক্ষেতলাল থানার পুলিশ কনস্টেবল কাজী জাফর ও সুমন মিয়া, ক্ষেতলাল পৌর এলাকার শাখারুঞ্জ গ্রামের তোফাজ্জল হোসেন, একই গ্রামের আমিরুল ইসলাম, বগুড়ার শাহজাহানপুরের রফিক হোসেন ও আব্দুল মমিন।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, সাত বছর আগে বগুড়ার শাহজাহানপুর এলাকার তোফাজ্জল হোসেন ক্ষেতলালের মিজানুর রহমানের কাছে জমি কিনেন। ওই জমি আজ মঙ্গলবার ক্ষেতলাল সাব-রেজিস্ট্রি কার্যালয়ে দলিল সম্পাদন করতে আসেন। এসময় উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী আশিক পার্থসহ বিএনপির কয়েকজন নেতা-কর্মী সেখানে গিয়ে জমির ক্রেতার কাছে মোটা অংকের চাঁদা দাবি করেন। এতে জমির ক্রেতা তাদের চাঁদা দিতে অপারগতা জানান। তখন উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী আশিক পার্থ ও তার লোকজন দলিল সম্পাদন করতে দেবেন না বলে তাদের জানিয়ে দেন। এ নিয়ে তোফাজ্জল ও স্বজনদের সঙ্গে বিএনপির নেতাদের বাকবিতণ্ডা হয়। এক পর্যায়ে বিএনপি নেতা মেহেদী আশিক ও তার লোকজন তোফাজ্জলের আত্মীয়দের বেধড়ক মারপিট করে জখম করেন। খবর পেয়ে থানা পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে যায়। পুলিশ গুরুতর আহত তোফাজ্জলকে সেখান থেকে উদ্ধার করে ক্ষেতলাল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে ভর্তি করায়।

পুলিশ জানায়, এ ঘটনায় তোফাজ্জলের স্ত্রী জয়নব বেগম থানায় একটি চাঁদাবাজি মামলা করতে যান। এ খবর পেয়ে ইফতারের আগ মুহূর্তে বিএনপি নেতা মেহেদী আশিক পার্থ তার দলবল নিয়ে থানায় গিয়ে হামলা করেন। এসময় বাধা দিতে গিয়ে থানার পুলিশ কনস্টেবল কাজী জাফর ও সুমন মিয়া আহত হন। সেনাবাহিনী, ডিবি পুলিশ, কালাই থানা পুলিশ দ্রুত থানায় এসে লাঠিপেটা করে লোকজনকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। ঘটনাস্থল থেকে তিন জন ও পরে দুই জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, ওই ঘটনায় উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী আশিক পার্থ ছাড়াও উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবু বক্কর সিদ্দিক ছিলেন। ঘটনার সময় তাকে আটক করা হয়েছিল। পরে তাকে থানা থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, তিনি হামলার সঙ্গে জড়িত নন। তিনি লোকজনদের নিবৃত্ত করতে থানায় গিয়েছিলেন। এ ঘটনার দলীয়ভাবে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা ঘরোয়াভাবে বিষয়টি নিয়ে বসব।

মুঠোফোন বন্ধ থাকায় উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী আশিক পার্থের কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে ক্ষেতলাল উপজেলা বিএনপির সভাপতি খালেদুল মাসুদ আঞ্জুমান বলেন, আমার বাসা উপজেলা সদর থেকে অনেক দূরে। তবে আমি ঘটনাটি শুনেছি। যদি দলের কেউ অপরাধ করে তাহলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।

ক্ষেতলাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুবুর রহমান সরকার বলেন, বিএনপির নেতৃত্বে প্রায় শতাধিক লোকজন এসে থানায় হামলা করে পুলিশকে বেধড়ক মারপিট করেছে।

জয়পুরহাটের এসপি মুহাম্মদ আবদুল ওয়াহাব বলেন, তোফাজ্জলের স্ত্রী জয়নব বেগম বাদী হয়ে সাত জন নামীয়সহ অজ্ঞাত ২০ থেকে ২৫ জনের বিরুদ্ধে থানায় একটি চাঁদাবাজি মামলা করেছেন। থানায় হামলা ও পুলিশকে আহত করার ঘটনায় থানা এসআই সঞ্চয় কুমার বর্মণ বাদী হয়ে ২০ জন নামীয় ও অজ্ঞাত ২০০ থেকে ২৫০ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেছেন। এ মামলায় পাঁচ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্য আসামিদের ধরতে অভিযান চলছে।