উৎসবমুখর পরিবেশে ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে : তথ্যমন্ত্রী
নিউজ পোস্ট বিডি নিউজ পোস্ট বিডি
নিউজ পোস্ট বিডি
তথ্যমন্ত্রী ড.হাছান মাহমুদ বলেছেন, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের শনিবারের নির্বাচন ছিল এ যাবতকালের সবচেয়ে শান্তিপূর্ন।
নির্ঝঞ্ঝাট ও উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনে জনগণ ভোটের মাধ্যমে বিএনপিকে প্রত্যাখ্যান করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন,আজ ঢাকা মহানগরীতে ওই দলটির (বিএনপি) ডাকা হরতালে সাড়া না দিয়ে মহানগরবাসী বিএনপি’র সব অভিযোগও প্রত্যাখ্যান করেছে।
ড. হাছান রোববার দুপুরে সচিবালয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে গতকাল শনিবার অনুষ্ঠিত ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন নিয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন,‘বড় ধরনের কোন ঝামেলা ছাড়াই এ নির্বাচনে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই নির্বাচনে ভোট কেন্দ্র দখলের মতো অপ্রীতিকর ঘটনা যেমন ছিল না,তেমনি ভোট গ্রহন চলাকালে খুনখারাপিও ঘটেনি।’
গতকাল শনিবার অনুষ্ঠিত ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) নির্বাচনকে প্রতিবেশী দেশগুলোর নির্বাচনের সাথে তুলনা করে তথ্যমন্ত্রী বলেন,বাংলাদেশের ইতিহাসে এই নির্বাচন ছিল অনেক বেশী উৎসবমুখর এবং শান্তিপূর্ন।
তিনি বলেন,পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ নগর হিসেবে ঢাকায় ২ কোটি মানুষের বসবাস এবং মহানগরীর (উত্তর ও দক্ষিণ মিলিয়ে) ভোটারের সংখ্যা ৫৪ লাখেরও বেশী।
এত অধিক ভোটারের ঢাকা শহরে অত্যন্ত শান্তিপূর্ন ও উৎসবমুখর পরিবেশে কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ায় তথ্যমন্ত্রী ঢাকা মহানগরবাসী, নগরীর সকল ভোটার, নির্বাচন কমিশন এবং নির্বাচন সংশ্লি¬ষ্ট সবাইকে জানান আন্তরিক অভিনন্দন ও ধন্যবাদ।
ঢাকা মহানগরীতে বিএনপি’র ডাকা রোববারের সকাল-সন্ধ্যা হরতাল সম্পর্কে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান বলেন,‘প্রথমত: আজকে বাঙালি সংস্কৃতির সাথে জড়িয়ে থাকা মহান একুশের বই মেলার উদ্বোধন (নির্বাচনের কারণে প্রচলিত প্রথা ভেঙ্গে ১ ফেব্রুয়ারির স্থলে ২ ফেব্রুয়ারিতে এ মেলার উদ্বোধন করা হয়)। এদিন তারা (বিএনপি) হরতাল ডেকেছে। তবে আমি বাসা থেকে সচিবালয়ে আসার পথে কয়েকবার যানজটে পড়েছি, হরতালের কোনো চিহ্ন দেখতে পাইনি। গতকাল জনগণ ভোটের মাধ্যমে বিএনপিকে প্রত্যাখ্যান করেছে এবং আজকে তারা যে সকল অভিযোগে হরতাল ডেকেছে, হরতালে সাড়া না দিয়ে জনগণ সেসব অভিযোগও প্রত্যাখ্যান করেছে।’
কম ভোটারের উপস্থিতি প্রসঙ্গে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমি দেখেছি ৩০ শতাংশের কাছাকাছি ভোট পড়েছে। তবে ভোটারের উপস্থিতি আরো অনেক বেশি হতো কিন্তু প্রথমত: স্বরসতী পূজাসহ টানা তিনদিন ছুটি থাকায় অনেকে গ্রামে চলে গেছেন। দ্বিতীয়ত শুরু থেকেই ইভিএম নিয়ে বিএনপি’র নেতিবাচক প্রচারণা মানুষের মধ্যে ইভিএম নিয়ে একটি সংশয় তৈরি করে। যে কারণে প্রায় ৮ থেকে ১০ শতাংশ ভোটারের উপস্থিতি কম হয়েছে।’
এ সময় ড. হাছান সাংবাদিকদের স্মরণ করিয়ে দেন যে, ভোটের দু’দিন আগে মির্জা ফখরল ইসলাম আলমগীর বলেছেন,‘আমাদের সফলতা হচ্ছে যে, আমরা ঘর থেকে বেরিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছি।’
তিনি বলেন,‘এ ধরনের উক্তিতে জনগণের মধ্যে ধারণা জন্মেছে, বিএনপি জয়লাভের উদ্দেশ্যে নির্বাচন করছে না, এটি তাদের আন্দোলনের অংশ। অর্থাৎ নির্বাচন যে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হচ্ছে না, বিএনপিই সেটি জনগণের কাছে খোলাসা করেছে। এ সকল কারণ না থাকলে ভোটার উপস্থিতি আরো বেশি হতো।’
ড. হাছান এসময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলেন, ‘আমাদের দেশে ভোট দেয়ার যোগ্য লোকসংখ্যার ৯৯ দশমিক ৮ শতাংশই ভোটার হয়। আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যারা ভোট দেয়ার যোগ্য, তাদের ৬০ শতাংশ ভোটার হয়। আর সেই ৬০ শতাংশের মধ্যে ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ ভোট পড়ে। অর্থাৎ সেখানে মোট যোগ্য ভোটারের ২৪ থেকে ৩০ শতাংশ মানুষ ভোট দেয়। সেই হিসেবে শনিবার ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে যে ৩০ শতাংশের কাছাকাছি ভোটারের ভোট প্রদান অনেক ভালো।’
দু’একটি সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবরের উদ্ধৃতি দিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমি কয়েকটি কাগজে দেখেছি,সেসব কাগজে লেখা হয়েছে যে, যেখানে গোপন কক্ষ সেখানে কোনো কোনো জায়গায় উঁকি দেয়া হয়েছে। যে নির্বাচনে প্রায় আড়াই হাজার ভোটকেন্দ্র, ১৩ হাজারের বেশি বুথ-সেই নির্বাচনযঞ্জে দু’একটি গোপন কক্ষে কেউ উঁকি দিয়েছে, এটি কি বড় বিষয়, না কি এত বড় কর্মযজ্ঞ, এত ভোটার, এতগুলো ভোটকেন্দ্র, ভোট চলাকালিন কোনো জায়গায় কোনো গন্ডগোল হয় নি, কোনো মারপিটের ঘটনা কিংবা কোনো কেন্দ্র দখলের ঘটনা ঘটেনি, সেটি বড় বিষয়!
তথ্যমন্ত্রী বলেন,কেউ কেউ দু’একটি উঁকি দেয়াকে বড় বিষয় হিসেবে দেখানোর অপচেষ্টা চালাচ্ছে, যা অনভিপ্রেত এবং দুঃখজনক।
তিনি বলেন,‘আমাদের দেশে ভোটের ক্ষেত্রে সবসময় ঐতিহ্য হচ্ছে ভোটকেন্দ্রের বাইরে বিভিন্ন দল বা দলীয় প্রার্থীর জন্য যেসব ক্যাম্প খোলা হয়, সেসব ক্যাম্পে ভোটাররা গিয়ে সেখানে ভোটার স্লিপ গ্রহণ করে। এখানেও আমাদের দলের পক্ষ থেকে নির্বাচনী ক্যাম্প করা হয়েছিল,
আইন মেনে নির্দিষ্ট দূরত্বেই তা করা হয়েছিল।’
ড. হাছান এ সময় উল্লেখ করেন,নির্বাচনে ভোট গ্রহণ চলাকালিন সময়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে বিধায় রিক্সা করেও ভোটারদের নিয়ে আসা হয়। এগুলো কোনো নিয়মভঙ্গ না, বরং ঐতিহ্য। এগুলো সব দলই করে থাকে। আওয়ামী লীগ করেছে, এটি আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সফলতা।
বিএনপি কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা করতে পারেনি,যা তাদের সাংগঠনিক দুর্বলতা বলে তিনি মন্তব্য করেন।
নির্বাচনে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে একজন সাংবাদিকের আহত হওযার ঘটনা প্রসঙ্গে সাংবাদিকরা তথ্যমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন,‘আমি গতকাল শনিবারও এ বিষয়ে বলেছি, কোনভাবেই কোনো সাংবাদিকের পেশাগত কাজে বাধা দেয়া সমীচীন নয় এবং আমরা এর নিন্দা জানাই। যতদূর জানা গেছে, সেখানকার স্থানীয় বিএনপি নেতাদের কারণে এটি ঘটেছে, তবে পুলিশের তদন্তে সব বেরিয়ে আসবে। দায়ি ব্যক্তিদের বিরূদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
বিএনপি’র ইভিএম মেশিন পোড়ানো প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি সবসময়ই প্রযুক্তির বিরূদ্ধে। বেগম খালেদা জিয়া দেশের গোপনীয়তা ক্ষুন্ন হবার খোঁড়া অজুহাতে সাবমেরিন ক্যাবলে বিনামূল্যে সংযুক্ত হওয়ার প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। ইভিএম-এ পুরো ভারতবর্ষে ভোট হয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে হয়, আর তারা (বিএনপি) ইভিএম’র বিরূদ্ধে। অথচ ইভিএম’র কারণেই ভোটে কোনো গোলযোগ ঘটেনি, কেন্দ্র দখল হয়নি। এতে বরং বিএনপি’র খুশি হওয়ার কথা। কিন্তু ইভিএম’র বিরোধীতা করে এ দলটি (বিএনপি) তাদের সবসময়ের প্রযুক্তিগত দিকের বিরোধিতা করার যে ধারাবাহিকতা তারই বহি:প্রকাশ ঘটিয়েছেন।’