ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মোবাইল নম্বর ক্লোন করে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নিতো হিরা

প্রকাশিত: ৬:৪৭ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ৪, ২০২৩

সাইফুল ইসলাম:
ডিএমপির ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা, বিভিন্ন জেলার পুলিশ সুপার ও বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণের নম্বর ক্লোন করে প্রতারণা করার অভিযোগে একজনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা- সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ। তার নাম- ইমরান হোসেন হীরা। এসময় তার হেফাজত থেকে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত দুইটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।
পুলিশ জানায়, সাম্প্রতিক সময়ে এক প্রতারক ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনারের (অ্যাডমিন) সরকারি নম্বর ক্লোন করে মতিঝিল থানার ডিউটি অফিসারের মোবাইল নম্বরে ফোন দিয়ে নিজেকে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (অ্যাডমিন) পরিচয় দেয়। পরবর্তীতে প্রতারক একটি অভিযোগের ভিত্তিতে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে এমন দুইজন ব্যক্তিকে কেন থানায় আনা হয়েছে তার কারণ জানতে চায় এবং দ্রুত তাদের ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ প্রদান করে। এরপর প্রতারক ঐ দুই ব্যক্তিকে থানা থেকে ছাড়িয়ে আনার জন্য টাকা দাবি করে। টাকা না দিলে প্রতারক তাদের বিভিন্ন হুমকি-ধামকি প্রদান করে। এই ঘটনায় মতিঝিল থানায় মামলা রুজু হয়। আজ সোমবার (৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ডিএমপির ডিবি কম্পাউন্ডে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা জানান ডিএমপির গোয়েন্দা প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
তিনি বলেন, গ্রেফতারকৃত ব্যক্তি একজন পেশাদার প্রতারক। সে দশম শ্রেণী পর্যন্ত অধ্যয়ন করলেও তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারে পারদর্শী। সে ইন্টারনেট ব্যবহার করে বিভিন্ন অ্যাপসের ব্যবহার সম্পর্কে ভাল ধারণা রাখতো। সে বিভিন্ন গুরত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নম্বর ক্লোন করে অনুরূপ নম্বর তৈরি করার লক্ষ্যে ইন্টারনেট থেকে বিশেষ অ্যাপ ব্যবহার করে। একটি বিশেষ অ্যাপের মাধ্যমে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা ও দেশের বিভিন্ন জেলার পুলিশ সুপারের সরকারি নম্বর ক্লোন করে থানায় ওসি ও ডিউটি অফিসারের নম্বরে ফোন করে গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিদের ছেড়ে দেওয়ার বিষয়ে অনৈতিক তদবির করতো। এরপর কৌশলে গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিদের পরিবারের নম্বর নিয়ে তাদের ছেড়ে দেওয়ার কথা বলে অর্থ দাবি করতো। গ্রেফতারকৃত ব্যক্তির বিরুদ্ধে দেশের একাধিক থানায় মামলা রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এছাড়াও প্রতারক সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সরকারি নম্বর ক্লোন করে বিভিন্ন ধরণের প্রতারণা করতো। ইউএনও ও প্রশাসনিক কর্মকর্তার নম্বর ক্লোন করে চেয়ারম্যান, মেম্বারের নিকট ফোন করে এলাকার রাস্তা নির্মাণের কাজ বরাদ্দ হয়েছে মর্মে সরকারী ফি-বাবদ বিভিন্ন অংকের টাকা জমা দিতে বলতো। প্রতারিত চেয়ারম্যান, মেম্বার সরল বিশ্বাসে প্রতারককে টাকা প্রেরণ করতো। এমন অভিযোগে গত শনিবার বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে ইমরানকে গ্রেফতার করে গোয়েন্দা- সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের সোশ্যাল মিডিয়া ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিম। গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিকে মতিঝিল থানায় রুজুকৃত মামলায় আজ দুপুরের দিকে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।
এ ধরণের প্রতারণা এড়াতে গোয়েন্দা- সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের সুপারিশঃ
১. আপনার নম্বরে সন্দেহজনক কল আসলে বা অনৈতিক প্রস্তাব আসলে অর্থাৎ ক্লোনকৃত নম্বর থেকে কল এলে পুনরায় কলকৃত নম্বরে কল করে নিশ্চিত হোন। বাংলাদেশের সকল মোবাইল নম্বরের কান্ট্রি কোড+৮৮, ক্লোনকৃত নম্বর +৩৮, +১, +৮৮৮, +০৮ ইত্যাদি সম্বলিত থাকে।
২. কোন উচ্চপদস্থ পুলিশ অফিসার বা অন্য কোন সরকারী কর্মকর্তার নম্বরের প্রথমে +৮৮ এর পরিবর্তে +৩৮,+১, +৮৮৮ ইত্যাদি নম্বর হতে কল আসলে ইনকামিং নম্বরটি ভালভাবে পর্যবেক্ষণ করে যোগাযোগ করবেন।
৩. এ ধরণের প্রতারণার শিকার হলে পুলিশকে অবহিত করার অনুরোধ জানিয়েছেন ডিএমপির গোয়েন্দা প্রধান হারুন অর রশীদ।