ক্রীড়া ডেস্ক:
বাহারি চুলের ফুটবলকন্যা মাঠে আরও রঙিন। তার বাঁ পায়ের ফুটবলশৈলীতে শুধুই ছড়ায় মুগ্ধতা। অসাধারণ ড্রিবলিংয়ের সঙ্গে চোখ ধাঁধানো ফ্রি কিক; ঋতুপর্ণা চাকমা যেন বাংলাদেশের নারী ফুটবলের পোস্টার গার্ল। অতটা আলোচনায় না এলেও মধ্যমাঠের শিল্পী হিসেবে বেশ সুনাম তাঁর।
গতকাল কাঠমান্ডুতে নারী সাফের ফাইনালে নেপালের বিপক্ষে ৮১ মিনিটে যে গোলটি করেছিলেন তিনি, ধারাভাষ্যকাররা বলতে বাধ্য হয়েছেন ‘ওয়ান্ডারফুল’। গোল করার পর নিজের মুখে আঙুল দিয়ে ঋতুপর্ণা ভরা গ্যালারিকে চুপ থাকতে বলেছেন। তাঁর এই গোলেই দশরথের ১৬ হাজারের মতো দর্শক শুধুই চুপই হননি, বাংলাদেশের মেয়েরা যে গড়েছেন অনন্য কীর্তি। বড় কোনো ট্রফি জিতে ধরে রাখার কীর্তি ছেলেরাও পারেনি। সেটিই এবার করে দেখিয়েছেন সাবিনারা।
বুধবার টুর্নামেন্টের ফাইনালে নেপালকে ৩-১ গোলে হারিয়ে টানা দ্বিতীয় শিরোপা জেতা বাংলাদেশের এই সাফল্যের অন্যতম কারিগর তো রাঙামাটির কাউখালী উপজেলার মোগাছড়ি গ্রামের কন্যা ঋতুপর্ণা। টুর্নামেন্টের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আপন আলোয় উজ্জ্বল থাকা এ মিডফিল্ডার করেছেন দুই গোল। তবে গোলের জন্য নয়, নজরকাড়া পারফরম্যান্স আর ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়ার মতো বেশ কয়েকটি গল্প লেখায় এবারের আসরে সেরা ফুটবলারের পুরস্কারটি উঠেছে ঋতুপর্ণার হাতে।
পুরস্কার মঞ্চে দাঁড়িয়ে কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলা এ প্লে-মেকার ভাসছেন স্বপ্নপূরণের উচ্ছ্বাসে, ‘এই মুহূর্তে খুবই ভালো লাগছে। আমি সত্যিই খুব আনন্দিত। এই স্বপ্ন সত্যি হওয়ার মতো। আমি আসলে ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না। আমরা দ্বিতীয়বারের মতো সাফ চ্যাম্পিয়ন হয়েছি। আমার পরিবার আমাকে অনেক সাপোর্ট করেছে। বাংলাদেশের মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। সমর্থকদের দোয়ায় আমরা দ্বিতীয়বার চ্যাম্পিয়ন হয়েছি।’
বাঁ প্রান্ত দিয়ে ঋতুপর্ণা যখন আক্রমণ শানান, তখন প্রতিপক্ষ হয়ে যায় এলেমেলো। ভুটানের বিপক্ষে সেমিফাইনালে ম্যাচের ৭ মিনিটে তাঁর বাঁ পায়ের বুলেটগতির শটই চলে যায় জালে। অথচ তার আগ পর্যন্ত গোল না পাওয়ার আক্ষেপ ছিল তাঁর কণ্ঠে। শেষ চারে সেই আক্ষেপ পূরণের পর ফাইনালে নেপালের বিপক্ষে করেছেন জয়সূচক গোল।
বড় ম্যাচের ফুটবলার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা ঋতুপর্ণার জীবনে ২০২২ সালে নেমে এসেছিল আঁধার। ওই বছরের জুনে আদরের ছোট ভাই পার্বন চাকমার মৃত্যুটি তাঁর জন্য বড় আঘাত হয়ে এসেছিল। এরপর সিনিয়র সাফ জেতার সঙ্গে যত কিছুই অর্জন করেছেন, প্রতিবারই প্রিয় ভাই পার্বনকে মনে করেছিলেন। এবারও হয়তো টুর্নামেন্ট সেরার ট্রফিটা প্রয়াত ছোট ভাইকে উৎসর্গ করেছেন মধ্যমাঠের শিল্পী ঋতুপর্ণা চাকমা।