এটিএম জালিয়াতি করে অর্থ আত্মসাতের ঘটনার কূলকিনারা হচ্ছে না
নিউজ পোস্ট বিডি নিউজ পোস্ট বিডি
নিউজ পোস্ট বিডি
ঢাকায় ডাচ-বাংলা ব্যাংকের একাধিক বুথসহ কুমিল্লা ও চট্টগ্রামের পূবালী ব্যাংকের বুথ থেকে জালিয়াতি করে অর্থ আত্মসাতের ঘটনার কোনও কূলকিনারা করতে পারছে না পুলিশ। ঢাকায় এটিএম জালিয়াতির ঘটনার সাত মাস পেরিয়ে গেছে। ঘটনার পরপর পুলিশ ছয় ইউক্রেনিয়ান নাগরিককে গ্রেফতার করে। তবে তাদের পালিয়ে যাওয়া এক সহযোগী এখনও গ্রেফতার হয়নি। শনাক্ত হয়নি এই চক্রে জড়িত বাংলাদেশি নাগরিকদেরও। এরই মধ্যে ঘটে কুমিল্লা ও চট্টগ্রামে পূবালী ব্যাংকের এটিএম বুথ থেকে অর্থ আত্মসাতের ঘটনা। এ ঘটনারও পেরিয়ে গেছে দুই মাস। তবে এটিরও কোনও সুরাহা হয়নি।
সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলছেন, এটিএম জালিয়াতির ঘটনায় জড়িত চক্র বা চক্রগুলোকে শনাক্ত না করা গেলে ব্যাংকিং খাত বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে। ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে এটিএম বুথের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বাড়াতে হবে। তা না হলে ঝুঁকির মুখে পড়তে পারেন ব্যাংকের গ্রাহকেরাও।
তদন্ত-সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, এটিএম জালিয়াতির ঘটনার সঙ্গে জড়িত চক্রটিকে শনাক্ত করতে তারা কাজ করছেন। তবে ইউক্রেনের চক্রটির সঙ্গে জড়িত বাংলাদেশিদের শনাক্তে বেগ পেতে হচ্ছে। এই জালিয়াত চক্রকে শনাক্ত করতে আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলসহ যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (এফবিআই) সহযোগিতাও নেওয়া হচ্ছে।
ঢাকার এটিএম জালিয়াতির তদন্ত করছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির পরিদর্শক আরিফুর রহমান বলেন, ‘আন্তর্জাতিক এই চক্রের সঙ্গে বাংলাদেশি নাগরিকরাও জড়িত বলে আমরা ধারণা করছি। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে সন্দেহভাজন কয়েকজনের বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।’ তবে এখন পর্যন্ত কাউকে শনাক্ত করা যায়নি বলে জানান তিনি।
পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা নানাভাবে চেষ্টা করছি পুরো চক্রটি শনাক্ত করার। এজন্য ইন্টারপোল এবং এফবিআইয়ের সহযোগিতাও নেওয়া হচ্ছে।’
তদন্ত সূত্র জানায়, গত বছরের ১ জুন সন্ধ্যায় রাজধানীর খিলগাঁও তালতলা এলাকার ডাচ-বাংলা ব্যাংকের একটি বুথ থেকে জালিয়াতি করে অর্থ হাতিয়ে নেয় একটি সংঘবদ্ধ চক্র। এ ঘটনায় পুলিশ অভিযান চালিয়ে ইউক্রেনের ছয় নাগরিককে গ্রেফতার করে। অভিযানের বিষয়টি টের পেয়ে ভিতালি (পাসপোর্ট নম্বর: এফই ৮০৪৪৪৮) নামে এক ইউক্রেনিয়ান পালিয়ে যায়। পরে অনুসন্ধানে নেমে পুলিশ আরও তিন ইউক্রেনিয়ানের সম্পৃক্ততা পায়। তবে অভিযানের আগেই তারা দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছে বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, গ্রেফতার হওয়া ইউক্রেনিয়ানদের কাছ থেকে যেসব ইলেকট্রনিক ডিভাইস উদ্ধার করা হয়েছিল, সেসব সিআইডির ফরেনসিক ল্যাবে পরীক্ষা করা হয়েছে। তবে পরীক্ষায় কিছু সাংকেতিক নম্বর মিললেও কারা কীভাবে এ ঘটনা ঘটিয়েছে তার বিস্তারিত উদঘাটন করা যায়নি।
ঢাকার এটিএম জালিয়াতির ঘটনায় ডাচ-বাংলা ব্যাংকের পক্ষ থেকে একটি জালিয়াতির মামলা ছাড়াও পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) পক্ষ থেকে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে একটি মামলা করা হয়। সিআইডি একাধিকবার এফবিআই-এর সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে বৈঠকও করেছে। তবে এখন পর্যন্ত তারাও কোনও কূল-কিনারা করতে পারেনি।
সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার মোস্তফা কামাল বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত বলার মতো কোনও অগ্রগতি হয়নি। জালিয়াতির ঘটনার পর ইউক্রেনের নাগরিকদের কাছ থেকে একটি প্যাড ও কয়েকটি মোবাইল উদ্ধার করা হয়েছিল। কিন্তু বিশেষজ্ঞ দিয়ে নানাভাবে চেষ্টা করেও সেগুলোর পাসওয়ার্ড খোলা যায়নি। এ কারণে বিদেশি বিশেষজ্ঞদের সহযোগিতা নেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে।’ মোবাইল বা প্যাড ঘেঁটে দেখতে পারলে তাদের বাংলাদেশি সহযোগীদের তথ্য পাওয়া যেতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ঢাকায় জালিয়াতির রেশ কাটতে না কাটতেই গত বছরের ১৬ ও ১৭ নভেম্বর কুমিল্লা ও চট্টগ্রামে পূবালী ব্যাংকের এটিএম বুথ থেকে প্রায় সাড়ে ৬ লাখ টাকা তুলে নেয় জালিয়াত চক্র। এক দিনের ব্যবধানে ঘটা এ দুটি ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দুই ব্যক্তির ছবি পাওয়া যায়। চেহারা দেখে প্রাথমিকভাবে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা তাদের বাংলাদেশি নাগরিক বলে মনে করছেন। তবে ঘটনার দুই মাস হয়ে গেলেও তাদের পরিচয় শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ। কুমিল্লার ঘটনায় দায়ের মামলাটি প্রথমে কোতয়ালী থানা পুলিশ তদন্ত করে। পরে সেটি স্থানান্তর করা হয় জেলা গোয়েন্দা পুলিশের কাছে।
গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক আনোয়ারুল আজিম বলেন, পুলিশ সদর দফতরের এলআইসি শাখার সহযোগিতায় তারা জালিয়াত চক্রটিকে শনাক্ত করার চেষ্টা করছেন।
সিআইডির একজন কর্মকর্তা জানান, দেশি-বিদেশি এই জালিয়াত চক্রটি তথ্য-প্রযুক্তি বিষয়ে অনেক দক্ষ। তারা এমনভাবে জালিয়াতি করেছে যে তাদের পরিচয় শনাক্ত করা কঠিন হয়ে পড়েছে। এই জালিয়াত চক্রটি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের এটিএম বুথে হানা দিয়ে অর্থ আত্মসাত করে নিচ্ছে।
সিআইডির ওই আরও কর্মকর্তা জানান, প্রাথমিকভাবে তারা ‘টুপকিন’ নামে একটি ম্যালওয়ার ব্যবহার করেছিল বলে ধারণা করা হয়। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য উদঘাটন করা যায়নি।