নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাজধানী পর খুলনায় জাতীয় পার্টির (জাপা) কার্যালয়ে হামলা চালানো হয়েছে। শনিবার সন্ধ্যার পর কার্যালয়টির সামনে আগুন দেয় একদল যুবক। এদিকে গত বৃহস্পতিবার রাজধানীতে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ভাঙচুরের পর জাপা পূর্ব ঘোষিত বিক্ষোভ সমাবেশ স্থগিত করলেও গতকাল রংপুরে লাঠি মিছিল করেছে দলটি।
অন্যদিকে, জাপা চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে ঢাকায়।
রাজধানীর কাকরাইলে জাপার কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে হামলার দু’দিন পর গতকাল দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা সেখানে পরিদর্শনে যান। এ সময় প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, আইনি এবং রাজনৈতিকভাবে এর মোকাবিলা করা হবে।
খুলনা ব্যুরো জানায়, গতকাল সন্ধ্যায় একদল যুবক মিছিল করে এসে নগরীর ডাকবাংলো এলাকায় জাপার অফিস থেকে প্লাস্টিকের কয়েকটি চেয়ার ও কিছু ব্যানার বাইরে এনে আগুন ধরায়। ফায়ার সার্ভিসের দুটি দল এসে আগুন নেভায়। এ ঘটনার পর কার্যালয়ের সামনে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
জেলা জাপার সভাপতি শফিকুল ইসলাম মধু বলেন, অফিসে কেউ ছিল না। ৫০-৬০ জন ছাত্র-যুবক এসে সাইনবোর্ড, চেয়ার-টেবিল, ফ্যান ও টিভি ভাঙচুর করে। কাগজপত্র নিয়ে যায়। তিনি বলেন, এ ঘটনায় মামলা করা হবে। রোববার সন্ধ্যায় অফিসের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করা হবে।
খুলনা সদর থানার ওসি মুনীর উল গিয়াস বলেন, ৫০-৬০ যুবক মিছিল করে এসে ভাঙচুর করেছে। পুলিশ তাদের ধাওয়া দিয়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। জাতীয় পার্টির নেতারা অভিযোগ দিলে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
কাদেরকে গ্রেপ্তারের দাবিতে মিছিল
জি এম কাদেরকে গ্রেপ্তারের দাবিতে বিকেলে রাজধানীর উত্তরায় তাঁর বাসার সামনে মিছিল করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা। তাঁরা জাপা মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুকেও গ্রেপ্তারের দাবি জানান।
উত্তরা পশ্চিম থানার ওসি হাফিজুর রহমান সমকালকে বলেন, ৭০-৮০ জন এসে মিছিল করেছে। তখন জি এম কাদের বাসায় ছিলেন না। কিছুক্ষণ পর মিছিলকারীরা চলে যায়।
জি এম কাদেরকে আওয়ামী লীগের দোসর আখ্যা দিয়ে তাঁকে জুলাই গণহত্যার জন্য গ্রেপ্তারের দাবিতে প্রগতিশীল জাতীয়তাবাদী দল (পিএনপি) গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করে। দলটির অভিযোগ, জাপাসহ আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের শরিক দলগুলোর বিচার করতে হবে, নিষিদ্ধ করতে হবে।
রংপুর অফিস জানায়, হামলার প্রতিবাদে গতকাল বিকেলে নগরীর সেন্ট্রাল রোডের কার্যালয় থেকে লাঠি মিছিল করে পায়রা চত্বরে যান জাপার নেতাকর্মীরা। দলটির কো-চেয়ারম্যান মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফার সভাপতিত্বে সেখানে সমাবেশে বক্তারা বলেন, ভিপি নুরুল হক নুর, সমন্বয়ক সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহকে ব্যবহার করে জাতীয় পার্টির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে। সব ষড়যন্ত্র রাজপথে প্রতিহত করা হবে।
রংপুরের সাবেক মেয়র মোস্তাফিজার রহমান বলেন, ভিপি নুরের দল গণঅধিকার পরিষদ সারাদেশে জাপা কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দিয়েছে। আমরা ইসরায়েলের টাকায় চলা গণঅধিকার পরিষদকে গণনায় ধরি না। রাজপথে দেখা হবে, রাজপথে স্লোগান হবে, রাজপথে রক্ত যাবে, রাজপথে মিছিল হবে। এরশাদের জাতীয় পার্টিকে টিকিয়ে রাখতে প্রস্তুত আছি।
এদিকে গতকাল সকাল থেকেই জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সতর্ক অবস্থানে ছিল পুলিশ। সেই সঙ্গে ওই কার্যালয়ে যাওয়ার সব পথসহ পুরো এলাকা ঘিরে ছিল কড়া নিরাপত্তা বলয়। দলটির নেতাকর্মী বা অন্য কাউকে সেখানে যেতে দেওয়া হয়নি। যদিও একটু পরপর উৎসুক লোকজন পুড়ে যাওয়া ভবনটি দেখতে ভিড় জমাচ্ছিলেন। অদূরেই প্রস্তুত ছিল জলকামান।
কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যরা জানান, অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে তারা নিরাপত্তা জোরদার করেছেন।
মুজিবুল হক চুন্নু সমকালকে বলেছেন, আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে জাপা কর্মসূচি স্থগিত করেছে। তবে তারা রাজপথে থাকবেন।
‘আইন নিজের হাতোত তুলি নিবেন ক্যা?’
‘আইন আছে না দ্যাশে? তারা (জাতীয় পার্টি) যদি দোষী হয়, আইনের হাতোত তুলি দ্যান। আইন নিজের হাতোত তুলি নিবেন ক্যা? সবাই যদি আইন নিজের হাতোত তুলি নেয়, তাহলে তো মার্ডার হইবে সারা বাংলাদেশে। আমরা কোনো দল করি না, যে দল নির্যাতিত হয়, তার পক্ষে থাকি। কারণ, আমাদের একটা জ্ঞান আছে।’
গতকাল বিকেলে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হওয়া লোকজনকে এসব বলছিলেন রিকশাচালক রাশেদুল ইসলাম। তাঁর বাড়ি রংপুরে।
উপস্থিত একজন তাঁকে প্রশ্ন করেন– ১৬ বছরে কোন দল সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত হয়েছে? জবাবে তিনি বলেন, সব দলই নির্যাতিত হয়েছে। প্রশ্নকর্তা বলেন, জামায়াতে ইসলামী সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত হয়েছে। তাতে সমর্থন জানান রাশেদুল।
জাতীয় পার্টির অফিসে কারা হামলা করেছে– একজনের এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘দেখেন নাই কারা করছে? ছাত্র অধিকার পরিষদের বিন ইয়ামিন মোল্লা, আওয়ামী লীগ আমলে ওনাক তুলি নিয়া গেছে, মারধর করছে। উনি মজলুম ছিল, আমরা অনেক দুঃখ প্রকাশ করছি। কিন্তু এখন ওনার নেতৃত্বে যদি আরেক জায়গায় হামলা হয়, তাহলে উনি জালেম হয়া গেলেন না? আমি এটাই বুঝাতে চাইছি। জামায়াত নির্যাতিত হইছে, এখন তারা যদি আরেকজনের ওপর আক্রমণ করে, তাহলে তারা জালেম হয়া যাইবে না?’