এমন হারের কী ব্যাখ্যা দেবে বাংলাদেশ?

প্রকাশিত: ৪:২৪ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ১, ২০২৪

ক্রীড়া ডেস্ক:

কানপুরে বাংলাদেশের বোলারদের ওপর দিয়ে টর্নেডো, হ্যারিক্যান বইয়ে দিয়েছেন যসস্বি জয়সওয়াল, শুভমান গিল, বিরাট কোহলি ও লোকেশ রাহুলরা। টেস্ট ক্রিকেটের ১৪৭ বছরের দীর্ঘ ইতিহাসে যা কখনো হয়নি, গতকাল সোমবার সেই রেকর্ডই গড়েন ভারতীয় ব্যাটাররা।

টেস্টকে টি-টোয়েন্টি বানিয়েছে ভারত। খালেদ আহমেদ, হাসান মাহমুদ, সাকিব আল হাসান, মেহেদী হাসান মিরাজ ও তাইজুল ইসলামদের মুড়ি-মুড়কির মতো উড়িয়ে তিনটি নতুন বিশ্বরেকর্ড গড়েছে তারা।দ্রুততম ৫০ (৩ ওভারে), শতক (১০.১ ওভারে ১০০) ও ২০০ রান (২৪.২ ওভারে) তোলার নতুন রেকর্ড করে ভারত। সোমবার মাত্র ৩৪.৪ ওভারে ২৮৫ রান তোলে রোহিত শর্মার দল।

প্রথম তিন দিনে মাত্র ৩৫ ওভার খেলা হওয়া প্রাণহীন ম্যাচে ব্যাটিং তাণ্ডব দেখে বোঝা গেছে, বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের এই ম্যাচ জিততে মরিয়া ভারত। স্বাগতিকরদের হাত থেকে ম্যাচ বাঁচানো কঠিন হবে বাংলাদেশের, সেটিও স্পষ্ট হয়ে গেছে।
মঙ্গলবার অন্তত চা-বিরতি পর্যন্ত ব্যাট করতে পারলে ড্র করার সম্ভাবনা থাকতো বাংলাদেশের। সেটাই ছিল নাজমুল হোসেন শান্তর দলের একমাত্র কাজ।

কিন্তু সাদমান ইসলাম, মুমিনুল হক, শান্ত, মুশফিকুর রহিম, লিটন দাস, সাকিব আল হাসান ও মেহেদী হাসান মিরাজরা টিকে থাকতে পারবেন কিনা, সেটি নিয়ে সংশয় ছিল। কারণ জাসপ্রিত বুমরাহ, আকাশ দীপের দুরন্ত গতি আর দুই স্পিনার রবিচন্দ্রন অশ্বিন ও রবীন্দ্র জাদেজার স্পিন ঘূর্ণি সামলে ক্রিজে থাকা সহজ নয়।

এমন মুহূর্তে বাংলাদেশের ব্যাটারদের কাজ ছিল সামর্থ্যের সেরাটা উপহার দেওয়া। ধৈর্যশীল, সাহসী ও দায়িত্বশীল ব্যাটিং করে উইকেটে টিকে থাকা।

কিন্তু বাস্তবে উল্টোটা করলেন ‘টাইগার’ নামধারী বাংলাদেশের ব্যাটাররা। দায়িত্ব সচেতনতার আশপাশ দিয়েও গেলেন না কেউ। সবাই হাঁটলেন উল্টো পথে। আর তাতেই ম্যাচ চলে গেলো ভারতের পকেটে।

দুই বাঁহাতি সাদমান ও মুমিনুলকে দেখে একপ্রান্তে পেস, অন্য প্রান্তে ডানহাতি অফস্পিনার রবিচন্দ্রন অশ্বিনকে বোলিংয়ে লাগান রোহিত। ভারতীয় অধিনায়কের সেই কৌশল অব্যর্থ টনিকের মতো কাজে দিলো।

মঙ্গলবার শুরু থেকেই ভুল পথে হাঁটলেন বাংলাদেশের ব্যাটাররা। সুইপ খেলতে গিয়ে অশ্বিনের বলে লেগ স্লিপে ক্যাচ দেন মুমিনুল।

চতুর্থ দিন অশ্বিনকে বারবার সুইপ খেলে সফল হন মুমিনুল। আজ পঞ্চম দিনে সেই কৌশলই আঁটতে চাইলেন বাঁহাতি ব্যাটার। কিন্তু এবার তিনি সফল হননি।ভুল পথের যাত্রী হলেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তও। মুমিনুলের বিদায়ের পর সাদমানের সঙ্গে ৫৫ রানের জুটি গড়ে আশাও জাগান তিনি। কিন্তু ভারতীয় বাঁহাতি স্পিনার রবীন্দ্র জাদেজার কৌশলের কাছে হেরে যান শান্ত। বাংলাদেশ অধিনায়ক বুঝলেন না, জাদেজা আর জেঁকে বসতে দেওয়া যাবে না। শুরু থেকেই তার লাইন ও লেন্থ নষ্ট করতে হবে।

যে কারণে জাদেজার লেগস্টাম্প বরাবর বলে রিভার্স সুইপ খেলতে যান শান্ত। কিন্তু বাঁহাতি ব্যাটারকে ফাঁকি দিয়ে বল আঘাত হানলো উইকেটে। ভাঙলো বাংলাদেশের কপাল। পরের দুই ওভারে জাদেজার শিকার হলেন লিটন দাস ও সাকিব আল হাসান। আর তাতেই কম্ম কাবার শান্ত বাহিনীর।

পরিস্থিতির দাবি ছিল, রয়ে সয়ে খেলা। ভালো বলকে সমীহ দেখিয়ে আলগা বলের জন্য অপেক্ষায় থাকা। সেই বলগুলোকে কাজে লাগিয়ে রান তোলা।বাংলাদেশের ব্যাটাররা করলেন উল্টো। অপ্রয়োজনীয়, ঝুঁকিপূর্ণ ও ব্যাকরণের বাইরে সুইপ, রিভার্স সুইপ এবং মনগড়া শট খেলতে গিয়ে উইকেট বিসর্জন দিলেন তারা। এই দায়িত্ব-কাণ্ডজ্ঞানহীন ও মনগড়া ব্যাটিং ডোবালো বাংলাদেশকে।

বৃষ্টির কারণে আড়াই দিনের বেশি সময় খেলা না হওয়ার পরও ম্যাচ বাঁচাতে পারেনি বাংলাদেশ! এক সেশন আগেই হেরে গেলো!

এমন গা-ছাড়া পারফরম্যান্সে পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশের কৃতিত্বটা হলো ম্লান। নতুন করে প্রশ্নবিদ্ধ হলো টেস্টে বাংলাদেশের সামর্থ্য। সমালোচকরা নড়েচড়ে বসলেন। ব্যাঙ্গ- বিদ্রুপের স্বরে বললেন, আরে এই ম্যাচ আবার কেউ হারে নাকি? তাহলে কী টেস্ট ক্রিকেটে এখনো আতুঁড় ঘরে বাংলাদেশ?