
ডেস্ক রিপোর্ট:
সংশোধিত ওয়াকফ আইন ঘিরে ভারতের রাজনীতিতে শুরু হয়েছে তীব্র উত্তেজনা, যার প্রভাব পড়েছে পশ্চিমবঙ্গেও। রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় দেখা দিয়েছে বিক্ষোভ ও সহিংসতা। এই অস্থির পরিস্থিতির জন্য কেন্দ্রের শাসক দল বিজেপি এবং কট্টর হিন্দুত্ববাদী সংগঠন আরএসএসকে দায়ী করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। খবর ইন্ডিয়া টুডের।
শনিবার (১৯ এপ্রিল) এক খোলা চিঠিতে রাজ্যের মানুষের উদ্দেশে শান্তির আহ্বান জানান মমতা। তিনি লেখেন, হঠাৎ করেই রাজ্যে বিজেপি এবং তাদের সহযোগী সংগঠনগুলোর মধ্যে আক্রমণাত্মক মনোভাব দেখা যাচ্ছে। এই প্রচার-প্রচারণার পেছনে রয়েছে আরএসএসের পরিকল্পিত মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর ষড়যন্ত্র।
মমতার অভিযোগ, প্ররোচনামূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে রাজ্যে সাম্প্রদায়িক বিভাজন তৈরির চেষ্টা চলছে। তিনি বলেন, বিজেপি ও আরএসএস এই উত্তেজনাকে ব্যবহার করে রাজ্যে বিভেদের রাজনীতি করতে চায়।
চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রী অনুরোধ করে বলেন, ‘দয়া করে ধৈর্য ধরুন ও শান্ত থাকুন। রাজ্যে কেউ সাম্প্রদায়িক অশান্তি সৃষ্টি করতে পারবে না। যারা এর পেছনে আছে, তাদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
তিনি আরও বলেন, রামনবমী উপলক্ষে অশান্তির ছক কষা হলেও রাজ্যে তা শান্তিপূর্ণভাবে উদযাপিত হয়েছে। সেই ব্যর্থতা ঢাকতেই ওয়াকফ আইনের প্রতিবাদের আড়ালে নতুন উত্তেজনা ছড়াতে চাইছে একটি গোষ্ঠী।
মমতা বিজেপির প্রচারকে ‘অপব্যাখ্যা ও মিথ্যা’ বলে আখ্যা দিয়ে লিখেছেন, ‘ওদের কথায় বিশ্বাস করবেন না। ওরা নির্বাচনের আগে ধর্মীয় বিভাজন সৃষ্টি করতে চায়। কিন্তু বাংলার মাটি সম্প্রীতির প্রতীক, এখানে সব সম্প্রদায়ের মানুষ একসঙ্গে থাকে।’
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাজ্য সরকার ইতোমধ্যে দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে সরিয়ে দিয়েছে এবং ঘটনার তদন্ত চলছে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী। পাশাপাশি তিনি আশ্বস্ত করেন, দোষীদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
চিঠির একপর্যায়ে মমতা অন্যান্য রাজ্য—উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান, বিহার ও মণিপুরে ঘটে যাওয়া সাম্প্রদায়িক অশান্তির প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ‘বাংলা এসব রাজ্যের মতো নয়। এখানে সংবিধান-বিরোধী কোনো ব্যবস্থা চলতে পারে না। বাংলার মানুষ জানে কীভাবে শান্তি বজায় রাখতে হয়।’
উল্লেখ্য, সংশোধিত ওয়াকফ আইনের বিরুদ্ধে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে চলমান বিক্ষোভের ঢেউ পৌঁছেছে পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ ও মালদহ জেলাতেও। সুতি, জঙ্গিপুর, শমসেরগঞ্জ ও ফরাক্কা এলাকায় সংঘর্ষে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে। বহু মানুষ হয়েছেন আহত, ঘরছাড়া হয়েছেন অনেকেই। তবে স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের নিরাপদে ঘরে ফেরানোর উদ্যোগ শুরু হয়েছে।