করোনাকালেও রাজধানীর ফুটপাত থেকে প্রতিনিয়ত চাঁদা উত্তোলন করা হচ্ছে।অভিযোগ উঠেছে, স্থানীয় সংঘবদ্ধ একটি চক্র ফুটপাত থেকে নির্দিষ্ট অংকের চাঁদা তুলছে। পিছিয়ে নেই সংশ্লিষ্ট এলাকার থানা ও ফাঁড়ি পুলিশের সদস্যরা।এমন মহামারির মধ্যে বেঁচে থাকার তাগিদে সরকার ঘোষিত কঠোর বিধিনিষেধ শিথিলে নিম্ন আয়ের হকাররা ফুটপাতে পসরা সাজিয়ে বসলেও চাঁদাবাজদের হাতে নিয়মিত চাঁদার টাকা তুলে দিতে বাধ্য হচ্ছে। কেউ চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাকে নানাভাবে হয়রানি করা হচ্ছে।আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও ফুটপাতের মামলা ঠুঁকে দিচ্ছে।এসব ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা বলছেন, ব্যবসার যে অবস্থা, তাতে এভাবে চাঁদা দিয়ে চালান-পুঁজিও শেষ হয়ে হাচ্ছে। এখন তাদের পথে বসার উপক্রম হয়েছে। পুলিশ বলছে, ফুটপাত থেকে কোন পুলিশ চাঁদা তুলে থাকলে প্রমান বা অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, করোনার অতিমারির কারণে সরকারের নির্দেশে নিত্যপণ্যের দোকান ছাড়া সব ধরণের মার্কেট-শপিংমল বন্ধ ছিল।একই সঙ্গে ফুটপাতের দোকানপাটও বন্ধ রেখেছিল হকাররা। কিন্তু আসন্ন কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে গত ১৪ জুলাই থেকে ২৩ জুলাই ভোর ৬টা পর্যন্ত বিধিনিষেধ শিথিল করে সরকার। এমন খবরে নিম্ন আয়ের মানুষ ফুটপাতে পসরা সাজিয়ে বেচাকেনা শুরু করে। কিন্তু স্থানীয় একটি চক্র ক্ষমতাসীন দলের প্রভাব খাটিয়ে পুলিশকে ম্যানেজ করে ফুটপাতের প্রতিটি দোকান থেকে ১শ টাকা করে চাঁদা উত্তোলন শুরু করেছে।একই সঙ্গে থানা ও ফাঁড়ি পুলিশও চাঁদার টাকা আদায়ে তৎপর হয়ে উঠেছে।আজ শুক্রবার (১৬ জুলাই,২০২১) বিকেল ৫টার দিকে লালবাগের নবাবগঞ্জ বেড়িবাঁধে দেখা গেছে লালবাগ থানার পেট্রোল ডিউটিতে থাকা পুলিশের পিকআপযোগে (ইন; নং-৭১১৮) ফুটপাতের দোকান থেকে চাঁদা আদায় করেছে এসআই জাফরের নেতৃত্বাধীন কনস্টেবল এনামুল ও শহীদুল।হকাররা জানান, নবাবগঞ্জ বাজারের দক্ষিণে বেড়িবাঁধে গড়ে ওঠা ফুটপাতের চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করেন শাকিল, মোকলেসসহ আরো কয়েকজন।নবাবগঞ্জ বেড়িবাঁধের দুইপাশে শতাধিক হকার রয়েছে। তাদের লাইনম্যান মাহাবুব এসব দোকান থেকে প্রতিদিন দোকানপ্রতি ১৩০টাকা করে চাঁদা আদায় করছে। এসব টাকার মধ্যে লালবাগ থানা পুলিশের জন্য ২০ টাকা ও নবাবগঞ্জ সেকশন ফাঁড়ি পুলিশের জন্য ১০ টাকা বরাদ্দ রয়েছে।১শ হকারের কাছ থেকে দৈনিক গড়ে ১২০০০ হাজার থেকে ১৩০০০ হাজার টাকা উত্তোলন করা হয়।আজ শুক্রবার (১৬ জুলাই,২০২১) বিকেল ৫টার দিকে বেড়িবাঁধে পেট্রোল ডিউটিতে থাকা লালবাগ থানা পুলিশের একটি গাড়ি (ইন; নং-৭১১৮) নবাবগঞ্জ বেড়িবাঁধ সংলগ্ন ফার্ণিচার মার্কেটের সামনে এসে থামে। ওই গাড়ির সামনের আসনে বসেছিলেন এসআই জাফর।গাড়ির পেছনে বসেছিলেন কনস্টেবল এনামুল ও শহীদুল।তখন কনস্টেবল ইশারার মাধ্যমে লাইনম্যানকে ডাকেন। এরপর লাইনম্যান মাহাবুব ২শ টাকা পুলিশ সদস্য এনামুলের হাতে তুলে দেন। একই সময় অপর এক হকারও ওই পুলিশ সদস্যর হাতে ২শ টাকা তুলে দেন।এমন দৃশ্য নজরে এলে বিষয়টি জানতে গাড়ির সামনে যান এই প্রতিবেদক।এরপর এসআই জাফরের কাছে টাকা তোলার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমিতো গাড়ির সামনে বসে আছি। কে কাকে কী কারণে টাকা বা চাঁদা দিয়েছে তা আমি জানিনা। আমি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ি, এমন অনৈতিক কাজে আমি সম্পৃক্ত নই।একপর্যায়ে এসআই জাফর এই প্রতিবেদকের বিস্তারিত নাম-পরিচয় নথিভুক্ত করেন। অপর প্রশ্নে তিনি বলেন,কনস্টেবল কেন টাকা নেবে, তা বোধগম্য নয়।তবে বিষয়টি থানায় গিয়ে দেখবো।এ ব্যাপারে তাৎক্ষণিক লালবাগ থানায় মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে ওসি একেএম আশরাফ উদ্দিন বলেন, ফুটপাতের হাকারদের কাছ থেকে পুলিশকে চাঁদা তোলার কোন নির্দেশনা দেওয়া হয়নি।থানা পুলিশ জনগণের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত।এক প্রশ্নের জবাবে ওসি বলেন, কোন পুলিশ সদস্য ফুটপাত থেকে চাঁদা তুলে থাকলে এর প্রমান বা কোন অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।তখন এই প্রতিবেদক নিজেই ঘটনাস্থলে এমন দৃশ্য দেখেছেন বলে জানালে ওসি প্রতিবেদকের মুঠোফোনে পেট্রোল ডিউটিতে থাকা এসআই জাফরের সঙ্গে কথা বলেন। এরপরই এসআই জাফর সঙ্গীয় ফোস নিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। হকাররা জানান, যদি নিয়মিত মাশোহারা না দেওয়া হয়, তাহলে তাদের ফুটপাতে বসতে দেয় না।এছাড়া নানা অজুহাতে তাদের নাম-ঠিকানা লিখে নিয়ে ফুট মামলা ঠুঁকে দেয় পুলিশ। ফলে ঝামেলা এড়াতে বাধ্য হয়ে নিয়মিত চাঁদা দিয়েই ফুটপাতে দোকানদারি করছেন। একই দৃশ্য দেখা গেছে কামরাঙ্গীরচরের পূর্ব রসুলপুর এলাকায়।গত ১৩ জুলাই রাত সাড়ে ১০টার দিকে মোটরসাইকেলে চেপে ১ থেকে ৯ নং গলিতে চষে বেড়ান এএসআই খলিলুল্লাহ।তিনি প্রতিটি গলির চা দোকানিদের দোকান খোলা রাখতে বলেন। রাতে তিনি দোকানিদের সাথে দেখা করার কথা জানান বলে জানা গেছে। এরপর প্রতি দোকান থেকে উৎকোচ আদায় করেন বলে জানিয়েছেন চা দোকানিরা। এছাড়া প্রতিটি গলির মোড়ে বসা কাঁচামালবাহী প্রতি ভ্যান গাড়ি থেকে প্রতিদিন দুপুরের দিকে ২০/৩০ টাকা করে চাঁদা তুলে নেয় পুলিশ।পুলিশের লাইনম্যান হিসেবে নিয়মিত চাঁদার টাকা তুলেন মিরাজ ও বাদশা।তবে থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান বিষয়টি অস্বীকার করে বলেছেন, কোন পুলিশ চাঁদা বা উৎকোচ আদায় করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।