করোনার ওষুধ: ‘রেমডেসিভির’ ব্যবহারের অনুমোদন যুক্তরাষ্ট্রের

প্রকাশিত: ১:০৩ অপরাহ্ণ, মে ২, ২০২০

করোনা চিকিৎসার জরুরি প্রয়োজনে গতকাল শুক্রবার ‘রেমডেসিভির’ ওষুধ ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের দ্য ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন। গতকাল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এ কথা জানান।

করোনাভাইরাসের পরীক্ষামূলক ওষুধ রেমডেসিভির নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই আশাব্যঞ্জক কথা শোনা গিয়েছিল। গত বুধবার করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে পরীক্ষামূলক ওষুধ রেমডেসিভির নিয়ে আশার কথা বলেছিলেন মার্কিন গবেষকেরা। ওষুধটি নিয়ে একটি ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে ৩০ শতাংশ দ্রুত রোগীর সেরে ওঠার প্রমাণ পাওয়া যায়।

ইনজেকশন পুশ করার মাধ‌্যমে রেমডেসিভিরের কার্যকারিতা এমন কিছু রোগীর ক্ষেত্রে পরীক্ষা করা হয়, যাঁরা ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে নাম লেখান।

বিবিসি অনলাইনের প্রতিবেদনে জানানো হয়, ট্রাম্প বলেছেন, এ ওষুধ করোনাভাইরাস চিকিৎিসায় ব‌্যবহার করা যাবে। ওষুধ প্রস্তুতকারক গিলিয়েডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এই পদক্ষেপকে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে বর্ণনা করেছেন এবং রেমডেসিভিরের ১৫ লাখ ভায়াল দান করবেন।

ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স বলেছেন, আগামী সোমবার হাসপাতালগুলোয় ওষুধ বিতরণ শুরু হবে।

ওষুধটি মূলত ইবোলার চিকিৎসায় তৈরি হয়। সারা বিশ্বের হাসপাতালগুলোর সঙ্গে যুক্ত একটি মার্কিন পরীক্ষায় প্রাথমিক ফলাফলে দেখা গেছে, রেমডেসিভির প্রয়োগে সেরে ওঠার সময় ১৫ দিন থেকে ১১ দিনে নেমে এসেছে। সাধারণ ফ্লুর ক্ষেত্রে ইনফ্লুয়েঞ্জার ওষুধ তামিফ্লু যে প্রভাব ফেলেছে, এটি তার অনুরূপ।

যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ও আমেরিকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকশন ডিজিজেসের পরিচালক অ্যান্টনি এস ফাউসি বলেছেন, তথ্য বলছে, রেমডেসিভির দ্রুত সেরে ওঠার ক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রভাব পরিষ্কার।

নিউইয়র্ক পোস্টের খবরে বলা হয়, গতকাল প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ওষুধ তৈরির প্রতিষ্ঠান গিলিয়েড সায়েন্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ডেন ও’ডেকে নিয়ে রেমডেসিভির অনুমোদনের ঘোষণা দেন।

ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল হিসেবে এই ওষুধের কার্যকারিতার প্রমাণের পর একেবারে আশঙ্কাজনক রোগীদের ক্ষেত্রে রেমডেসিভির ব্যবহৃত হচ্ছিল। তবে এফডিএর অনুমোদনের পর যুক্তরাষ্ট্রে ডাক্তাররা এখন থেকে এই ওষুধ প্রেসক্রাইব করতে পারবেন।

রেমডেসিভিরের অনুমোদন দেওয়ার সময় ট্রাম্প বলেন, তিনি হোয়াইট হাউসের করোনাভাইরাস টাস্কফোর্সের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের সঙ্গে এই ওষুধ ব্যবহারের বিষয়ে কথা বলেছেন।

টাস্কফোর্সের সদস্য অ্যান্টনি ফউসি ও দেবোরাহ ব্রিক্স ছাড়াও এফডিও প্রধান স্টিফেন হাহন ওষুধ অনুমোদনের বিষয়ে সম্মতি দিয়েছেন।

ও’ডে বলেন, ‘হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের জন্য আমরা প্রথম পদক্ষেপ নিচ্ছি। আমরা নিশ্চিত করতে চাই যে এই রোগীদের যেন ওষুধ ঠিকমতো দেওয়া হয়।’

সংস্থাটি এর আগে ঘোষণা করেছিল, তারা বিনা মূল্যে প্রায় ১৫ লাখ ডোজের অনুদান দিচ্ছে।

এএফপির প্রতিবেদন বলছে, গত সপ্তাহে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রকাশিত এক ছোট আকারের পরীক্ষা ও ইবোলা ভাইরাসের বিরুদ্ধে রেমডেসিভির অকার্যকর বলে জানা গিয়েছিল। এ ছাড়া গত বছরের ডিসেম্বরে চীনের উহানে উৎপত্তি হওয়া কোভিড–১৯–এর ক্ষেত্রেও রেমডেসিভিরের সীমিত প্রভাব দেখা গিয়েছিল।

নেচারের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, কোভিড-১৯ সৃষ্টির জন্য দায়ী নভেল করোনাভাইরাস সার্স-কোভ-২–কে প্রভাবিত করার সম্ভাবনা হিসেবে পরীক্ষাগারে চিহ্নিত প্রথম ওষুধগুলোর মধ্যে একটি ছিল রেমডেসিভির। এটি বর্তমান মহামারির জন্য দায়ী সার্স-কোভ -২ ভাইরাসসহ কিছু ভাইরাসের প্রতিরূপ তৈরিতে হস্তক্ষেপ করে। কয়েক সপ্তাহের তথ্য ফাঁস হওয়ার পর এবং ড্রাগের ক্লিনিকাল ট্রায়ালগুলেোর মিশ্র ফলাফলের এক দিন পরে সংবাদটি এল।

ফাউসি বলেন, ওষুধটি এই গবেষণার মতো গুরুতর অসুস্থ রোগীদের জন্য যত্নের এক নতুন মান হয়ে উঠবে। ওষুধটি হালকা অসুস্থ ব্যক্তিদের মধ্যে পরীক্ষা করা হয়নি এবং বর্তমানে একটি হাসপাতালে ইনজেকশনের মাধ্যমে দেওয়া হয়।

জনস্বাস্থ্য সংকট চলাকালে রোগীদের জন‌্য দ্রুত পরীক্ষামূলক ওষুধ, পরীক্ষা ও অন্য চিকিৎসাগত পণ্যগুলোকে দ্রুত উৎপাদনে এফডিএর জরুরি ক্ষমতার অধীনে ওষুধটিকে অনুমোদন দিয়েছে।

সাধারণ সময়ে এফডিএর কাছ থেকে ওষুধের অনুমোদন পেতে সুরক্ষা এবং কার্যকারিতার যথেষ্ট প্রমাণ প্রয়োজন হয়। মনে রাখতে হবে, করোনাভাইরাস চিকিৎসার জন্য এখন কোনো ওষুধ অনুমোদিত নয়, রেমডেসিভিরেরও আনুষ্ঠানিক অনুমোদনের প্রয়োজন হবে।

যুক্তারাষ্ট্রের বর্তমান পরিস্থিতি

লকডাউর পরিস্থিতি কাটাতে দ্রুত সবকিছু খুলে দিতে চাইছেন ট্রাম্প। রেমডেসিভিরের মতো ওষুধ এ ক্ষেত্রে সহায়ক হবে বলে মনে করা হচ্ছে। নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, গতকাল প্রায় এক ডজন রাজ্য সাময়িকভাবে স্থবিরতা কাটিয়ে স্বাভাবিক জনজীবনে ফিরে আসে। ছয় সপ্তাহ আগে আমেরিকাকে স্থবির অবস্থায় নিয়ে আসার পর থেকে প্রথম ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো বড় আকারে চালু হতে শুরু করল।