ক্রীড়া ডেস্ক:
শুক্রবার থেকে শুরু হতে যাওয়া দ্বিতীয় টেস্ট খেলবেন সাকিব, কিন্তু তার পর? তিনি কি দেশে ফিরবেন?– উত্তর জানতে কৌতূহল অনেকেরই। বিসিবি সূত্রের খবর, পাকিস্তান থেকেই ইংল্যান্ড যাচ্ছেন সাকিব। ইংলিশ কাউন্টির সারে ক্লাবের হয়ে খেলবেন তিনি।
বিসিবির চুক্তিভুক্ত ক্রিকেটার সাকিব। তাঁর পাশে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিসিবিও। একাধিক সূত্র থেকে জানা গেছে, সরকার ও আইন বিশেষজ্ঞদের কাছে সাকিবের ব্যাপারে জানতে চাইলে সর্বমহল থেকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কিছুদিন দেশে না ফেরারও পরামর্শ তাদের। সাকিব সহসা দেশে ফিরবেনও না। রাওয়ালপিন্ডিতে দ্বিতীয় টেস্ট শেষ করে পাকিস্তান থেকে ইংল্যান্ড যাবেন কাউন্টি ক্রিকেট খেলতে। ইংলিশ কাউন্টির সারে ক্লাবের হয়ে একটি চার দিনের ম্যাচ খেলবেন তিনি। বিসিবি থেকেও ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে তাঁকে। ৫ থেকে ১৪ সেপ্টেম্বর ছাড়পত্র পেয়েছেন সাকিব। ৯ থেকে ১২ সেপ্টেম্বর সামারসেটের সঙ্গে সারের ম্যাচ।
২০০৯-১০ সালের লিগ মৌসুমে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ইংলিশ কাউন্টিতে খেলেন সাকিব। ওস্টারশায়ারের হয়ে ৮টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলেছিলেন সেবার। ন্যাটওয়েস্ট টি২০ ব্লাস্ট খেলেন ২০১৩ সালে লেস্টারশায়ারে। লম্বা বিরতি দিয়ে আবার ইংলিশ কাউন্টিতে ফিরছেন বাঁহাতি অলরাউন্ডার ভারত সফরের প্রস্তুতি নিতে। কোনো জটিলতা না হলে কাউন্টির ম্যাচ শেষ করে ভারতের বিমান ধরবেন সাকিব। কারণ ১৯ থেকে ২৩ সেপ্টেম্বর ভারতের বিপক্ষে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ।
সাকিবকে নিয়ে জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের অনেকে ফেসবুকে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট শেষ হওয়ার পর মুমিনুল হক, নাজমুল হোসেন শান্তরা কথা বলেছেন সাকিব আল হাসানের হয়ে। টিম বাংলাদেশের সাবেক ও বর্তমান খেলোয়াড়দের সবাই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিবাদী। গতকাল ক্রিকেটার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন (কোয়াব) থেকে দেওয়া বিজ্ঞপ্তিতে সাকিবের প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছে। দেশের ক্রীড়াঙ্গন এভাবে সরব হচ্ছে বিশ্বের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার সাকিবের জন্য। ৫ আগস্ট গার্মেন্টসকর্মী মো. রুবেল হত্যা মামলার হুকুমের ২৮তম আসামি করা হয়েছে যাঁকে। স্বাভাবিকভাবেই হত্যার মতো কোনো মামলায় শিকার হলে সাকিবের মতো কঠিন হৃদয়ের মানুষও বিচলিত হন। তিনি হয়েছেনও। ৩৭ বছর বয়সী এ ক্রিকেটার বুঝতে পারছেন ১৭ বছর ধরে বিশ্বমঞ্চে যে দেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন, দূত হয়ে দেশের পরিচিতি বাড়িয়েছেন; আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িয়ে কতটা ম্লান করে দিয়েছে সে অর্জন। কোয়াব মনে করে, জাতীয় দলের স্বার্থেই ক্রিকেটার সাকিবকে প্রয়োজন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে বিদেশের (কানাডা) ক্রিকেট লিগে খেলছিলেন সাকিব। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার দিনও ম্যাচ খেলেছেন তিনি। মুশফিকুর রহিম পাকিস্তান থেকে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে লিখেছেন, ‘সাকিবকে বাঁহাতি স্পিনার হিসেবে সর্বাধিক উইকেট নেওয়ার রেকর্ড গড়ার জন্য অভিনন্দন। আমি অনেকবার বলেছি এবং আবার বলছি, সাকিবের মতো একজন চ্যাম্পিয়নের সঙ্গে খেলতে পেরে আমি গর্বিত। একজন টিমমেট ও ভাই হিসেবে আমি সাকিবের কঠিন সময়গুলোর সঙ্গী এবং আমি তার বিরুদ্ধে তোলা মিথ্যা অভিযোগের সমর্থন করি না। কারণ আমি জানি, সে কখনোই অমানবিক কাজে লিপ্ত হবে না। আমরা সব সময় তোমার পাশে আছি, বন্ধু।’
আরেক উইকেটরক্ষক ব্যাটার লিটন কুমার দাস লিখেছেন, ‘সাকিব আল হাসান; আমার কাছে যিনি একজন পারফেক্ট টিমম্যান। সতীর্থ হিসেবে তাঁর সঙ্গে ড্রেসিংরুম ভাগ করা আমার ক্যারিয়ারের অন্যতম পাওনা। ক্রিকেটে যে কোনো জিজ্ঞাসায় সাকিব ভাই যেন উত্তরের ঝাঁপি খুলে আগে থেকেই তৈরি। ক্রিকেটের বাইরেও তিনি আমার কাছে বড্ড আপন। সাকিব আল হাসান, ছবিতে ব্যাটটা যেমন উঁচু আছে, মাথাটাও সব সময় উঁচুতেই থাকবে। ছবির মতো আমরা হাততালি দেব আপনাকে উঁচুতে উঠতে দেখে।’ সাকিবকে নিয়ে এ রকম আবেগি স্ট্যাটাসে ছেয়ে গেছে ফেসবুক।