কাজীপুরে হাতে তৈরি হচ্ছে বাহারি নকশার টুপি

প্রকাশিত: ১:২০ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২২, ২০২৫

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি:

চলছে শীতকাল। আর এই শীতের সকালে রোদে বসে হাত দিয়ে সুই, সুতার দ্বারা টুপি বুনছেন গ্রামের নারীরা। এমন দৃশ্যের দেখা মেলে সিরাজগঞ্জ জেলার কাজীপুর উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম, পাড়া, মহল্লায়। উপজেলার চালিতাডাঙ্গা ইউনিয়নের চর ভানুডাঙ্গা গ্রামে গিয়ে দেখা গেল স্কুলপড়ুয়া মেয়ে, মধ্যবয়সি নারী, বৃদ্ধ নারী সবাই বসে সকালের রোদ পোহাচ্ছেন। আর সুই, সুতার দ্বারা তৈরি করছেন বিভিন্ন ধরনের বাহারি নকশার টুপি।

চর ভানুডাঙ্গার টুপি বুনানো স্বপ্না বেগম বলেন, ‘১০/১২ বছর ধরে এই কাজ করি। অভাবের সংসারে নিজের এবং বাচ্চাদের কাপড় চোপর থেকে শুরু করে তাদের হাত খরচ, কাঁচা বাজারের খরচ মেটাই এই টুপি বিক্রির টাকা দিয়ে।’ একই গ্রামের আছমা খাতুন বলেন, ‘আমি বাড়িতে গরু ছাগল পালন করি, গৃহকর্মের কাজ শেষ করে টুপি তৈরির কাজ করি। এর থেকে যা পাই, তাতে সংসারের কিছুটা খরচ মিটে যায়।’

৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থী মিতা বলেন, ‘আমি লেখাপড়ার পাশাপাশি টুপি তৈরির কাজ শিখেছি মা-চাচিদের কাছে। এখন নিজেই টুপি তৈরি করছি। এর থেকে যেটুকু অর্থ আসে, তাতে আমার লেখাপড়ার ব্যয় বহন হয় ও আমার নিজের সব প্রয়োজন মিটে যায়।’

চালিতাডাঙ্গা গ্রামের বিধবা নারী মরিয়ম খাতুন বলেন, ‘আমার স্বামীর মৃত্যুর পর হিংস্র যমুনায় সব হারিয়ে দুর্বিষহ জীবন যাপন করছিলাম। এই টুপি বুননের কাজ করছি। ভাইদের সহায়তা আর এই দিয়েই সংসারের যাবতীয় খরচ বহন করছি।’

তারা আরও বলেন, ‘মূলত বগুড়া থেকে পাইকাররা এসে কাজীপুর থেকে টুপিগুলো কিনে নিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রি করেন। বর্তমানে তৈরিকৃত টুপিগুলোর মধ্যে চান্দাফুল ৪৫ টাকা, ঢেওফুল ৪০ টাকা, মেহেদিপাতা ১০৫ টাকা, করলার চাক ১১০ টাকা, মাকরসা ৬৫ টাকা। টুপি তৈরি করে প্রতি জনের মাসিক আয় হয় কাজভেদে ১ হাজার থেকে ৪ হাজার টাকার বেশি। কিন্তু সুতার দাম বেশি হওয়ায় আমাদের কিছুটা সমস্যা দেখা দিয়েছে। বর্তমানে চিকন সুতার দাম ৭০ টাকা, মোটা সুতার দাম ৭৫-৮০ টাকা। চিকন সুতার দ্বারা টুপি তৈরি হয় সবচেয়ে বেশি।’ টুপি কারিগররা সরকারের শুভদৃষ্টি কামনাসহ প্রশিক্ষণ প্রদানের আহ্বান জানান।

টুপি ব্যবসায়ী আবুল কালাম জানান, কাজীপুরে তৈরিকৃত টুপির মান অনেক ভালো। তাই সারা দেশব্যাপী এর চাহিদা রয়েছে।

কাজীপুর উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা চিত্রা রানী সাহা জানান, উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে নারীদের টুপি তৈরির ব্যাপারে খোঁজখবর রাখা হচ্ছে। তাদের আর্থিকভাবে লাভবান করার জন্য টুপি তৈরির প্রশিক্ষণ প্রদানসহ সব ধরনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অভিহিত করা হয়েছে। ব্যবস্থাগ্রহণ করা হলে অনেক অসচ্ছল নারী টুপি তৈরি করে অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাবেন-এ আশাবাদও ব্যক্ত করেন তিনি।