কারাগারে থেকেও জুলাই হত্যাকাণ্ডে মামলার আসামি বিএনপি নেতা

প্রকাশিত: ১১:১৫ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ১৯, ২০২৪

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি:

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে থেকেও খুনের ঘটনায় দায়ের করা একটি হত্যা মামলায় আসামি হয়েছেন সিদ্ধিরগঞ্জের নাসিক ২নং ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মোজাম্মেল হোসেন। এই ঘটনায় বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে ক্ষোভ।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে বিএনপি নেতা মোজাম্মেল হোসেনকে গত ১৭ জুলাই রাতে সিদ্ধিরগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার করে নারায়ণগঞ্জ ডিবি পুলিশ। ১৮ জুলাই নারায়ণগঞ্জ সদর থানার পুলিশ ২০২২ সালের ৩০ নভেম্বরের একটি গায়েবি নাশকতা ও বিস্ফোরক মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাকে আদালতের মাধ্যমে তাকে কারাগারে পাঠায়। এরপর ৬ আগস্ট মোজাম্মেল হোসেন কারাগার থেকে মুক্তি পায়। এদিকে গত ২১ জুলাই হিরাঝিল এলাকায় চলমানে ছাত্র আন্দোলনে গিয়ে গুলিতে রফিকুল ইসলাম (২৪) নামে একজন নিহত হন।

এ ঘটনায় নিহতের মা মা সুফিয়া বেগম বাদী হয়ে গত ১৫ অক্টোবর নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যজিস্ট্রেট আদালতে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। উক্ত মামলায় মোজাম্মেল হোসেনকে ৪০নং আসামি করা হয়েছে। এছাড়া শেখ হাসিনাকে প্রধান আসামি করে দৈনিক যুগান্তরের গাজীপুর দক্ষিণ সাব্বির আহমেদ সুবীর ও বাঞ্চারামপুর প্রতিনিধি সনি আক্তার সুচিসহ ১০৭ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা আরও ১০০/১২০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
মামলায় অভিযুক্ত বিএনপি নেতা মোজাম্মেল হোসেন বলেন, ১৫ বছর ধরে ফ্যাসিস্ট হাসিনার বিরুদ্ধে আন্দোলনে রাজপথে ছিলাম। জুলাই আন্দোলনে দলের নির্দেশে সক্রিয় থাকায় ১৭ জুলাই রাত ১১টায় নারায়ণগঞ্জের ডিবি পুলিশের একটি দল আমাকে মিজমিজি এলাকা থেকে তুলে নিয়ে ডিবি কার্যালযে রাখে। ডিবি পুলিশ পরদিন আমাকে নারায়ণগঞ্জ সদর থানায় সোপর্দ করে। সদর থানা পুলিশ ২০২২ সালের ৩০ নভেম্বর একটি গায়েবি নাশকতা ও বিস্ফোরক মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আমাকে কোর্টে পাঠায়। ওই মামলার এজাহারে আমার নাম ছিল না। তবুও কোর্টের নির্দেশে আমাকে কারাগারে পাঠানো হয়। ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর বর্তমান সরকারের নির্দেশে ৬ আগস্ট আরও অনেকের মতো আমিও জেল থেকে ছাড়া পাই। এখন দেখি ২১ জুলাই হিরাঝিলে গুলিতে নিহত রফিকুল ইসলাম নামের হত্যা মামলায় আমাকে আসামি করা হয়েছে। গায়েবি মামলায় যে সময়ে আমি জেলে বন্দি ওই সময়ে হত্যার ঘটনায় যদি নতুন বাংলাদেশে আসামি হই তাহলে কোথায় ন্যায় বিচার চাইব?

মোজাম্মেল দাবি করেছেন, এই ঘটনায় মামলা দুর্বল করার পরিকল্পনা রয়েছে। কারা এর সঙ্গে জড়িত তা চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে হবে।
এ ব্যাপারে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আল মামুন বলেন, আদালতের নির্দেশে আমরা মামলাটি এফআইআর হিসেবে রেকর্ড করেছি। তদন্তের সময়ে বিষয়টি আমরা দেখব।

এ বিষয়ে মামলার বাদী নিহত রফিকুল ইসলামের মা সুফিয়া বেগমের ফোনে একাধিকার ফোন করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। মামলার ১নং স্বাক্ষী আজহার হোসেন বলেন, এটা ভুল হয়ে গেছে। আদালতের মাধ্যমে ঠিক করে দেওয়া হবে।

এ ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য অধ্যাপক মামুন মাহমুদ বলেন, একটি চক্র পরিকল্পিতভাবেই বিএনপির ও অঙ্গ সংগঠনের কয়েকজন নেতাকে জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিভিন্ন মামলায় আসামি করার খবর পাচ্ছি। মোজাম্মেল একজন দলের পরীক্ষিত নেতা। তাকে আসামি করা হয়েছে। এতে মামলাগুলো দুর্বল হওয়ার আশঙ্কা থাকে। আসল অপরাধীরা এর সুযোগ নিতে চাইবে। যারা এই অপকর্মের হোতা তাদের চিহ্নিত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।