কালবৈশাখীর তাণ্ডবে বরিশাল বিভাগে ২৫ লাখ মানুষ বিদ্যুৎহীন
নিউজ পোস্ট বিডি নিউজ পোস্ট বিডি
নিউজ পোস্ট বিডি
জেলা প্রতিনিধি,বরিশালঃ
বরিশাল বিভাগের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া কালবৈশাখীর আঘাতে বিভাগের প্রায় ৮ লাখ ২০ হাজার গ্রাহকের বিদ্যুতের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এছাড়াও বেশ কয়েকটি জেলায় বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনে গাছ পড়ে লাইন ছিড়ে যায়। ঝড়ে ৯ জন নিহতের পাশাপাশি ৩ শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন। এ ছাড়া বিভাগের ২৫ লাখ মানুষ দুর্ভোগে রয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিদ্যুৎ সরবারহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, দ্রুত সময়ের মধ্যে বিচ্ছিন্ন সংযোগগুলো মেরামত করা হবে। তবে পুরোপুরি সমস্যার সমাধানে আরও দু-একদিন সময় লাগতে পারে।ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি বিভাগের ছয় জেলায় বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে থাকে। এরমধ্যে ওজোপাডিকোর ২ লাখ ১৯ হাজার এবং পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির গ্রাহক রয়েছে ১৯ লাখের বেশি।
বরিশাল নগরীর আমানতগঞ্জের বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম বলেন, শুধু বৈশাখী ঝড়েই নয় কয়েকদিন ধরেই লোডশেডিং চলছে। বিদ্যুৎ অফিস থেকে জানানো হয়েছে মেগাওয়াট ঘাটতি রয়েছে।পাথরঘাটা উপজেলার কালমেঘা ইউনিয়নের বাসিন্দা নাজনীন বেগম বলেন, পল্লী বিদ্যুতের আওতায় আমরা যারা আছি তারা লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ। বিদ্যুৎ না থাকাটা সাধারণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিবার বিদ্যুৎ গেলে এক-দেড় ঘণ্টায়ও আসে না। বৈশাখী ঝড়ে আমাদের বিদ্যুৎ লাইন ছিড়ে গেছে। কবে ঠিক হবে তা বলতে পারছি না।
ভোলা জেলার মনপুরা উপজেলার ৩ নং উত্তর সাকুচিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা মোতালেব হাওলাদার বলেন, মুদি দোকানে ফ্রিজে কিছু জিনিস রেখেছিলাম। কিন্তু লোডশেডিং হওয়ায় ফ্রিজের আইসক্রিমসহ ঠান্ডাজাতীয় খাবার গলে গেছে।ওজোপাডিকো পরিচালন ও সংরক্ষণ সার্কেলের বরিশালের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আব্দুল মজিদ বলেন, ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির আওতায় পিরোজপুরে ২০ হাজার, ঝালকাঠিতে ৫৯ হাজার ও বরিশালে ১ লাখ ৪০ হাজার গ্রাহক রয়েছে। প্রতিদিন আমাদের ফিডারে ১১০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা থাকে। তবে আমরা পাচ্ছি ৮০ থেকে ৯০ মেগাওয়াট।
তিনি বলেন, গতকাল অন্যজেলায় কালবৈশাখী হলেও পিরোজপুরে ঘূর্ণিঝড় হয়েছে। এতে পিরোজপুরে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আমি ঘটনার পরপরই সেখানে গিয়েছিলাম। তখন থেকেই নিরলস কাজ করে যাচ্ছে কর্মীরা। কিন্তু এখনো সব সংযোগ দেওয়া সম্ভব হয়নি। মঙ্গলবারের আগে সবগুলো লাইন ঠিক করা সম্ভব হবে না।
ওজোপাডিকো বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ পিরোজপুরের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী হাবিবুর রহমান বলেন, পিরোজপুরো মোট ২০ হাজার গ্রাহক রয়েছে। ঝড়ে ২০ হাজার গ্রাহকই ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। ২৪ ঘণ্টায় কেবল পিরোজপুর শহরকে বিদ্যুতের আওতায় আনা হয়েছে। এখনো ডিসি অফিস, এসপি অফিস, সার্কিট হাউজে সংযোগ দেওয়া সম্ভব হয়নি। শহরে শতভাগ নিশ্চিত করে উপজেলাগুলোতে সংযোগ দেওয়া হবে।
ওজোপাডিকো বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ ঝালকাঠির উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আব্দুস ছালাম বলেন, ঝালকাঠির লাইনে বিশেষ সমস্যা হয়নি। শুধু ঝালকাঠির সঞ্চালন লাইনে একটা বড় গাছ পড়েছিল। তা এক ঘণ্টার মধ্যে সরিয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ স্বাভাবিক করা হয়েছে।পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি বরিশলে জোনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, বিভাগের ছয় জেলা মিলিয়ে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির গ্রাহক সংখ্যা ১৯ লাখ। ৭ এপ্রিল কালবৈশাখী ঝড়ে প্রায় ৮ লাখ গ্রাহকের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এরমধ্যে ৬ লাখের সংযোগ দেওয়া হয়েছে। বাকি দুই লাখের সংযোগ দিতে কাজ চলছে। আশা করছি আজকে সন্ধ্যার মধ্যে অধিকাংশ স্থানে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে।
উল্লেখ্য, রোববার সকালে বরিশাল বিভাগের উপকূলীয় জেলা ভোলা, ঝালকাঠি, পিরোজপুর ও পটুয়াখালীতে কালবৈশাখী আঘাত হানে। এতে ভোলায় দুইজন, পটুয়াখালীতে দুইজন, ঝালকাঠিতে তিনজন ও পিরোজপুরে দুইজন প্রাণ হারান। ঝড়ে কয়েক হাজার ঘর-বাড়ি ও ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।