‘কুকুর’ সম্বোধন করা সেই শিক্ষকের আত্মহত্যা

৪ আসামি গ্রেপ্তারে ৭২ ঘন্টার আল্টিমেটাম

প্রকাশিত: ৮:০২ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ৮, ২০২৪

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি:

টাঙ্গাইলের সখীপুরে এক শিক্ষককে ‘কুকুর’ বলে সম্বোধন করার পরদিন শিক্ষকের আত্মহত্যার ঘটনায় স্থানীয় আওয়ামী লীগের এক নেতাসহ চারজনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) রাতে শিক্ষককন্যা নিপা আক্তার বাদী হয়ে আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগ এনে সখীপুর থানায় মামলাটি দায়ের করেন।

মামলায় অভিযুক্তরা হলেন- কালিয়া ইউনিয়ন আ. লীগের সদস্য মোস্তফা কামাল ওরফে কামাল মাস্টার, ফেইসবুকে পোস্টদাতা খাইরুল ইসলাম, স্থানীয় বাসিন্দা হামিদুল ইসলাম ও সজীব হোসেন।

শিক্ষকের আত্মহত্যার প্ররোচনাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার দাবিতে বুধবার (৬ নভেম্বর) বিকালে সখীপুর প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক পরিবার। এতে উপজেলায় কর্মরত পাঁচ শতাধিক শিক্ষক যোগ দেন। প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে শিক্ষকের মৃত্যুর দায়ে অভিযুক্ত আসামিদের গ্রেপ্তারে ৭২ ঘন্টার আল্টিমেটাম দেওয়া হয়। অন্যথায় থানা ঘেরাওসহ কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।

এছাড়া, আগামী রোববার থেকে শিক্ষকরা তিনদিন কালো ব্যাজ ধারণ কর্মসূচি পালন করবেন।

উল্লেখ্য, ওই শিক্ষককে ‘কুকুর’ বলে সম্বোধন করে ছবি দিয়ে যৌন হয়রানির অভিযোগ তুলে গত সোমবার ফেইসবুকে একটি পোস্ট করেছিলেন খাইরুল ইসলাম নামের এক শিক্ষার্থী। পরে বিকালে বাজারে ওই শিক্ষককে সবার সামনে অপমান-অপদস্থও করা হয়। পরদিন মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে নিজ বাড়ির রান্নাঘর থেকে ওই শিক্ষকের ‘ঝুলন্ত’ মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। রাত সাড়ে ১০টার দিকে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। পরিবারের অভিযোগ ছিল অপমান-অপবাদ সইতে না পেরেই মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে ওই শিক্ষক আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছেন।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানা গেছে, কয়েক বছর আগে ছাত্রীদের যৌন হয়রানি করেছেন, এমন অভিযোগ তুলে গত ২৭ আগস্ট খাইরুল ইসলামের নেতৃত্বে ওই শিক্ষকের শাস্তি দাবি করে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করা হয়। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণে কর্মসূচি পালন করলেও স্থানীয় একটি উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রীদের দিয়ে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করানো হয়। ওই দিন বিকেলে খাইরুল উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দেন। ওই অভিযোগের প্রেক্ষিতে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয় দেলদুয়ার উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা গৌর চন্দ্রকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়। মঙ্গলবার তদন্তের জন্য তার ঘটনাস্থলে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তদন্তের দিনই সকাল ১১টায় ওই শিক্ষকের ঝুলন্ত মরদেহ পাওয়া যায়।

গত সোমবার (৪ নভেম্বর) দুপুরে ওই শিক্ষকের ছবি দিয়ে ফেইসবুকে পোস্ট করেন খাইরুল। একই দিন বিকেলে স্থানীয় বাজারে লোকজনের সামনে শিক্ষককে অপমান ও অপদস্থও করেন। ফেইসবুক পোস্টে খাইরুল লেখেন, ‘এই কুকুরকে চিনে রাখেন। শিক্ষকতার নামে প্রাইমারি শিক্ষার্থীদের সাথে পড়ানোর নামে বিকৃত যৌনাচার করত। এর শাস্তি অবধারিত। এর আগে পেছনে যারা সাহায্য করতেছে। তাদের লিস্ট করা হচ্ছে।’

সখীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাকির হোসেন বলেন, শিক্ষকের মৃত্যুর ঘটনায় আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে থানায় মামলা হয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশ মাঠে নেমেছে।