নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
আজকে দেশের উপজেলা নির্বাচনের কেন্দ্রগুলো খাঁ খাঁ করছে। কোনও ভোটার সেখানে যায়নি বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ।বুধবার (৮ মে) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে ‘রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধারা’ আয়োজিত ‘বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি ও গণস্বাস্থ্যকেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর স্মরণে আয়োজিত আলোচনা সভা’য় তিনি এসব কথা বলেন।
মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, আজকে দেশে উপজেলা নির্বাচন হচ্ছে। টেলিভিশনে দেখাচ্ছে, কেন্দ্রগুলো খাঁ খাঁ করছে। কোনও ভোটার সেখানে যায়নি। কেন এই অবস্থা হলো? কেন আজকে দেশের মানুষ ভোট দিতে পারে না? কেন মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার বিলুপ্ত হলো? কেন দেশে আইনের শাসন নাই, মৌলিক অধিকার নাই? যে লক্ষ্য অর্জনের জন্য ডা. জাফরুল্লাহ ও আমরা যুদ্ধ করেছিলাম— কোথায় গেলো সেই সামাজিক মূল্যবোধ, মানবিক মর্যাদার মূল্য, সবার জন্য সুবিচার? বর্তমান সরকারের দুঃশাসনের কারণে বাংলাদেশ থেকে এসব বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে। তাই আজকে আবার দরকার ডা. জাফরুল্লাহ মতো ব্যক্তিদের।
তিনি বলেন, অত্যন্ত দুঃখের বিষয় আজকে বাংলাদেশে সব প্রতিবাদী কণ্ঠকে স্তব্ধ করে দেওয়া হয়েছে। গুম, খুন ও দুর্নীতির কারণে আমরা একটা নিচু জাতিতে পরিণত হয়েছি। আজকে সবাই আছে হালুয়া-রুটির চিন্তায়, আর রাজনৈতিক দলগুলো আছে ক্ষমতার চিন্তায়। কীভাবে ক্ষমতায় যাওয়া যাবে, আর কীভাবে ক্ষমতায় যাওয়া যায়। ৭১ সালে যুদ্ধ হয়েছিল গণতন্ত্রের জন্য। আমাদের সেই যুদ্ধ কি ব্যর্থ হয়ে গেলো?
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে স্মরণ করে তিনি বলেন, ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী আমাদের স্মরণীয় বরণীয় একজন ব্যক্তিত্ব। তিনি একজন বিচিত্র ব্যক্তি। তিনি কোনও দল করতেন না। তার মতো স্পষ্টভাষী ব্যক্তি আমার চোখে তেমন একটা পড়েনি। যেটিকে তিনি ন্যায্য মনে করতেন, সেটিকে তিনি নিঃসংকোচে উচ্চারণ করতেন। তার কথা যখন আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে যেতো, তখন আমরা বিএনপির সবাই হাততালি দিতাম। আবার তার কথা যখন বিএনপির বিরুদ্ধে যেতো, তখন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা খুব উল্লাসিত হতো। যখন যা বলার প্রয়োজন তিনি তখন সেটা নির্ভয়ে নিঃসংকোচে বলেছেন। তার চোখের সামনে ছিল দেশ। তিনি দেশের স্বার্থে কথা বলেছেন। জনগণকে লক্ষ্য করেই তিনি বক্তব্য রাখতেন।
বিএনপির এই ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, বাংলাদেশের সমাজ আজকে একটি বন্ধ্যা সমাজ, নষ্ট হয়ে গিয়েছে। রাজনৈতিক অঙ্গনতো অনেক আগেই নষ্ট হয়ে গিয়েছে। রাজনীতিবিদরা কখনও ডা. জাফরুল্লাহকে পছন্দ করতেন না। তারা স্পষ্টবাদী লোক কখনও পছন্দ করেন না। তারা সবাই নিবেদিত ক্রীতদাস পছন্দ করেন।
মেজর অব. হাফিজ বলেন, ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী ছিলেন একজন গণতন্ত্রমনা মানুষ। গণতন্ত্রের স্বার্থে তিনি দল মতের ঊর্ধ্বে উঠে সব সময় ন্যায্য কথা বলেছেন। যে স্বাধীনতা অর্জনের জন্য তিনি সবকিছু ফেলে লন্ডন থেকে বাংলাদেশে ছুটে এসেছিলেন, সেই গণতন্ত্র আজকে দেশ থেকে নির্বাসিত।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বলেন, অনেকে বলেন— তিনি (ডা. জাফরুল্লাহ) বিএনপিপন্থী বুদ্ধিজীবী ছিলেন। কিন্তু না, তিনি কোনও পন্থার বুদ্ধিজীবী ছিলেন না। তিনি ছিলেন বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবী। তিনি বাংলাদেশের পক্ষে ছিলেন, গণতন্ত্রের পক্ষে ছিলেন, মানুষের মত প্রকাশের পক্ষে ছিলেন। জাফরুল্লাহ চৌধুরী তীব্রভাবে সবার মধ্যে বেঁচে থাকবেন। যতদিন আমি কাজ করবো, আমার মতো অন্যরা কাজ করবে,ন তত দিন তিনি তীব্রভাবে বেঁচে থাকবেন।
আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরু। সভায় উপস্থিত ছিলেন, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, এবি পার্টির সদস্য সচিব মুজিবুল হক মঞ্জু, জাসদের স্থায়ী কমিটির সদস্য নাসিরুল হক, বিএনপির নির্বাহী কমিটি সদস্য মিজানুর রহমান প্রমুখ।