ডেস্ক রিপোর্ট:
ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস সম্প্রতি যে ভয়াবহ আক্রমণ চালিয়েছে, সেটিকে নিউইয়র্কের টুইন টাওয়ার হামলার (৯/১১) সঙ্গে তুলনা করেছে ইসরায়েল। এই হামলার ‘মাস্টারমাইন্ড’ মোহাম্মদ দেইফ একে অভিহিত করেছেন ‘আল আকসার বন্যা’ হিসেবে, যেটি আল আকসা মসজিদে ইসরায়েলের অভিযানের প্রতিশোধের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
হামলার পর অনেকরই প্রশ্ন- সীমিত সক্ষমতা নিয়ে এত বড় পরিসরে হামলা কীভাবে চালাল হামাস? সংগঠনটির শক্তিমত্তা আসলে কোথায়? এ হামলার মূল পরিকল্পনাকারী বা মাস্টারমাইন্ড আসলে কে?
ইসরায়েলের ভূখণ্ডে মাত্র ২০ মিনিটে হামাসের হাজার পাঁচেক রকেট নিক্ষেপের পরপরই একটি অডিও ক্লিপ ছড়িয়ে পড়ে। এতে কথা বলতে শোনা যায় হামাসের কমান্ডার মোহাম্মদ দেইফকে।
দেইফকে ইসরায়েল সাতবার হত্যাচেষ্টা করেছে। এর মধ্যে সর্বশেষ ২০২১ সালেও তাকে হত্যার চেষ্টা চালানো হয়েছে। ব্যক্তি হিসেবে দেইফ কথা বলেন কম, প্রকাশ্যেও আসেন না। ফলে শনিবার হামাসের টিভি চ্যানেল যখন ঘোষণা করে দেইফ কথা বলবেন, ফিলিস্তিনিরা বুঝেছে উল্লেখযোগ্য কিছু ঘটতে চলেছে।
দেইফ একটি রেকর্ড বক্তৃতায় বলেন, ‘আজ আল আকসার ক্রোধ, আমাদের জনগণ ও জাতির ক্রোধ বিস্ফোরিত হচ্ছে। আমাদের মুজাহেদিন (যোদ্ধা), আজ তোমাদের দিন অপরাধীকে বোঝানো যে, তার শেষ সময় এসেছে।’
দেইফের ছবিও আছে মাত্র তিনটি। একটি তার ২০ বছর বয়সের, অন্যটি মুখোশ পরা। তৃতীয়টি হচ্ছে তার ছায়াচিত্র, যেটি অডিও টেপটি সম্প্রচারের সময় ব্যবহার করা হয়েছে।
দেইফের অবস্থান কেউ জানে না। যদিও সম্ভবত তিনি গাজার সুড়ঙ্গের গোলকধাঁধায় থাকতে পারেন। ইসরায়েলের একটি নিরাপত্তা সূত্র বলছে, দেইফ হামলার পরিকল্পনা ও পরিচালনার সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিল।
হামাসের ঘনিষ্ঠ সূত্রটি রয়টার্সকে বলেছে, হামাসের আল কাসাম ব্রিগেড পরিচালনা করেন দেইফ। গাজায় হামাসের নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ারের সঙ্গে যৌথভাবে ইসরায়েলের হামলার পরিকল্পনা করেছেন তিনি; তবে হামলার মূল কারিগর কে, সেটি পরিষ্কার।
‘মাথা দুইটা, কিন্তু মাস্টারমাইন্ড একজন’, বলছে সূত্রটি। এই অভিযানের তথ্য কেবল কয়েকজন হামাস নেতাই জানতেন।
মক্কা ও মদিনার পর আল–আকসা মুসলিমদের কাছে সবচেয়ে পবিত্র জায়গা। ২০২১ সালের মে মাসে আল–আকসায় অভিযান চালায় ইসরায়েল। হামাসের সূত্র জানায়, ওই হামলায় ১ হাজার ২০০ জনের বেশি মানুষের প্রাণ গিয়েছিল। তখন থেকে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়া পরিকল্পনা করছিলেন দেইফ।
মোহাম্মদ দেইফের জন্ম ১৯৬৫ সালে, খান ইউনিস শরণার্থীশিবিরে। ১৯৪৮ সালের আরব–ইসরায়েল যুদ্ধের পর এই শরণার্থীশিবির প্রতিষ্ঠিত হয়। দেইফের নাম ছিল মোহাম্মদ মাসরি। ১৯৮৭ সালে প্রথম ইন্তিফাদা শুরুর পর তিনি হামাসে যোগ দেন। তখন তাঁর নাম হয় মোহাম্মদ দেইফ।
১৯৮৯ সালে ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন দেইফ। তখন ১৬ মাস কারাগারে ছিলেন তিনি। হামাসের সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে। সূত্রটি আরও জানায়, ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব গাজা থেকে বিজ্ঞান বিষয়ে ডিগ্রি নিয়েছেন দেইফ। পদার্থ, রসায়ন এবং জীববিজ্ঞান বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন তিনি। তবে নানা বিষয়ে তার আগ্রহ ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক কমিটির প্রধান ছিলেন। মঞ্চে অভিনয় করেছেন।
গাজায় হামাসের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় অসংখ্য টানেল বা সুড়ঙ্গ রয়েছে। এ নেটওয়ার্ক উন্নয়নে কাজ করেছেন দেইফ। এ ছাড়া তিনি হামাসের বোমা বানানোর প্রকল্পে ভূমিকা রেখেছেন। কয়েক দশক ধরে ইসরায়েলের মোস্ট ওয়ান্টেড তালিকায় দেইফের নাম রয়েছে।