কোন পথে যাবে বিশ্ববাণিজ্য

প্রকাশিত: ১০:৩৬ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ৭, ২০২৪

ডেস্ক রিপোর্ট:

নির্বাচনী প্রচারণায় এর আগে শিকাগোর ইকোনমিক ক্লাবে ভক্তদের উদ্দেশে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছিলেন, ‘আমার দৃষ্টিতে, অভিধানে সবচেয়ে সুন্দর শব্দ হচ্ছে ট্যারিফ।’ তাঁর এমন বাণীর পরপরই এ নিয়ে শুরু হয় জোর চর্চা। সবার মনেই প্রশ্ন জাগে, দ্বিতীয়বার হোয়াইট হাউসে বসতে যাওয়া ট্রাম্পের এ কথা বিশ্ববাসীর জন্য কী বার্তা বহন করছে। তবে ট্রাম্প-ট্যারিফ যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ‘হিতে বিপরীত’ হতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

সে সময় এবিসি নিউজের এক বিশ্লেষণের শিরোনাম করা হয়, ট্রাম্পের শুল্কনীতি কি বৈশ্বিক বাণিজ্যযুদ্ধ উস্কে দেবে? অর্থনীতিবিদরা জানিয়েছেন, ট্রাম্পের ট্যারিফ প্রস্তাবনা নিশ্চিতভাবে বিশ্বব্যাপী বাণিজ্যযুদ্ধ ডেকে আনবে। যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানিকারকদের পণ্য বিক্রি কমিয়ে দেবে। এসব কারণে বিশ্বের পয়লা নম্বর অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্রে শুরু হতে পারে চাকরি ছাঁটাই। অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির মুখে পড়তে পারে নানান বিধিনিষেধের লাগাম।
মার্কিন বাণিজ্যনীতি বিশেষজ্ঞ ও নিউ হ্যাম্পশায়ারের ডার্টমাউথ কলেজের অর্থনীতির অধ্যাপক ডগলাস ইরভিন এবিসি নিউজকে বলেন, আপনি যদি অন্য দেশের পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করেন, তাহলে তারাও আপনার দেশের পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করবে। গত ১৫ অক্টোবর শিকাগোর ইকোনমিক ক্লাবে ট্রাম্প বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি করা পণ্যের ওপর শুল্কের হার তিনি ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়ে দিতে পারেন।

অর্থনীতিবিদদের আশঙ্কা, অন্য দেশগুলোও যদি মার্কিন পণ্যের ওপর পাল্টাপাল্টি শুল্ক আরোপ শুরু করে, তাহলে বিশ্ববাসীকে বাণিজ্যযুদ্ধের দ্বিতীয় ধাক্কা মোকাবিলা করতে হবে। ওয়াশিংটন ডিসির আমেরিকান ইউনিভার্সিটির অর্থনীতিবিদ কারা রেইনল্ডস বলেন, হয়তো দেখবেন যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানি কমে গেছে। এটি তখন কর্মসংস্থানে বিরূপ প্রভাব ফেলবে। বৈশ্বিক বাণিজ্যযুদ্ধে পণ্য উৎপাদন ও কৃষি খাত ব্যাপকভাবে ঝুঁকিতে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তিনি। প্রথমবার ক্ষমতায় এসে ট্রাম্প যখন আমদানি করা পণ্যে শুল্ক আরোপ করেছিলেন, তখন চীন, কানাডা ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন সেই দেশটির বিরুদ্ধেও পাল্টা ব্যবস্থা নিয়েছিল।
গতকাল বুধবার দ্য গার্ডিয়ান বিশেষজ্ঞদের বরাত দিয়ে জানায়, ট্রাম্পের ট্যারিফ ব্রিটেনের প্রবৃদ্ধি অর্ধেক কমিয়ে দেবে। বাড়িয়ে দেবে পণ্যের দামও।

প্রতিবেদনে বলা হয়, দ্য ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ইকোনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল রিসার্চ (এনআইইএসআর) জানিয়েছে, রিপাবলিকান প্রার্থীর রক্ষণশীল নীতি মূল্যস্ফীতির পাশাপাশি ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের সুদের হার আরও বাড়িয়ে দেবে। এনআইইএসআর বিশ্লেষক আহমাদ কায়া বলেন, ‘ব্রিটেন ছোট ও উদার অর্থনীতির দেশ। অন্যান্য দেশের মতো এই দেশটিও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’

সোমবার রয়টার্স জানায়, অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, ট্রাম্পের সবচেয়ে আলোচিত শুল্কনীতি যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি বাণিজ্যকে ১৯৩০-এর দশকে ঠেলে দিতে পারে। সে সময় দেশটিতে মূল্যস্ফীতি বেড়ে গিয়েছিল। ওয়াশিংটন-বেইজিং বাণিজ্য ধসে পড়েছিল। সবাই জানেন, যুক্তরাষ্ট্রে যে প্রতিষ্ঠান পণ্য আমদানি করবে, তাকে শুল্ক পরিশোধ করতে হবে। সেই প্রতিষ্ঠান হয় মুনাফা কমাবে, নয়তো শুল্কের বোঝা চাপিয়ে দেবে ক্রেতার ওপর।