কোরবানির পশুর বর্জ্য অপসারণ নিয়ে কঠোর হুঁশিয়ারি মন্ত্রীর
নিউজ পোস্ট বিডি নিউজ পোস্ট বিডি
নিউজ পোস্ট বিডি
নিজস্ব প্রতিবেদক:
আসন্ন ঈদুল আজহায় পশু কোরবানির পরেরদিন সূর্য উদয়ের আগেই বর্জ্য অপসারণ করার নির্দেশনা দিয়েছেন স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন সমবায় মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী তাজুল ইসলাম। এরপর যেন কোথাও কোনো ধরনের বর্জ্য না থাকে সেই বিষয়েও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।বৃহস্পতিবার (৩০ মে) দুপুরে সচিবালয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ‘ঈদুল আযহা উপলক্ষ্যে পশুর হাট ব্যবস্থাপনা, নির্দিষ্ট স্থানে পশু কোরবানির বাস্তবায়ন করা ও কোরবানির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা’ নিয়ে সার্বিক প্রস্তুতি পর্যালোচনা সভায় তিনি এ নির্দেশনা দেন।
এ সময় ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম, দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রতিনিধি, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের জায়েদা খাতুনসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বলেন, আসন্ন কোরবানির ঈদে পশু কোরবানির পরদিন সূর্য উদয়ের আগে পশুর বর্জ্য অপসারণ করতে হবে। সম্ভব হলে বর্জ্য রাতের মধ্যে শেষ করতে হবে। ঈদের দিন সকাল ৮টা থেকে কোরবানি শুরু হবে। এরপরের দিন অর্থাৎ তাদের পূর্বে ২৪ ঘণ্টা সময় দেওয়া হলেও এবার নির্দিষ্ট করে দিয়েছি সূর্য উদয়ের আগে বর্জ্য অপসারণ করতে হবে। এরপর যেন কোথাও কোনো ধরনের বর্জ্য না দেখি। আমি মনে করি দুই সিটি কর্পোরেশন সফলতার পরিচয় দেবে। এরপরেও যদি কোনো কোরবানি করে থাকে, সেটিও অপসারণ করতে হবে। কেননা ঈদের পর কয়েক দিন পশু কোরবানি হয়ে থাকে। সেজন্য পরের কয়েকদিন একটু বেশি নজর দিতে হবে।
তিনি বলেন, আমি জানি আপনারা তার আগে করে ফেলবেন। তারপরও সূর্য উদয়ের পরে কোথাও যেন বর্জ্য পরিলক্ষিত না হয়। ঢাকা শহরে ২৫ লাখ পশু কোরবানি হবে। এত বড় একটা কর্মযজ্ঞে কোথাও যদি একটু সময়ক্ষেপণ হয়, সেটি মেনে নেওয়া যায়। এর বেশি হলে সহ্য করা যায় না। ঈদের কয়েকদিন আন্তরিকতার সঙ্গে যারা কাজ করে, তাদের এই একটু আধটু ত্রুটি মেনে নেওয়া যায়। অতীতেও প্রতিকূলতা ছিল, তারমধ্যেই কাজ করেছেন। সারা পৃথিবীতেই এটা হয়ে থাকে।
এ বছরও দুই সিটি কর্পোরেশন পশু কোরবানির জন্য নিদিষ্ট স্থান নির্বাচন করে দিবে কি না? এ প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, অতীতে তারা সামাজিক ব্যবস্থাপনার মধ্যে দিয়ে করেছে। বিশেষ করে কোভিডের সময়ে করা হয়েছিল। এবার কিছু কিছু এলাকায় সামাজিকভাবে নির্দিষ্ট স্থানে পশু কোরবানি করবে। একইসঙ্গে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করবে সেই সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়েছে। কাউন্সিলররা সমাজের লোকজনদের সাথে আলোচনা করে সেই ব্যবস্থা করবে।
জাল টাকা শনাক্তকরণ মেশিন কি সারা দেশের পশুর হাটগুলোতে থাকবে? এ প্রশ্নের জবাবে তাজুল ইসলাম বলেন, জাল টাকা শনাক্তকরণে যে মেশিন, সেটি মোবাইল মেশিন। ফলে সব জায়গায় এই মেশিন থাকবে।
ঈদের আগে অতীতে যেসব সিদ্ধান্ত হয়েছে, সেগুলো বাস্তবায়ন কতটুকু হয়েছে, না হলে কেন হলো না। সে বিষয়ে আলোচনা করেছেন কি না? এ প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, এ পর্যন্ত যতগুলো সিদ্ধান্ত হয়েছে, আমাদের দুই সিটি কর্পোরেশন সফলতার সাথে করেছে। আমরা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বর্জ্য অপসারণের কথা বলেছি, সেটি পূর্বের বছরগুলোতে করে দেখিয়েছে। এখানে ব্যর্থতার কোনও নজির আমাদের কাছে নেই। সাংবাদিকরাও এমন কোনো খবর প্রচার করেননি যে, যেখানে সেখানে বর্জ্য পড়ে আছে… সিটি কর্পোরেশন সেখানে দায়িত্ব পালন করছে না।
তিনি বলেন, গাবতলী ব্রিজের ওপর চামড়ার বাজার স্থাপন করা যাবে না এবং ময়লার গাড়ি নির্বিঘ্নে আমিন বাজার ল্যান্ডফিলে যাতায়াতের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
কোরবানির পশুর হাটের ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে তাজুল ইসলাম বলেন, সড়ক, মহাসড়ক ও এর পাশে কোরবানির পশুর হাট ইজারা প্রদান না করা থেকে বিরত থাকতে হবে। সড়ক/মহাসড়কের ওপর বা রাস্তার পাশে যেখানে স্বাভাবিক যানচলাচল বিঘ্নিত হতে পারে, সেখানে কোনোক্রমেই পশুর হাট বসানো যাবে না। এ নির্দেশনা অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
তিনি বলেন, এছাড়া বিভিন্ন পশুর হাটে বাংলাদেশ ব্যাংক ও অন্যান্য ব্যাংকের সহায়তায় এটিএম বুথ, পয়েন্ট অব সেলস মেশিন, মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের (এমএফএস) মাধ্যমে ক্যাশলেস বা নগদ টাকাবিহীন লেনদেনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। বিভিন্ন হাটবাজার ও কোরবানির পশু পরিবহনকালে অজ্ঞান/মলম পার্টি যেন অপরাধমূলক কার্যক্রম গ্রহণ করতে না পারে, সিই বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধিসহ তদারকি বাড়াতে হবে।
নির্দিষ্ট স্থানে পশু কোরবানি নিশ্চিতকরণের বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, নির্দিষ্ট স্থানে পশু কোরবানি নিশ্চিত করতে হবে এবং এ বিষয়ে জনসাধারণকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। পশু জবাইয়ের জন্য স্বাস্থ্যসম্মত স্থান নির্ধারণ নিশ্চিত করতে হবে। বর্ষাকাল বিবেচনায় শামিয়ানা/ত্রিপল টানানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। পশু জবাইয়ের স্থান, ইমাম ও কসাইয়ের তালিকা প্রস্তুত করতে হবে। কসাইদের বিশেষ করে মৌসুমি কসাইদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
তাজুল ইসলাম বলেন, ওয়েবসাইট/ডিজিটাল ডিসপ্লে/মাইক/লিফলেট/ব্যানার/কেবল অপারেটরে ব্যাপক প্রচারের ব্যবস্থা নিতে হবে। যুব সংগঠন ও সমবায় সংগঠনকে সম্পৃক্ত করতে হবে। স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে মোটাতাজাকরণকৃত রোগমুক্ত গরু সরবরাহ নিশ্চিতকরণ ও প্রতিটি হাটে একটি বুথ স্থাপন করতে হবে।
তিনি বলেন, রেল ও সড়ক কর্তৃপক্ষের অব্যবহৃত স্থান, কলোনি, রাজউকসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের জায়গা অস্থায়ীভাবে পশু কোরবানির স্থান হিসেবে ব্যবহারের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানকে সহায়তা করবে। স্থানীয় প্রশাসন ও স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহ এলাকাভিত্তিক পশুর হাট ও পশু কোরবানির নির্দিষ্ট স্থানের তালিকা জনসাধারণের জ্ঞাতার্থে ব্যাপকভাবে প্রচার করবে। এক্ষেত্রে স্থানীয় কেবল টিভি অপারেটরদের সহায়তা গ্রহণ করা যেতে পারে।
তিনি আরও বলেন, এসব সিদ্ধান্ত জেলা প্রশাসকরা পৌর মেয়র, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানদের নিয়ে ভার্চুয়াল সভার মাধ্যমে বাস্তবায়ন নিশ্চিত করবেন। প্রয়োজনে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করবেন। একই সঙ্গে স্থানীয় পর্যায়ে মসজিদের ইমামরা নির্দিষ্ট স্থানে পশু কোরবানি এবং কোরবানির বর্জ্য অপসারণ করার বিষয়ে জনসচেতনতামূলক বক্তব্য প্রদান করবেন। কোরবানির সাথে সাথে যেন পশুর চামড়ায় লবণ দেওয়া হয়, তা নিশ্চিত করতে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করা যেতে পারে।