লাইফস্টাইল ডেস্ক:
ক্যানসারের নাম শুনলে অনেকেই আঁতকে ওঠেন। এটি একটি প্রাণঘাতী রোগ। বিশ্বের লাখ লাখ মানুষ ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে বাঁচার লড়াই করছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ক্যানসার বিশ্বব্যাপী মৃত্যুর একটি প্রধান কারণ। ২০২০ সালে প্রায় ১০ মিলিয়ন মৃত্যুর জন্য দায়ী।
রিপোর্ট করা সবচেয়ে সাধারণ ক্যানসার হলো, স্তন, ফুসফুস, কোলন, মলদ্বার, প্রোস্টেট, ত্বক ও পাকস্থলীর ক্যানসার। ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ার অন্যতম কারণ হলো, তামাক ব্যবহার, অ্যালকোহল সেবন, অস্বাস্থ্যকর খাবার, শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা, বায়ু দূষণ ও অন্যান্য অসংক্রামক রোগ ইত্যাদি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, শুধু বংশগত ঝুঁকিই নয় বরং ভুল লাইফস্টাইল সম্পর্কিত অর্থাৎ জীবনযাপনের ভুল অভ্যাসের কারণেই ক্যানসারে আক্রান্ত হন বেশিরভাগ মানুষ। ৬ জন ক্যানসার রোগীর মধ্যে ১ জন অন্তত এই দলে।
জীবনযাত্রার অভ্যাস পরিবর্তনের মাধ্যমে এক-তৃতীয়াংশ ক্যানসার এড়ানো যায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, প্রায় ৩০-৪০ শতাংশ ক্যানসারের রোগীরা শুধু জীবনযাত্রার অভ্যাস পরিবর্তন করেই তা প্রতিরোধ করতে পারেন।
কোন অভ্যাসের কারণে কোন ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ে?
শরীরের ভর বেড়ে যাওয়ার কারণে এন্ডোমেট্রিয়াল ক্যানসার, খাদ্যনালি অ্যাডেনোকার্সিনোমা, কিডনি ক্যানসার, লিভার ক্যানসার, পোস্টমেনোপজাল স্তন ক্যানসার, অগ্ন্যাশয় ক্যানসার ও কোলোরেক্টাল ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ে।
বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, অতিরিক্ত অ্যালকোহল সেবনের সঙ্গে মুখের ক্যানসার, স্বরযন্ত্রের ক্যানসার, খাদ্যনালির ক্যানসার, লিভার, কোলোরেক্টাল ও স্তন ক্যানসার হওয়ার গভীর সংযোগ আছে।
আবার পুরো শস্য কিংবা মৌসুমী ফল ও শাকসবজি এড়িয়ে চলা কিংবা প্রক্রিয়াজাত খাবার বেশি খাওয়া কোলোরেক্টাল ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়। পুরো শস্যের মধ্যে অনেক পরিমাণে ফাইবার থাকে, যা শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। ফলে কোলোরেক্টাল ক্যানসারেরও ঝুঁকি কমে।
হার্ভার্ড টিএইচ চ্যান স্কুল অব পাবলিক হেলথের এক গবেষণায় দেখা গেছে, জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনা ও স্বাস্থ্যকর অভ্যাসগুলো রপ্ত করার মাধ্যমে ফুসফুসের ক্যানসার, কোলন ক্যানসার, অগ্ন্যাশয়ের ক্যানসার ও কিডনি ক্যানসারের ঝুঁকি কমানো যায়।
গবেষণায় আরও দেখা গেছে, জীবনধারা পরিবর্তনের মাধ্যমে ৪১ শতাংশ পুরুষ ও ৫৯ শতাংশ নারীদের ক্যানসারে মৃত্যু থেকে বেঁচে ফিরতে পারেন।
ক্যানসার প্রতিরোধে করণীয়:
শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণ
ক্যানসার প্রতিরোধের অন্যতম কার্যকরী পদক্ষেপ হলো শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা। অতিরিক্ত ওজনে যারা ভুগছেন তাদের মধ্যে ক্যানসারের ঝুঁকি বেশি। এর কারণ হলো তারা ভুল অভ্যাসের মধ্য দিয়ে জীবনধারণ করেন। ১৮.৫-২৫ এর মধ্যে বডি মাস ইনডেক্স আদর্শ ওজন হিসেবে বিবেচিত হয়। এমনকি কোমরের পরিধি ৩-৪ ইঞ্চি বেড়ে যাওয়াও বিভিন্ন ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়।
অ্যালকোহল ও ধূমপান ছাড়ুন
গবেষণায় বলা হয়েছে, দৈনিক ১০ গ্রাম অ্যালকোহল গ্রহণও ক্যানসারের ঝুঁকি ২০ শতাংশেরও বেশি ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়। আবার ধূমপানের অভ্যাস ফুসফুসের ক্যানসারের ঝুঁকি দ্বিগুণ বাড়ায়। তাই ক্যানসার থেকে বাঁচতে এসব বদঅ্যভ্যাস এখই ছাড়ুন।
শারীরিক ক্রিয়াকলাপের অভাব নারীদের মধ্যে স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায় দ্বিগুণ। বিশেষ করে যারা মেনোপজ পর্যায়ে থাকে। অন্যদিকে যারা শারীরিকভাবে সক্রিয় তাদের কোলন ক্যানসারের ঝুঁকি ২৫ শতাংশ কমে। আবার অতিরিক্ত বসে-শুয়ে থাকার অভ্যাস ফুসফুস, এন্ডোমেট্রিয়াল ও কোলন ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়।