খুন হওয়ার আগে ৮ বার কল দিয়ে কথা বলেন বাড়ির মালিক শাহিন

হাজারীবাগে তানিয়া হত্যাকান্ড

প্রকাশিত: ১০:৪১ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২৩, ২০২৪

এসএম দেলোয়ার হোসেন:

রাজধানীর হাজারীবাগে তানিয়া আক্তার (৩৫) হত্যাকাÐের ঘটনায় বাড়ির মালিক শাহিনসহ কয়েকজনকে সন্দেহ করছে পুলিশ। ইতোমধ্যে ডিবি পুলিশ নিহতের বাড়ির মালিক শাহিনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তানিয়া ও বাড়ির মালিক শাহিনের মধ্যে অনেক আগে থেকেই একটা সম্পর্ক রয়েছে। সেই সম্পর্কের সূত্র ধরেই হত্যাকাÐের আগে তাদের মধ্যে একাধিকবার কথাও হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় জানা গেছে, খুন হওয়ার আগে তানিয়ার মোবাইলে ৮ বার কল দিয়ে কথা বলেন শাহিন। প্রতিবারই ১০ থেকে ১৫ মিনিট কথা বলেন তিনি।
পুলিশ জানায়, তানিয়া হত্যাকাÐের ঘটনায় গত সোমবার তার ভাই তন্ময় হাসান বাদী হয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে হাজারীবাগ থানায় একটি হত্যা মামলা করেছেন। মামলার পরই ডিবি পুলিশ ছায়া তদন্ত শুরু করে। এরপরই নিহতের বাড়ির বাড়িওয়ালা শাহিনকে আটক করে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এ ছাড়া সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, তানিয়া তার বাসায় সর্বশেষ একাই ঢুকেছিলেন। ফলে হত্যাকারী হিসেবে পুলিশের সন্দেহের তালিকায় প্রথম অবস্থানে রয়েছেন শাহিন। কারণ তানিয়া ও বাড়ির মালিক শাহিনের মধ্যে অনেক আগে থেকে সম্পর্ক রয়েছে। সেই সম্পর্কের সূত্র ধরেই হত্যাকাÐের আগে তাদের মধ্যে একাধিকবার কথাও হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তারও করা হয়নি।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, শাহিনকে জিজ্ঞাসাবাদের সন্দেহের তীর আরও বাড়ছে। পাশাপাশি এই হত্যাকাÐে নিহতের স্বামী ও পাশের ফ্ল্যাটের এক নারীসহ আরও কয়েকজন নজরদারীতে রাখা হয়েছে। সূত্র জানায়, তানিয়ার পাশের রুমে থাকা আরেক নারী ভাড়াটিয়া হত্যাকাÐের কোনো কিছু বুঝতে পারেননি বলে দাবি করেছেন। গলা কেটে হত্যাকাÐ হওয়ার পর বিষয়টি পাশের রুমের লোক কিছু না জানে না। তাই তা নিয়েও পুলিশ সন্দেহ করছে। তানিয়ার সঙ্গে তার স্বামীর সম্পর্কও ভালো ছিল না। তিনি আলাদা থাকতেন। তদন্তে এসব বিষয়কে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ আশরাফ হোসেন নিউজ পোস্টকে বলেন, হত্যার পর রুম লক করে চলে গেছে খুনি। যাওয়ার সময় হত্যাকারী তানিয়ার ভ্যানিটি ব্যাগ ও মোবাইল ফোন নিয়ে চলে গেছে। তবে হত্যাকাÐের কিছু গুরুত্বপূর্ণ ক্লু আমরা পেয়েছি। তা নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। খুব শিগগিরই হত্যাকান্ডে জড়িতদের গ্রেপ্তার করে হত্যার রহস্য উৎঘাটন করা হবে।
নিহতের মামা আলমগীর হোসেন নিউজ পোস্টকে জানান, ভাগ্নি তানিয়ার সঙ্গে বহু আগে থেকেই বাড়ির মালিক শাহিনের পরিচিত ছিল। গেল সংসদ নির্বাচনে তারা একসঙ্গে নৌকার প্রার্থীর প্রচারণা চালিয়েছেন। সেখান থেকেই তাদের পরিচয়। পরে শাহিনের বাড়ির একটি ফ্ল্যাটের এক রুম ভাড়া ছাড়াই তানিয়াকে থাকতে দেন। তিনি জানান, গত ১৯ জানুয়ারি হাজারীবাগে তার ভাইয়ের বাসায় যায় তানিয়া। ওই দিন সন্ধ্যা ৭টার দিকে টিফিন বক্সে ভাইয়ের বাসা থেকে রাতের খাবার নিয়ে হাজারীবাগের ভাড়া বাসায় ফেরেন। পরদিন তার মোবাইলে একাধিকবার ফোন করলেও বন্ধ পান তার ভাই। পরে তারা গত রোববার সকালে হাজারীবাগের মিতালি রোডের ১৭/১ নম্বর ভবনের সপ্তমতলার তানিয়ার রুমের গিয়ে তারা ডাকাডাকি করেন। কিন্তু কোনো সাড়া না পেয়ে পুলিশকে সংবাদ দেন। দুপুরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মিস্ত্রি ডেকে রুমের দরজার তালা খুলে ভেতরে প্রবেশ করে দেখতে পায় বাথরুমে তানিয়ার গলাকাটা রক্তাক্ত লাশ পড়ে আছে।