ডেস্ক রিপোর্ট:
দ্বিতীয়বারের মতো হোয়াইট হাউসে ফিরছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যাটলগ্রাউন্ড রাজ্যে তাঁর বিজয়ের আভাসে তা নিশ্চিত হতে দেখা যাচ্ছে। ২০১৬, ২০২০ ও ২০২৪ সালে ট্রাম্পের নির্বাচনী লড়াইয়ে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে পরিবর্তন এসেছে। বুথফেরত জরিপের তথ্য বিশ্লেষণ করে এক প্রতিবেদনে পরিবর্তনগুলো তুলে ধরেছে সিএনএন।
২০২৪ সালের নির্বাচনে খারাপ অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের জন্য একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। প্রচেষ্টা সত্ত্বেও তিনি নারীর সমর্থন বাড়াতে পারেননি। যদিও গর্ভপাতের অধিকারের পক্ষে সমর্থন বেড়েছে। তবে, লাতিনো পুরুষরা ট্রাম্পের দিকে ঝুঁকেছেন। ২০১৬ সালের তুলনায় এখানে বেশ পার্থক্য।
নারী ও পুরুষ ভোটারের বিভাজন
২০২৪ সালে নারীর মধ্যে কমলার সমর্থন থাকলেও তা ২০১৬ বা ২০২০ সালের তুলনায় বেশি ছিল না। বিশেষত, ট্রাম্প পুরুষদের মধ্যে সমর্থন বজায় রেখেছিলেন।
লাতিনো পুরুষদের সমর্থন
২০১৬ সাল থেকে লাতিনো ভোটারদের, বিশেষত পুরুষদের মধ্যে ট্রাম্পের প্রতি সমর্থন বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২০ সালে, বাইডেন তাদের বেশির ভাগ ভোট পেয়েছিলেন। কিন্তু ২০২৪ সালে তারা ট্রাম্পের দিকে ঝুঁকেছেন। তবে, লাতিন নারীরা এখনও কমলার পক্ষে সমর্থন দিয়েছেন। যদিও তা আগের তুলনায় কম।
জাতিগত সমর্থন
২০২৪ সালে কমলা কৃষ্ণাঙ্গ পুরুষ ও নারীর মধ্যে শক্তিশালী নেতৃত্ব বজায় রেখেছিলেন। তবে, শ্বেতাঙ্গ পুরুষদের মধ্যে ট্রাম্পের আগের মতো নিরঙ্কুশ আধিপত্য ছিল না। শ্বেতাঙ্গ কলেজ-শিক্ষিত ভোটারদের মধ্যে কমলার সমর্থন উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। বিশেষ করে কলেজ-শিক্ষিত শ্বেতাঙ্গ নারীর মধ্যে তিনি প্রায় ২০ পয়েন্ট এগিয়ে রয়েছেন; যা বাইডেন বা ক্লিনটনের তুলনায় ভালো।
যুব ভোটারদের ঝুঁকে পড়া
২০২৪ সালে ডেমোক্র্যাটদের সবচেয়ে বিশ্বাসযোগ্য ভোটার গ্রুপ, অর্থাৎ যুব ভোটারদের কিছুটা সমর্থন কমেছে; যা ডেমোক্র্যাটদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দাঁড়ায়। তবে, প্রবীণ ভোটারদের মধ্যে কিছুটা পরিবর্তন ঘটেছে। এক্ষেত্রে কমলা কিছুটা বেশি সমর্থন পেয়েছেন।
গ্রামীণ এলাকায় সমর্থন পুনরুদ্ধার
২০২০ সালে গ্রামাঞ্চলে কিছুটা সমর্থন হারানোর পর, ট্রাম্প ২০২৪ সালে সেখানে পূর্ণ শক্তি নিয়ে ফিরে এসেছেন। শহরগুলো এখনও ডেমোক্র্যাটদের কাছে রয়ে গেছে। কিন্তু উপশহরগুলোতে সমর্থন এবার ট্রাম্পের দিকে আবার ঝুঁকে গেছে।
অর্থনৈতিক পরিস্থিতির প্রভাব
২০২০ সালে অর্থনীতির অবস্থা নিয়ে ভোটারদের মধ্যে বিভক্ত মতামত ছিল। যদিও ওই সময় করোনাভাইরাস মহামারি ছিল। তবে ২০২৪ সালে দুই-তৃতীয়াংশ ভোটারই অর্থনীতির অবস্থা খারাপ বলে মত দিয়েছেন। এই পরিস্থিতি ট্রাম্পের পক্ষে কাজ করেছে।
পিছিয়ে পড়ার অনুভূতি
২০২০ সালে মাত্র পাঁচ ভাগ ভোটার জানিয়েছিলেন যে, তারা আগের তুলনায় খারাপ অবস্থানে আছেন। তবে ২০২৪ সালে, প্রায় অর্ধেক ভোটার এমন অনুভূতি প্রকাশ করেছেন। এই পরিস্থিতি ট্রাম্পের পক্ষে একটি বড় সুবিধা নিয়ে এসেছে।
গর্ভপাতের অধিকারের পক্ষে সমর্থন
২০১৬ সালে রো.ভি. ওয়েডের রায়ের মাধ্যমে গর্ভপাতের অধিকার যুক্তরাষ্ট্রের নারীদের সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃত ছিল। তবে ২০২৪ সালে, সেই অধিকারটি বাতিল হয়ে যায় এবং দুই-তৃতীয়াংশ ভোটারই গর্ভপাতকে বৈধ রাখতে চান। তবে, এই সমর্থন তাদের ট্রাম্পের বিপক্ষে ভোট দেওয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল না। প্রায় অর্ধেক ভোটার, যারা গর্ভপাতের পক্ষে ছিলেন, তারা ট্রাম্পকেই সমর্থন করেছেন।
মধ্যপন্থি ভোটারদের মধ্যে প্রভাব
২০১৬ থেকে ২০২৪ সালে মধ্য, উদার ও রক্ষণশীলরা রিপাবলিকান দলের প্রতি মনোযোগী হয়ে উঠেছে। মধ্যপন্থি ভোটারের অধিকাংশ এবারও ডেমোক্র্যাট প্রার্থীকে সমর্থন করেছেন। কিন্তু তা আগের তুলনায় কম ছিল।
নতুন ভোটার টানতে সফলতা
ট্রাম্পের নির্বাচনী কৌশলের গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল নতুন ভোটারদের মনোযোগ আকর্ষণ করা। এই নতুন ভোটাররা সাধারণত রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় অংশ নেন না। ২০২০ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে ট্রাম্প তাদের কাছে বেশি সমর্থন পেয়েছেন। তবে, ২০২৪ সালে প্রথমবারের ভোট দেওয়া ভোটারদের সংখ্যা ২০২০ সালের তুলনায় কম ছিল।