গার্মেন্টস শ্রমিক আন্দোলনের নেপথ্যে রয়েছে ভিন্ন উদ্দেশ্য

প্রকাশিত: ১২:৫৯ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ৩, ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক:

গার্মেন্টস শ্রমিকরা হঠাৎ মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন। প্রতি পাঁচ বছর পর পর বেতন পুনর্র্নিধারণের যে বিধান রয়েছে, সেটির বাস্তবায়ন চাইছেন শ্রমিকরা। সরকার ও মালিকরাও এ ব্যাপারে আন্তরিক। সরকারের মজুরি বোর্ডও বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে এবং এজন্য আগামী ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত সময়সীমা দিয়েছে। কিন্তু তারপরও হঠাৎ করে সাভার, আশুলিয়া, গাজীপুর, মিরপুরসহ ঢাকার আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় গার্মেন্টস শ্রমিকরা আন্দোলন, জ্বালাও-পোড়াও কর্মকাণ্ড চালিয়েছেন। এতে এক জন নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন অনেকে। তবে এসব ঘটনার নেপথ্যে রয়েছে ভিন্ন উদ্দেশ্য।
শ্রমিক নামধারী এক শ্রেণির নেতা আছেন, যারা বিলাসবহুল জীবনযাপন করেন। আবার শ্রমিক অধিকার রক্ষার নামে এক শ্রেণির এনজিও আছে। তারাই মূলত গার্মেন্টস খাতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির উসকানি দিচ্ছে। তারাই সুকৌশলে শ্রমিক অসন্তোষ লাগিয়ে দিয়েছে। সরকারের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার তদন্তে এসব তথ্য উঠে এসেছে। বিষয়টি সরকারের শীর্ষ প্রশাসনকে জানিয়ে দিয়েছে একটি গোয়েন্দা সংস্থা। সেখানে শ্রমিক নামধারী নেতা ও এনজিওগুলোর নাম চিহ্নিত করে লিখিত আকারে দেওয়া হয়েছে।
দেশের বড় অর্থনৈতিক খাত গার্মেন্টস ব্যবসা থেকে অনেক মানুষের কর্মসংস্থান হচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্প ধ্বংসে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র অব্যাহত রয়েছে। এ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলছে অপপ্রচার। বিভিন্ন দেশের কাছে এ শিল্পকে তুলে দিতে একটি স্বার্থান্বেষী মহল দেশে-বিদেশে ষড়যন্ত্র করছে। শ্রমিকদের উসকে দেওয়া, ট্রেড ইউনিয়ন করার চাপসহ বিভিন্নভাবে গার্মেন্টসে অসন্তোষ তৈরি করে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার চেষ্টা চলছে। কোনো কোনো দেশ নেপথ্যে থেকে শ্রমিক নামধারী নেতা ও এক শ্রেণির এনজিওদের লালনপালন করে। যেভাবে তারা জুট মিলগুলো ধ্বংস করেছিল, একই কায়দায় গার্মেন্টস শিল্প ধ্বংস করার পাঁয়তারা চালাচ্ছে তারা। অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের গার্মেন্টস পণ্য স্বল্পমূল্যে পাওয়া যায়। মালিকদেরও সরকার অনেক সুযোগ-সুবিধা দেয়। করোনার সময় নামমাত্র সুদে প্রণোদনা দিয়েছিল সরকার। শ্রমিক নেতাদের পোষে কোনো কোনো দেশ। যে কোনোভাবে সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে হাতিয়ার হিসেবে তারা ব্যবহার করে এসব শ্রমিক নেতাকে। গার্মেন্টস শিল্পে জ্বালাও-পোড়াও, ভাঙচুরসহ সহিংস ঘটনা ঘটানো হয়। এসব ঘটনায় বর্তমানে তিন শতাধিক গার্মেন্টস বন্ধ রয়েছে। কিছু মালিকও এসব ঘটনার সুযোগ নেয়।

এ ব্যাপারে শিল্পাঞ্চল পুলিশের প্রধান মাহবুবুর রহমান বলেন, আমরা গার্মেন্টস শিল্প এলাকায় নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করেছি। সার্বক্ষণিক মনিটর করা হচ্ছে। পাশাপাশি বাড়তি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।

গত এক দশকে গার্মেন্টস সেক্টরে শ্রমিকদের স্বার্থরক্ষার নামে শতাধিক সংগঠন গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে প্রায় দেড় ডজন রয়েছে ফেডারেশন। বেশির ভাগ সংগঠনের নিবন্ধনও নেই। এসব সংগঠনের নেতাদের বেশিরভাগই গার্মেন্টস কারখানার সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্তও নন। এসব ব্যক্তি বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, দেশি-বিদেশি চক্রান্তকারীদের হয়ে কাজ করে থাকেন। তারাই মূলত শ্রমিকদের রাস্তায় নামিয়ে দিয়ে নিজেরা ফায়দা লোটার চেষ্টা করেন।

গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে, বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের চিহ্নিত নেতারাই পরিকল্পিতভাবে গার্মেন্টস সেক্টরে নৈরাজ্য করার পাঁয়তারা করছেন। এসব নেতার কেউ কেউ বিলাসবহুল জীবনযাপন করেন। এদিকে কাজ না করে আন্দোলন করলে কিংবা ফ্যাক্টরি ভাঙচুর করলে কারখানা বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তৈরি পোশাক শিল্পের মালিকরা। শ্রম আইনের ১৩ (১) ধারা অনুযায়ী ‘কাজ নেই, মজুরি নেই’—এমন নিয়ম কার্যকরের কথা বলছেন তারা। এই নিয়মে বেশকিছু গার্মেন্টসও বন্ধ করে দিয়েছেন মালিকরা।