ইসলামী ডেস্কঃ
শয়তানের ধোকায় পড়ে গুনাহ করে ফেলে মানুষ। তবে সাময়িক গুনাহের মোহ কেটে গেলে একজন মুমিনের অন্তর অস্থির হয়ে পড়ে। তওবা করে ফেলেন দ্রুতই। তওবাকারী ব্যক্তিদের মাঝে দুইটি শ্রেণী ভাগ রয়েছে। এক ধরনের মানুষ পুরোপুরি আন্তরিকতা নিয়ে তওবা করেন। অপর শ্রেণীর মানুষজন আন্তরিকতা নিয়ে তওবা করেন না। তওবা করার সময় প্রত্যেকেরই বিবেচনা করা উচিত তিনি কোন ধরনের চিন্তা নিয়ে তওবা করছেন এবং তার অবস্থান কোন শ্রেণীতে।
ইমাম গাজালী রহিমাহুল্লাহ বলেছেন, সংকল্পের ভিত্তিতে তওবাকরীদের কয়েকটি শ্রেণী ভাগ করেছেন। এখানে তওবাকারীদের শ্রেণীভাগ তুলে ধরা হলো-
প্রথম শ্রেণী
যে ব্যক্তি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তওবার ওপর অটল থাকেন। গুনাহের স্খলন ঘটে না এবং যেসব ক্ষেত্রে কোনো মানুষের নিয়ন্ত্রণ থাকে না এমন সব জায়গা ছাড়া অন্যান্য ক্ষেত্রে সচেতনভাবে ওই গুনাহ করার ইচ্ছা পোষণ করে না। এটা ধারাবাহিক ও নিয়মিত তওবা। যারা এভাবে তওবা করে তারা সেই মানুষের অন্তর্ভুক্ত যারা সব সময় নেক আমলের চেষ্টা করে।
এই ধরনের তওবাকে বলা হয় আন্তরিক ও খাঁটি তওবা আর এমন তওবাকারীদের হৃদয়কে বলা হয় প্রশান্ত আত্মা।
আল্লাহ তায়ালা বলেন, হে প্রশান্ত আত্মা, তুমি তোমারা পালনকর্তার নিকট সন্তুষ্ট ও সন্তোষভাজন হয়ে ফিরে যাও। এরপর আমার নেক বান্দারে অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাও। এবং আমার জান্নাতে প্রবেশ করো। ( সূরা ফজর, আয়াত, ৩০)
২য় শ্রেণী
এমন তওবাকারী যে তার তওবার ক্ষেত্রে আন্তরিক ও কবিরা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকে। কিন্তু মাঝে মাঝে অনিচ্ছা সত্ত্বেও পরিস্থিতির কারণে গুনাহের কাজে জড়িয়ে পড়ে। যখনি সে গুনাহ কে রতখনি নিজের মনকে তিরষ্কার করে, ভুলের জন্য অনুতপ্ত হয়।
এই ধরনের তওবাকারীর অন্তর হলো তিরষ্কারকারী বা সমালোচক আত্মা, কারণ, এমন ব্যক্তি সবসময় নিজেকে ভুলের জন্য তিরষ্কার করে। এই ধরনের তওবাকারীর জন্যও আল্লাহ তায়ালা পক্ষ থেকে সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে।
বর্ণিত হয়েছে, যারা বড় বড় গুনাহ ও অশ্লীল কাজ থেকে বিরত থাকে, ছোট খাটো অপরাধ করলেও নিশ্চয় আপনার পালনকর্তার ক্ষমা সুদুর বিস্তৃত। (সূরা আন নাজম, আয়াত, ৩২)
৩য় শ্রেণী
যে ব্যক্তি তওবা করে এবং তওবার ওপর অটল থাকতে চায়, তবে মাঝে মাঝে তীব্র আবেগ, নফসের প্ররোচনা বা লালসার শিকার হয়ে গুনাহ করে ফেলে। কিন্তু এমন ব্যক্তি জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রে আল্লাহ তায়ালার বিধান মেনে চলেন এবং মোটামোটি গুনাহ থেকে বেঁচে থাকেন, থাকার চেষ্টা করেন। তবে এমন ব্যক্তিকে আল্লাহর কাছে জবাবদিহীতা করতে হবে। বর্ণিত হয়েছে,
‘আশা করা যায় আল্লাহ তাদের ওপর ক্ষমাশীল হবেন। ( সূরা তাওবা, আয়াত, ১০২)
এই শ্রেণীর মানুষ গুনাহের পর নতুন করে তওবা করতে দেরি হলে আশঙ্কা রয়েছে হয়তো তওবার আগেই তার মৃত্যু হয়ে যেতে পারে। তাই সবসময় সর্তক থাকা উচিত এবং গুনাহের পর সঙ্গে সঙ্গে তওবা করা উচিত।
৪র্থ শ্রেণী
এমন ব্যক্তি যে একবার তওবা করে কিন্তু আসক্তির কারণে আবারো গুনাহের কাজে জড়িয়ে পড়ে। এরপর তার মাঝে গুনাহের জন্য অনুশোচনাবোধ জাগে না এবং সে পুনরায় তওবাও করে না। এই ধরনের মানুষ এমন শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত যারা গুনাহের ভেতর ডুবে থাকে। তাদের অন্তর নিয়মিত তাদেরকে গুনাহের দিকে টেনে নিয়ে যায়। এভাবে তাদের মৃত্যু কঠিন কোনো পরিণতি নিয়ে আসতে পারে।
এমন ব্যক্তি যদি আল্লাহ তায়ালা ওপর ঈমান রেখে মারা যায়, তাহলে নির্ধারিত সময়ের শাস্তির পর আল্লাহ তায়ালা তাকে মাফ করে দেবেন। কিন্তু এমন ক্ষমার আশা পাপে জড়িয়ে থাকা মোটেও যৌক্তিক নয়।
তওবা করার সময় ভেবে দেখা উচিত, আপনি কোন শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘এরপর আমি আমার বান্দাদের মাঝে মনোনীথদেরকে কিতাব দান করেছি। তাদের কেউ নিজেদের প্রতি জুলুমকারী, কেউ মধ্যপন্থা অবলম্বনকারী, আবার কেউ কেউ কল্যাণের পথে অগ্রগামী। এটাই মহান আল্লাহর অনুগ্রহ। ( সূরা ফাতির, আয়াত, ৩২)
ইমাম কুরতুবী রহিমাহুল্লাহ বলেন, এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেছেন, যারা ছোট গুনাহ করে তারা জালেম। যারা দুনিয়া ও আখেরাতের প্রাপ্য মিটিয়ে দেয় তারা মধ্যপন্থী। আর যারা কাজের পিছনে দৌঁড়ায় তারা সবার থেকে এগিয়ে।
এজন্য সবসময় তওবা করা উচিত, যেন জালেমদের অন্তর্ভ্ক্তু হয়ে না পড়ি। আল্লাহ তায়ালা বলেন, যারা এমন কাজ থেকে তওবা করে না তারাই জালেম। (সূরা হুজুরাত, আয়াত, ১১)