গোটা জাতিকে উসকে দিয়ে অন্ধকারে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে: মির্জা ফখরুল

প্রকাশিত: ৩:৩০ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ২৭, ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

কিছু কিছু মানুষ নিজেকে অত্যন্ত জনপ্রিয় মনে করেন। সবচেয়ে দেশপ্রেমিক মনে করেন। আর গোটা জাতিকে তারা বিভাজনের দিকে ঠেলে দিয়ে, উস্কে দিয়ে একটা অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বুধবার (২৭ নভেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম হলে ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) আয়োজিত ‘স্বৈরাচারের পতন, গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও রাষ্ট্র গঠনে চিকিৎসক সমাজের ভূমিকা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা যতই বড় বড় কথা বলি, বক্তৃতা করি, বিশ্বকে এক করার চেষ্টা করি, হয় না। আমার নিজের ঘরেই যদি বিভাজন থেকে যায়, বিভেদ থেকে যায়, আমি সেটা কখনোই ঠিক করতে পারবো না। আমরা কয়েকটা দিন ধরেই খুবই চিন্তিত, খুবই উদ্বিগ্ন ভয়াবহভাবে। আপনারা চিন্তা করতে পারেন ধর্মকে কেন্দ্র করে যে উন্মাদনা শুরু হয়েছে বাংলাদেশে! আমরা মুক্ত স্বাধীন মিডিয়ার জন্য, প্রেসের জন্য, সভা করার জন্য এতদিন লড়াই করলাম, তারা উড়িয়ে দিচ্ছে। এই বাংলাদেশ তো আমরা দেখতে চাই না। আর কী উন্মাদনা! আর কিছু সংখ্যক মানুষ আছে যাদের সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখে আমি আতঙ্কিত হই। পুড়িয়ে দাও জ্বালিয়ে দাও, এই ধরনের কথাবার্তা হচ্ছে সেখানে। চিন্তা কর‍তে পারেন কোন জায়গায় নিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশকে?মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা কী ভাবি আমাদের ভয়টা কোথায়? আমরা কী বুঝি আমাদের আতঙ্কটা কোথায়? আমরা কী বুঝি আততায়ী কোথায় ছুড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে? বুঝি না। বুঝলে এত দ্বায়িত্বহীন কথাবার্তা বের হতো না আমাদের মুখ দিয়ে। দুর্ভাগ্য, কিছু কিছু মানুষ নিজেকে অত্যন্ত জনপ্রিয় মনে করেন। সবচেয়ে দেশপ্রেমিক মনে করেন। আর গোটা জাতিকে আজকে তারা বিভাজনের দিকে ঠেলে দিয়ে, উসকে দিয়ে একটা অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। আপনারা গভীরভাবে চিন্তা করবেন, আমি কারও নাম বলবো না, বলতে চাই না। ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করবেন— যারা আমাদের বিভেদের দিকে নিয়ে অনৈক্য করতে চাচ্ছেন, তারা আমাদের শত্রু না মিত্র?

তিনি বলেন, আজকে এই ২৪ এ আমাকে ভোটের অধিকারের জন্য চিৎকার করতে হচ্ছে। কোন জাতি আমরা! এই কথাগুলো কী কখনও আপনারা জিজ্ঞেস করেন? এবারতো একটা সুযোগ এসেছিল, সবাই মিলে একযোগে দেশের একটা পরিবর্তন নিয়ে আসার। ছেলেরাও ছিল সামনে, আমরাও ছিলাম। সবাই মিলে আমরা পরিবর্তনের কাজটা করতে পারি। তিনটা মাস হয়নি এখনও, এরমধ্যেই আমাদের আসল চেহারা বের হয়ে এসেছে। এরকম চেহারা নিয়ে কোনোদিনই সাফল্য অর্জন করা যায় না।মিজা ফখরুল বলেন, ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য প্রতিবারই বাংলাদেশের কিছু তরুণ যুবক প্রাণ দিচ্ছেন। তার স্বাধীনতা গণতন্ত্র ভোটাধিকার ফিরিয়ে পাওয়ার জন্য। ৫ অগাস্টের বিজয় রক্ত ও প্রাণের মধ্য দিয়ে, রক্ত রঞ্জিত রাজপথ দিয়ে। একবার ভাবুন, কিভাবে একটা মানুষ নিস্বার্থভাবে দেশের জন্য প্রাণ দিতে পারে। আমরা এটি বারবার এমনটি দেখি, মাতৃকার টানে প্রাণ দিচ্ছে।

সাম্প্রতিক দেশের পরিস্থিতি তুলে ধরে তিনি বলেন, এখনও স্বৈরাচারের পতনের তিন মাস শেষ হয়নি। কী অদ্ভুত! একের পর এক মাঠে নামছে বিভেদ নিয়ে, সবাই পত্রিকা অফিসে আগুন লাগিয়ে দিচ্ছি, আমরা কি এমন দেশ চেয়েছিলাম, কেন এত বিভাজন, কেন এত হিংস্রতা? আর কতবার বাংলাদেশকে ওপরে তোলার চেষ্টা করবো?

দেশে দুই-তিন দিনের ঘটনা তুলে ধরে তিনি বলেন, জানি আপনারাও আমাকে অনেকজন অনেক কিছু বলেন, স্পষ্ট কথা আমি লিবারেল ডেমোক্রেসি পক্ষের লোক, আমার দলও তাই। আপনার ভিন্ন মত থাকতে পারে, তাই বলে কি তাকে কথা বলতে দেবেন না?

পত্রিকা অফিসে আক্রমণের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ১৫ বছর ধরে গণতন্ত্র ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করছি। আপনার সঙ্গে আমার মতের অমিল থাকতে পারে। তবে আপনার কথা বলার স্বাধীনতার জন্য আমার জীবন দিয়ে হলেও লড়বো।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, এক ফ্যাসিস্ট আমাদের গলা চেপে ধরেছিল, এখন আপনারা একে নিশ্চিহ্ন করতে চান ওকে ধরতে চান। তাহলে সাধারণ মানুষ কোন দিকে যাবে? তাদেরকে বিভ্রান্তের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন কেন? এভাবে একটি সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায় না।

সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, বিভাজনের কাছে কেউ মাথা নোয়াবেন না। আসুন, গণতন্ত্র, গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার করার জন্য আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে লড়াই করবো।

ড্যাবের সভাপতি ডা. হারুন আল রশিদের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সালামের তত্ত্বাবধানে এবং সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ডা. মেহেদী হাসানের সঞ্চালনায় সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন— বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমানউল্লাহ আমান, অধ্যাপক ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার, বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক ডা. মো. রফিকুল ইসলাম প্রমুখ।