চীনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক পরিকল্পনা এগিয়ে নেওয়া এখন সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার: প্রধান উপদেষ্টা

প্রকাশিত: ১২:২৬ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ২১, ২০২৫

নিজেস্ব প্রতিবেদক:

 

অন্তর্র্বতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, চীন সফরে যেসব পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে সেসব এগিয়ে নিয়ে যাওয়া এখন সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। ঢাকায় নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েনের সঙ্গে সাক্ষাতে এই কথা বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা।

রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় গতকাল রোববার প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ইয়াও ওয়েন। বৈঠকে তারা প্রধান উপদেষ্টার সাম্প্রতিক চীন সফরের ফলাফল পর্যালোচনা করেন এবং বাংলাদেশ-চীন সহযোগিতা ত্বরান্বিত করতে পরবর্তী পদক্ষেপগুলো তুলে ধরেন। উভয়পক্ষ অবকাঠামো, বাণিজ্য, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা এবং সংস্কৃতিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে আলোচনাকে কার্যকর প্রকল্পে রূপান্তরিত করার জন্য যৌথ প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের এখন সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হল চীন সফরের সময় আমরা যে পরিকল্পনাগুলো নিয়ে আলোচনা করেছি সেগুলো নিয়ে এগিয়ে যাওয়া। আমরা নিশ্চিত করতে চাই যে, গতি যেন হারিয়ে না যায়।’

চীনা রাষ্ট্রদূত প্রধান উপদেষ্টার অনুভূতির প্রতিধ্বনি করে বলেন, ‘এটি আমাদেরও সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। চীনে আমাদের সর্বোচ্চ পর্যায়ের এজেন্ডা বৈঠক হয়েছে এবং আমরা কেবল চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য আরও দুই থেকে তিন বছর অপেক্ষা করতে চাই না। আমরা দ্রুত সেগুলো বাস্তবায়ন করতে চাই।’

আলোচিত বিষয়গুলোর মধ্যে একটি ছিল মোংলা এবং আনোয়ারা অর্থনৈতিক অঞ্চলের উন্নয়ন। বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন জানান, প্রস্তুতি চলছে এবং একবার সম্পন্ন হলে জোনগুলো বাস্তবায়ন শুরু করার জন্য ডেভেলপারদের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সূত্র জানিয়েছে, উভয়পক্ষ চীন থেকে চারটি নতুন জাহাজ কেনার পরিকল্পনা নিয়েও আলোচনা করেছেন। চীনা পক্ষ আশ্বাস দিয়েছে যে এই প্রক্রিয়াটি এই বছরের জুনের মধ্যে সম্পন্ন হবে।

রাষ্ট্রদূত আরও নিশ্চিত করেছেন যে, চীনের বাণিজ্যমন্ত্রী শিগগিরই বাংলাদেশ সফর করবেন। তাঁর সঙ্গে বিনিয়োগকারীদের ১০০ সদস্যের প্রতিনিধিদল থাকবেন নতুন বিনিয়োগের সুযোগ অন্বেষণের লক্ষ্যে।

বিডার চেয়ারম্যান আশিক বলেন, ‘আমরা খাত-নির্দিষ্ট সহযোগিতা জোরদার করার জন্য চীনা বিনিয়োগকারীদের ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে একটি ক্ষুদ্র-বিনিয়োগ শীর্ষ সম্মেলন আয়োজন করব।’

আলোচনায় স্বাস্থ্যসেবা সহযোগিতার বিষয়টি বিশেষভাবে তুলে ধরা হয়েছে। চীনা পক্ষ বাংলাদেশে ১ হাজার শয্যার একটি হাসপাতাল নির্মাণের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন, যা প্রাথমিকভাবে চীন সফরের সময় প্রস্তাব করা হয়েছিল। তারা চট্টগ্রামে একটি বিশেষায়িত বার্ন ইউনিট প্রতিষ্ঠায় চলমান সহায়তার কথাও তুলে ধরেন।

চীনা রাষ্ট্রদূত জানান, কুনমিং-চট্টগ্রাম সরাসরি ফ্লাইট চালু করার জন্য অগ্রগতি হচ্ছে এবং বাংলাদেশি রোগীদের জন্য চিকিৎসা ভিসা দ্রুততর করার প্রচেষ্টা চলছে।

অধ্যাপক ইউনূস সাংস্কৃতিক বিনিময়ের গুরুত্বের ওপর জোর দিয়ে তরুণ বাংলাদেশিদের চীনা ভাষা ও সংস্কৃতির সাথে আরও ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত করার জন্য একটি চীনা সাংস্কৃতিক কেন্দ্র এবং ভাষা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করেন।

উভয়পক্ষ তিস্তা নদী ব্যবস্থার কাজসহ জল ব্যবস্থাপনার ওপর দীর্ঘমেয়াদী ৫০ বছর মেয়াদী মাস্টার প্ল্যান চালু করার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন।

প্রধান উপদেষ্টা চীনে পাট রপ্তানি সম্প্রসারণের সম্ভাবনাও উত্থাপন করেন এবং লোকোমোটিভ খাতে আরও বেশি চীনা বিনিয়োগের আহ্বান জানান। তিনি চট্টগ্রাম এবং সৈয়দপুর উভয় স্থানে লোকোমোটিভ উৎপাদন ও রক্ষণাবেক্ষণ কেন্দ্র স্থাপনের প্রস্তাব করেন। পাশাপাশি সক্ষমতা বৃদ্ধির কর্মশালা এবং প্রশিক্ষণ কর্মসূচিও উপস্থাপন করা হয়।

কৃষি বাণিজ্য ছিল অগ্রগতির আরেকটি ক্ষেত্র। বাংলাদেশ এই মৌসুমে চীনে আম রপ্তানি শুরু করবে, আগামী বছর কাঁঠাল রপ্তানির সময়সূচি রয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘আমি নিজেই রাষ্ট্রপতি শি’র কাছে এক ঝুড়ি তাজা আম পাঠাবো।’

বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিউর রহমান, বিআইডিএ চেয়ারম্যান আশিক মাহমুদ বিন হারুন, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ তাইয়েব, মুখ্য সচিব সিরাজউদ্দিন মিয়া এবং এসডিজি সমন্বয়কারী লামিয়া মোরশেদ।