চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি:
আমি চুরি করতে এসেছিলাম, কিন্তু সত্যি আমি চোর না। আমার মায়ের অবস্থা খুবই খারাপ, তাই এটা করতে বাধ্য হলাম। আর শাস্তি পেলাম পায়ে সেলাই। আমার পা অনেকখানি কেটে গিয়েছে, আমাকে সবাই মাফ করে দিন। আমি এইচএসসি পাস। কিন্তু জীবনে কিছু করতে পারিনি।
গত শনিবার দিবাগত রাতে চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার দৌলৎগঞ্জ থানা জামে মসজিদে চুরির পর একটি খাতার পাতায় রক্তমাখা হাতে এসব লিখে গেছে এক চোর। ওই রাতেই গুরুতর আহত অবস্থায় অভিযুক্তকে আটক করে জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেছে পুলিশ। পরে চুরির যাবতীয় মালামাল উদ্ধার করে মসজিদ কমিটির কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত শনিবার দিবাগত রাতে দৌলৎগঞ্জ থানা জামে মসজিদে কাঁচের দরজা ভেঙে এক যুবক মসজিদের রশিদ বই, সাউন্ড সিস্টেম, ইয়ার ফোন, মাইক সেটের অংশ বিশেষ চুরি করে নিয়ে যায়। এসময় কাঁচের দরজা ভাঙতে গিয়ে তার হাত-পা কেটে রক্তাক্ত জখম। এছাড়া মসজিদের বাইরে থাকা দান বাক্সটি ভাঙার চেষ্টা করে।
মসজিদের মুয়াজ্জিন আরাফাত হোসেন বলেন, প্রতিদিনের মতো রোববার ফজরের নামাজের আজান দিতে গিয়ে দেখতে পাই মসজিদের কাঁচের দরজার তালা ভাঙা এবং পাশে অনেক রক্ত। মসজিদের মালামাল চুরি হয়ে গেছে এবং দান বাক্স ভাঙার চেষ্টা করা হয়েছে। সেখানে একটি খাতায় ‘আমি পেশাদার চোর নই, আমার মা অসুস্থ, মায়ের জন্য চুরি করলাম। আমাকে সবাই মাফ করে দেবেন। আমি এইচএসসি পাস। কিন্তু জীবনে কিছু করতে পারিনি’ লিখে রেখে যায়।
মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক ফজলুর রহমান বলেন, ঘটনার পর আমরা চোরকে খোঁজাখুঁজি করতে থাকি। পরে জানতে পারি, অভিযুক্ত যুবক জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসারত। সেখানে দিয়ে দেখি গুরুতর অবস্থায় চিকিৎসাধীন। চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য যশোর হাসপাতালে রেফার্ড করেছে তাকে।
তিনি আরও বলেন, ওই যুবক তার নাম আপন বলে জানিয়েছে। বাড়ি ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলার বলুহর গ্রামে। পরে জীবননগর থানার পুলিশ চুরি হওয়া মালামাল উদ্ধার করেছে।
জীবননগর থানা পুলিশের পরিদর্শক (ওসি) এসএম জাবিদ হোসেন বলেন, চোরকে শনাক্ত করা গেছে। মালামালও উদ্ধার করা হয়েছে। মসজিদের কাঁচের দরজা ভাঙতে গিয়ে সে গুরুতর জখম হয়েছে। ওই রাতেই সন্দেহজনকভাবে পুলিশ তাকে আটক করে আহত অবস্থায় জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাকে প্রথমে চোর হিসেবে শনাক্ত করা যায়নি। তার অস্বাভাবিক আচরণ ছিল। উন্নত চিকিৎসার জন্য যশোর সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ওই যুবকের মায়ের সঙ্গে কথা হয়েছে। সে মানসিকভাবে অসুস্থ বলে জানিয়েছেন। তার বাড়ি ঝিনাইদহ জেলার কালিগঞ্জে। মালামাল উদ্ধার করে মসজিদ কমিঠির নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে। তাদের কোনো অভিযোগ নেই।