ছয় মাসের কাজ শেষ হয়নি চার বছরেও!

প্রকাশিত: ১১:০১ পূর্বাহ্ণ, মে ১৮, ২০২৪

জেলা প্রতিনিধি,রাজশাহীঃ 

রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজে ১ হাজার কেভিএ বিদ্যুতের সাবস্টেশন নির্মাণ ও ৫০০ কেভিএ জেনারেটর স্থাপনের জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ২০২০ সালের এপ্রিলে কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। চুক্তিপত্র অনুযায়ী ২ কোটি ৬৭ লাখ ৬৬ হাজার ৬৫৭ টাকার কাজ ছয় মাসের মধ্যে শেষ করার শর্ত ছিল। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চার বছরেও কাজটি শেষ করতে পারেনি। তবে উক্ত কাজের সমুদয় বিল উত্তোলন করে নিয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দীর্ঘ চার বছরেও কাজ শেষ না হওয়ায় রাজশাহী কলেজের অধ্যক্ষ ডা. মো. নওশাদ আলী তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে গণপূর্ত বিভাগকে চিঠি দেন। অধ্যক্ষের চিঠি পেয়ে নড়েচড়ে বসেন গণপূর্ত বিভাগের কর্মকর্তারা। সম্প্রতি রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজে গিয়ে দেখা যায়, ঠিকাদারের কর্মচারীরা কেবল লিংক স্থাপনের কাজ প্রায় শেষ। তবে অভিযোগ উঠেছে, ঠিকাদার অত্যন্ত নিম্নমানের কেবল দিয়ে দায়সারাভাবে কাজ শেষ করছে। ১৬ মে (বৃহস্পতিবার) পর্যন্ত সাবস্টেশন ও জেনারেটর মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি।

এ বিষয়ে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. মো. নওশাদ আলী গতকাল শুক্রবার বলেন, গণপূর্ত বিভাগের সঙ্গে ঠিকাদারের চুক্তি হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী সাবস্টেশন ও জেনারেটর স্থাপন শেষে মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করবে। কিন্তু দীর্ঘ সময় পার হলেও গণপূর্ত বিভাগ সাবস্টেশন ও জেনারেটর হস্তান্তর করেনি। বাধ্য হয়ে তিনি কিছুদিন আগে এক সপ্তাহের মধ্যে সাবস্টেশন ও জেনারেটর হস্তান্তরের জন্য গণপূর্ত বিভাগকে আলটিমেটাম দিয়েছেন। এক সপ্তাহের মধ্যে সাবস্টেশন ও জেনারেটর হস্তান্তর না করলে তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করার কথা জানিয়ে দেন। এরপর তড়িঘড়ি করে সাবস্টেশনের কেবল বসানোর কাজ শুরু করেছে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন।

সূত্র জানায়, রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজে সার্বক্ষণিক বিদ্যুত্ সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য ১ হাজার কেভিএ সাবস্টেশনসহ বিল্ডিং এবং ৫০০ কেভিএ জেনারেটর স্থাপনের ঠিকাদারি কাজটি পেয়েছেন রংপুরের মেসার্স সৈয়দ সাজ্জাদ আলী।

প্রকল্প প্রাক্কলন প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ একটি জনগুরুত্বপূর্ণ সরকারি শিক্ষা ও গবেষণাধর্মী প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটিতে সুষ্ঠুভাবে বিভিন্ন সেবা প্রদান ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি ব্যবহূত হয়। কিন্তু অধিকাংশ সময়ে বিদ্যুত্ না থাকায় প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম ব্যাহত হয়। ফলে সার্বক্ষণিক বিদ্যুত্ সরবরাহ নিশ্চিত করতে একটি ১ হাজার কেভিএ সাবস্টেশনসহ বিল্ডিং ও ৫০০ কেভিএ জেনারেটর স্থাপন জরুরি।

সূত্র মতে, ২০২০ সালের ২২ এপ্রিলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করেন রাজশাহী গণপূর্ত বিভাগ-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী ফেরদৌস শাহনেওয়াজ কান্তা। মেয়াদ উত্তীর্ণ ও সমুদয় বিল পরিশোধের বিষয়ে রাজশাহী গণপূর্ত বিভাগ-২ এর বর্তমান নির্বাহী প্রকৌশলী আবু হায়াত মুহাম্মদ শাকিউল আজম বলেন, এটি একটি চলমান কাজ। এখানে অনেক ফ্যাক্টর আছে। ইতিমধ্যে কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এখন পরিদর্শন ও হস্তান্তর বাকি আছে। শিগিগরই তা সম্পন্ন করা হবে।

সূত্র জানায়, ২০১৯-২০ অর্থবছরের ছয় মাসের কাজটি চার বছরেও শেষ না হলেও ইতিমধ্যে গণপূর্ত বিভাগ ঠিকাদারকে সমুদয় বিল পরিশোধ করে দিয়েছে। ফলে ঠিকাদার ভবন নির্মাণের পর সাবস্টেশন ও জেনারেটর স্থাপন না করেই ফেলে রাখে। সমপ্রতি রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ, গণপূর্ত বিভাগকে চাপ দিলে ঠিকাদার কেবল বসানোর কাজ শুরু করে।

ঠিকাদারের স্থানীয় প্রতিনিধি রাজশাহী মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক (অব্যাহতি নেওয়া) মাইনুল চৌধুরী শান্ত বলেন, করোনার সময়ে গণপূর্তের তহবিল না থাকায় কাজটি শেষ করতে বিলম্ব হয়েছে। এছাড়া লাইসেন্স বোর্ড ও নেসকোর অনুমতি পেতে সময় লেগেছে। কাজের সমুদয় বিল প্রাপ্তির সত্যতা স্বীকার করে তিনি বলেন, কাজটি আগেই শেষ হয়েছে। শিগিগরই কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

এই কাজ তদারকির দায়িত্বপ্রাপ্ত গণপূর্ত-২ এর উপসহকারী প্রকৌশলী মো. আয়াতুল্লাহ বলেন, লাইসেন্স বোর্ড ও নেসকোর অনুমতি পেতে ছয় মাস লেগেছে। আরেকটি কাজে আট মাস বিলম্ব হয়েছে। ছয় মাসের কাজ শেষ হতে কীভাবে চার বছর লাগে? এমন প্রশ্নের কোনো সদুত্তর তিনি দিতে পারেননি। কাজের সমুদয় বিল পরিশোধের বিষয়টি মনে নেই বলে জানান তিনি।