
রাজবাড়ী প্রতিনিধি:
রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার গড়াই নদীর ওপর তিন জেলার মানুষের যাতায়াতের সুবিধার জন্য ২০২০ সালের জুনে শুরু হয় ৬৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের সেতু নির্মাণকাজ। ২০২৩ সালের জুনে নির্মাণকাজ শেষ করার কথা থাকলেও ২০২৫-এ এসেও শেষ হয়নি। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
রাজবাড়ী, মাগুরা ও ঝিনাইদহ—এই তিন জেলার সীমান্তবর্তী পাংশা উপজেলার নাদুরিয়া, ঝিনাইদহ জেলার শৈলকুপা উপজেলার লাঙ্গলবাঁধ ও মাগুরা জেলার শ্রীপুর উপজেলার জিসি সড়ক স্পর্শ করেছে এই গড়াই নদী। সেতুর কাজ দ্রুত শেষ হলে রাজবাড়ী জেলা হতে সাত জেলার যোগাযোগের ক্ষেত্রে দেখা দেবে নতুন দিগন্ত। এই সেতু চালু হলে রাজবাড়ী থেকে মাগুরা ও ঝিনাইদহসহ পাশ্ববর্তী জেলাগুলোর দূরত্ব কমে আসবে।
রাজবাড়ীর এলজিইডি নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, পল্লী সড়কে গুরুত্বপূর্ণ সেতু নির্মাণ প্রকল্পের (সিআইবিআরআর) আওতায় ৬৩ কোটি ৯১ লাখ ৬৮ হাজার ১৭০ টাকা ব্যয়ে সেতু নির্মাণের চুক্তি হয়। তিন জেলার মানুষের যোগাযোগের সুবিধার জন্য গড়াই নদীর ওপর ৬৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের পিএসসি গার্ডার সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০২০ সালের ৩ জুন। সেতুর কাজ দেওয়া হয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মীর হাবিবুল আলমের (জেভি) এমএম বিল্ডর্স ইঞ্জিনিয়ারিংকে। ২০২৩ সালের ৩ জুন কাজের মেয়াদ শেষ হয়। পরে দ্বিতীয় দফায় কাজের মেয়াদ বাড়ানো হয়।
সরেজমিনে রাজবাড়ী পাংশা উপজেলার কসবামাজাইল ইউনিয়নের নাদুরিয়া ঘাট এলাকায় দেখা যায়, সেতুর নির্মাণকাজ চলছে ঢিলেঢালাভাবে। পর্যাপ্ত লোকবল নেই সেখানে। সবগুলো পিলারের কাজ শেষ হয়েছে। তবে পিলারের ওপর পাঁচটি স্প্যান বসাতে বাকি রয়েছে। স্প্যান বসানোর জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে দুটি গার্ডার। বাকি তিনটি গার্ডার বসানোর কোনো দৃশ্য চোখে পড়েনি।
জমি অধিগ্রহণের ব্যাপারে স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা হলে তারা বলেন, ২০২৩ সালের দিকে একবার জমি অধিগ্রহণের জন্য কথাবার্তা বলেছিলেন তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ ভূমি অফিসের লোকজন। এরপর ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে অধিগ্রহণ হবে না বলে জানিয়ে দেয়। নতুন করে আবার জমি অধিগ্রহণের কথা শোনা যাচ্ছে।
নির্মাণকাজের ধীরগতি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তারা বলেন, ২০২০ সালে সেতু নির্মাণকাজ শুরু হয়। ২০২৫ সালে এসে শেষ করেতে পারেনি সরকার। আওয়ামী লীগ সরকার সেতু নির্মাণের কাজ শেষ করতে পারেনি। বেশিরভাগ সময় এখানে সাত থেকে ১০ জন শ্রমিক কাজ করেন। এভাবে এত বড় সেতুর নির্মাণকাজ শেষ করা সম্ভব নয়। তা ছাড়া ভূমি অধিগ্রহণ তো শুরুই হয়নি। দ্রুত সময়ের মধ্যে সেতুটির নির্মাণকাজ শেষ করার দাবি স্থানীয় বাসিন্দাদের।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি কে. এম. ইয়াহিয়া বলেন, সেতু নির্মাণের কাজ ৮০ শতাংশ শেষ হয়েছে। সংযোগ সড়কের জমি অধিগ্রহণ না করায় বাকি কাজ করা হচ্ছে না।
পাংশা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম আবু দারদা বলেন, সেতু নির্মাণকাজ নিয়ে জেলা উন্নয়ন সমন্বয় সভায় আলোচনা হয়েছে। কাজের সঙ্গে ভূমি অধিগ্রহণের কিছু জটিলতা রয়েছে। সেগুলো নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে।
রাজবাড়ী এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী ইউসুফ হোসেন বলেন, মাগুরা, রাজবাড়ী ও ঝিনাইদহ জেলার সীমান্ত স্পর্শ করে রয়েছে গড়াই সেতু। সেতু নির্মাণকাজে ধীরগতি ছিল এটা সঠিক। বর্তমানে নির্মাণকাজের গতি বৃদ্ধি পেয়েছে। ভূমি অধিগ্রহণের একটি ব্যাপার রয়েছে। সেটি শেষ হলে কাজের গতি আরও বৃদ্ধি পাবে।