নিজস্ব প্রতিবেদক:
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমদের অপসারণের দাবি তুলেছেন বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন (বিএইচআরসি)। একইসঙ্গে ড. কামালের পদে যোগ্য ব্যক্তিকে অধিষ্ঠিত করার আহ্ববানও জানানো হয় সংগঠনটির পক্ষ থেকে।
রোববার (১ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানান সংগঠনের সভাপতি প্রকৌশলী কাজী রেজাউল মোস্তফা।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কর্তৃক মিথ্যা মামলায় কারাবন্দি বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের মহাসচিব ড. সাইফুল ইসলাম দিলদারের মুক্তি এবং সব মানবাধিকার কর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যানকে অপসারণের দাবিতে বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন (বিএইচআরসি) আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি অভিযোগ করেন, জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশন তথা কাউন্সিলের নিবন্ধিত সদস্য প্রতিষ্ঠান হিসেবে জাতিসংঘের এশিয়া প্যাসিফিক রিজিওনসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কনফারেন্সগুলোতে বেসরকারি মানবাধিকার প্রতিষ্ঠান হিসেবে জাতিসংঘের আমন্ত্রণ লাভ এবং কনফারেন্সগুলোতে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করে আসছে বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন। বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন জাতিসংঘের কনফারেন্সগুলোতে অংশগ্রহণকে কেন্দ্র করে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের তৎকালীন চেয়ারম্যান নাছিমা বেগম প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের বিরুদ্ধে উদ্ভট বক্তব্য প্রদান করতে থাকেন। জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশন নাকি ভুল করে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের আমন্ত্রণপত্র বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনকে পাঠিয়ে দিয়েছে, যা যথারীতি হাস্যকর। জাতীয় মানবাধিকার কমিশন গঠনের ৯ বছর পূর্বে জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশন বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনকে বেসরকারি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিসেবে নিবন্ধন প্রদান করে এবং নিবন্ধন পাওয়ার পূর্ব থেকেই জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সম্মেলনগুলোতে অংশগ্রহণ করে আসছে এনজিও প্রতিষ্ঠান হিসেবেই।
তিনি আরও বলেন, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের নাছিমা বেগম বিভিন্নভাবে বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনকে হয়রানি করতে থাকে। বিএইচআরসি বিদেশে তথ্য পাচার করছে এমন অজুহাতে বিভিন্ন সময় সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা কর্তৃক তদন্তের নামে হয়রানি করে। এরই মধ্যে নাছিমা বেগমের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনিও নাছিমা বেগমের দিক নির্দেশনারই বাস্তবায়নের লক্ষ্যে নিজের ক্ষমতার অপব্যবহার করে। জয়েন্ট স্টক অব কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মস এবং এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর রেজিস্ট্রার বরাবর পত্র পাঠিয়ে প্রভাব খাটিয়ে বিএইচআরসির নিবন্ধন বাতিল করে। বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন আদালতের দ্বারস্থ হয় এবং কেন সরকারি একটি প্রতিষ্ঠান অপর একটি প্রতিষ্ঠানকে প্রভাবিত করে নিবন্ধন বাতিল করা হলো এই মর্মে হাইকোর্ট জয়েন্ট স্টক অব কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মসের বিরুদ্ধে রুলনিশি জারি করে। অপরদিকে এনজিও বিষয়ক ব্যুরোকেও বিষয়টি ডিসপোজালের অর্ডার এবং পরবর্তীতে রুলনিশি জারি করে। কিন্তু উভয় দুটি ডিপার্টমেন্ট জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চাপে বিষয়টি আজ অবধি সুরাহা করেনি।
তিনি আরও বলেন, দীর্ঘ ১৫ মাস ধরে মহাসচিব ড. সাইফুল ইসলাম দিলারকে মিথ্যা মামলায় আটক রাখা হয়েছে। বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের ওয়েবসাইট ও নির্দেশিকা বই থেকে স্বেচ্ছাসেবী মানবাধিকার নেতৃবৃন্দের ফোন নম্বর সংগ্রহ করে বহুজনকে ডিবি অফিসে ডেকে নিয়ে হয়রানি করা হয়। চাঁদা চাওয়া হয়। চাঁদা দিতে না পারলে আদালতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
বর্তমান অন্তবর্তীকালীন উপদেষ্টারা জনগণের স্বপ্ন পূরণে আশা জাগাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা আশাবাদী দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, মানুষের ভোটের অধিকারসহ মৌলিক অধিকার বাস্তবায়নে এবং দেশ উন্নয়নে এক ইতিহাস রচনা করবেন, যা অনন্তকাল স্মরণ রাখবে বাংলার আপামর জনগণ। অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের উপদেষ্টাদের
দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিবকে মুক্তিদান, মিথ্যা মামলা থেকে সব মানবাধিকার কর্মীদের দায়মুক্তি এবং জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিনকে অপসারণ করে সেখানে যোগ্য ব্যক্তিকে চেয়ারম্যান পদে অধিষ্ঠিত করার জোর আহ্বান জানাচ্ছি।
কেন তাদের সঙ্গে এমন করা হচ্ছে সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা সত্য প্রকাশ করেছি বলে আমাদের ওপর অত্যাচার, অবিচার নেমে এসেছে। জাতীয় মানবাধিকার কমিশন লেজুড়বৃত্তি করেছে। যে সত্য তাদের প্রকাশ করার কথা তা তারা বলতে পারে না। কিন্তু আমরা সত্য প্রকাশ করেছি বলেই তারা আমাদের সঙ্গে শত্রুতা করছে।
এসময় সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের সিনিয়র ডেপুটি গভর্নর আক্তারুজ্জামান বাবুল, বিশেষ প্রতিনিধি মো. সুমন মাস্টার, ঢাকা দক্ষিণ আঞ্চলিক শাখার সভাপতি মো. নাসির উদ্দিনসহ ঢাকা মহানগর, জেলা পর্যায়ে সক্রিয় থাকা মানবাধিকার কর্মীরা।