টিফিনের জমানো টাকায় ফরম কিনে মেডিকেলে চান্স, দুশ্চিন্তায় পরিবার
নিউজ পোস্ট বিডি নিউজ পোস্ট বিডি
নিউজ পোস্ট বিডি
গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি:
টিফিনের টাকা জমিয়ে ফরম কিনে অংশগ্রহণ করেন মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায়। সেই পরীক্ষায় মেধা তালিকায় সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজে চান্স পেয়েছেন গোপালগঞ্জের নুরনাহার অন্তরা। তবে অর্থাভাবে ভর্তি নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন নুরনাহারের বাবা রুকু মল্লিক। তিনি পেশায় একজন রাজমিস্ত্রী। দিনে যা আয় তা দিয়েই চলে তাদের চার সদস্যের সংসার। তার পক্ষে মেয়ের মেডিকেল কলেজে ভর্তির খরচ বহন ও পড়াশোনা চালিয়ে নেওয়া প্রায় অসম্ভব। তাই নুরনাহারের এমন সাফল্যের পরও দুশ্চিন্তায় পরিবার।
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার তেঘরিয়া এলাকার দিনমজুর রুকু মল্লিক ও গৃহিণী পারুল বেগমের বড় মেয়ে নুরনাহার অন্তরা। ছোটবেলা থেকেই নুরনাহার অন্তরা পড়ালেখায় বেশ ভালো। ২০২২ সালে জেলা শহরের সরকারি বীনাপানি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। ২০২৪ সালে সরকারি বঙ্গবন্ধু কলেজ থেকেও জিপিএ-৫ পেয়ে কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হন। সর্বশেষ গত ১৭ জানুয়ারি দেশব্যাপী মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় টিফিনের জমানো টাকা দিয়ে ফরম কিনে অংশগ্রহণ করেন। ২০ জানুয়ারি ফলাফল ঘোষণার পর জানতে পারেন, নুরনাহার সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজে ভর্তির চান্স পেয়েছে। এ খবর জানার পর থেকে নুরনাহারের পরিবার খুশি হলেও একই সঙ্গে অর্থাভাবে ভর্তি নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন তারা। আগামী ৪ ফেব্রুয়ারি নুরনাহারের ভর্তির শেষ দিন। সরকার ও সমাজের স্বহৃদয়বান ব্যক্তিদের কাছে সহযোগিতার জন্য আবেদন জানিয়েছে তার পরিবার।
নুরনাহার অন্তরা বলেন, টিফিনের টাকা জমিয়ে আমি ফরম কিনে গত ১৭ জানুয়ারি মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করি। ২০ তারিখে ফলাফল ঘোষণার পর জানতে পারি, সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজে চান্স পেয়েছি। এ ঘটনায় আমিসহ পরিবার খুশি থাকলেও কিছুটা দুশ্চিন্তায় আছি। মেডিকেলে ভর্তিসহ পড়াশোনার যে ব্যয় বহুল খরচ তা আমার পরিবারের পক্ষে চালানো সম্ভব নয়। আমার বাবা একজন দিনমজুর। প্রতিদিন যা আয় হয় তা দিয়ে আমাদের সংসার চালানো কষ্টকর। আমি মেডিকেলে পড়াশোনা করে একজন ভালো ডাক্তার হতে চাই। আমার এই স্বপ্ন যেন ভেঙে না যায় এজন্য সরকারের কাছে অনুরোধ- তারা যেন আমার পাশে দাঁড়ায়।
নুরনাহার অন্তরার মা পারুল বেগম বলেন, আমার মেয়ে ছোট থেকেই অনেক মেধাবী। শহরের একটি ভালো স্কুলে ভর্তির চান্স পাওয়ার পর আমরা বেশ দুশ্চিন্তায় ছিলাম কিভাবে পড়ালেখার খরচে জোগাব। তখন ওর মেধা দেখে স্কুলের শিক্ষকরা আমাদের আশ্বস্ত করেছিলেন যে, আপনার মেয়ের পড়ালেখা চালিয়ে যান। তখন স্কুলের শিক্ষকরা আমাদের অনেক সহযোগিতা করেছেন। আমার মেয়ে এসএসসি ও এইচএসসিতে গোল্ডেন এ প্লাস পেয়ে পাস করেছে। কয়েকদিন আগে মেডিকেল ভর্তির ফরম কেনার আগে আমাকে বলেছিল, মা আমি ফরম কিনতে চাই। আমি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে চাই।
‘ফরম কিনে অংশগ্রহণ করার পরে গত ২০ তারিখে আমাকে এসে জড়িয়ে ধরে কান্না করে বলল, মা আমি মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেয়েছি। এই খবর শোনার পরে গর্বে আমার বুকটা ভরে গেছে। আমার মেয়ে ডাক্তার হবে, মানুষের সেবা করবে ভাবতেই আমাদের অন্যরকম লাগে। তবে মেডিকেলে পড়ালেখার খরচ অনেক হওয়ায় কিছুটা দুশ্চিন্তায় আছি আমরা। কিভাবে এত খরচ চালাব। সবার কাছে অনুরোধ থাকবে আমাদের পাশে দাঁড়ানোর।’
নুরনাহার অন্তরার বাবা রুকু মল্লিক বলেন, আমি এই বৃদ্ধ বয়সেও রাজমিস্ত্রির কাজ করি। কষ্ট হলেও মেয়ের পড়ালেখা কখনো বন্ধ করিনি। আমার মেয়ে মেডিকেলে পড়ালেখা করবে জানতে পেরে গর্বে আমার বুকটা ভরে গেছে। যতই কষ্ট হোক আমার মেয়েকে আমি একজন ভালো ডাক্তার বানাতে চাই। আমার মেয়ে যেন ডাক্তার হয়ে মানুষের সেবা করতে পারে।
এ বিষয়ে নুরনাহারের প্রতিবেশী গৌরাঙ্গ বলেন, নুরনাহারের এমন সাফল্যে আমরা এলাকাবাসী গর্বিত। অভাব অনটনের সংসারেও সে মেডিকেলে ভর্তির চান্স পেয়েছে। এই খবর জানার পর থেকে আমাদের এলাকাবাসীর মধ্যেও একটি খুশির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। তবে নুরনাহার অন্তরার পরিবারের অস্বচ্ছলতার কারণে আমরাও চিন্তায় আছি। কিভাবে এত ব্যয়বহুল খরচ তারা চালাবে। যদিও আমরা এলাকাবাসী তার পাশে আছি। তাদের সব ধরনের সাপোর্ট দিয়ে যাব।
গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসক মুহম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, বিষয়টি আপনাদের মাধ্যমে জানতে পেরেছি। আমরা দ্রুতই ওই শিক্ষার্থীর খোঁজখবর নিয়ে তাকে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করব।