ট্রেনের টিকিট কালোবাজারিতে রেলকর্মী ও অনলাইন প্রতিষ্ঠান সহজ ডটকম

মূলহোতা উত্তম ও সেলিমসহ চক্রের ১৪ সদস্য গ্রেপ্তার

প্রকাশিত: ১২:০৭ পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ২৭, ২০২৪

সাইফুল ইসলাম:

রেলস্টেশনের টিকিট কাউন্টারম্যান ও অনলাইনে টিকিট বিক্রয় করা প্রতিষ্ঠান সহজ ডটকমের অসাধু কর্মকর্তা, সার্ভার রুম ও আইটি সদস্যদের সহযোগিতায় দীর্ঘদিন ধরে ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি করে আসছিল সংঘবদ্ধ কয়েকটি চক্র। এ ছাড়া সংরক্ষণ করা জনসাধারণের এনআইডির তথ্য ব্যবহার করে এমনকি সার্ভার ডাউন করে অনলাইনে টিকিট সংগ্রহ করতো এসব চক্র। ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি চক্র উত্তম ও সেলিম সিন্ডিকেটের মূলহোতাসহ ১৪ জন সক্রিয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। এসময় তাদের কাছ থেকে সহস্রাধিক আসনের টিকিট, মোবাইল সেট ও টিকিট বিক্রির নগদ টাকা উদ্দার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতরা হলেন- ট্রেনের টিকেট কালোবাজারির সেলিম সিন্ডিকেটের মূলহোতা মো. সেলিম (৫০), তার প্রধান সহযোগী মো. আনোয়ার হোসেন ওরফে কাশেম (৬২), অবনী সরকার সুমন (৩৫), মো. হারুন মিয়া (৬০), মো. মান্নান (৫০), মো. আনোয়ার হোসেন ওরফে ডাবলু (৫০), মো. ফারুক (৬২), মো. শহীদুল ইসলাম বাবু (২২), মো. জুয়েল (২৩) ও মো. আব্দুর রহিম (৩২)। পরে তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বিমানবন্দর রেলস্টেশন এলাকায় থেকে উত্তম সিন্ডিকেটের মূলহোতা উত্তম চন্দ্র দাস (৩০), তার প্রধান সহযোগী মো. মোর্শিদ মিয়া ওরফে জাকির (৪৫), আব্দুল আলী (২২) ও মো. জোবায়েরকে (২৫) গ্রেপ্তার করা হয়। আজ শুক্রবার (২৬ জানুয়ারি) দুপুরে কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।


তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার (২৫ জানুয়ারি) রাতে রাজধানীর কমলাপুর ও বিমানবন্দর এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে র‌্যাব-৩ এর একটি দল। এ সময় তাদের কাছ থেকে হয় ১ হাজার ২৪৪টি আসনের টিকিট, ১৪টি মোবাইল ফোন এবং টিকিট বিক্রির নগদ ২০ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।
খন্দকার আল মঈন বলেন, অনলাইনে বা রেল স্টেশনের টিকিট কাউন্টারে টিকিট পাওয়া না গেলেও কালোবাজারে বেশি দামে টিকিট বিক্রি হতে দেখা যায়। টিকিট কালোবাজারিরা বিভিন্ন কৌশলে ট্রেনের টিকিট অগ্রিম সংগ্রহ করে অবৈধভাবে নিজেদের কাছে মজুত করে রেখে সাধারণ যাত্রীদের কাছ দেড় থেকে দুই গুণ বেশি দামে টিকিট বিক্রি করছে। চাহিদা অনুযায়ী টিকিট না পাওয়ার এবং টিকিট কালোবাজারিরা বেশি দামে টিকিট বিক্রির বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় ব্যাপক সমালোচিত হয়। ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি প্রতিরোধ ও কালোবাজারিদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তাররা ট্রেনের টিকিট কালোবাজারির সঙ্গে তাদের সংশি¬ষ্টতার বিষয়ে তথ্য দিয়েছে।
র‌্যাবের মুখপাত্র বলেন, কমলাপুর রেলস্টেশনে সেলিম সিন্ডিকেটের মূলহোতা সেলিম এবং বিমানবন্দর রেলস্টেশনে উত্তম সিন্ডিকেটের মূলহোতা উত্তমের নেতৃত্বে এ চক্রটি সংঘবদ্ধভাবে দীর্ঘদিন ধরে মহানগর প্রভাতী, ত‚র্ণা নিশিথা, চট্টলা এক্সপ্রেস, উপবন এক্সপ্রেস, মহানগর এক্সপ্রেস, পারাবত এক্সপ্রেস, উপক‚ল এক্সপ্রেস, জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস, কালনী এক্সপ্রেসসহ বিভিন্ন ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি করে আসছিল। গ্রেপ্তার সেলিম এবং উত্তমের নেতৃত্বে তার সহযোগীরা প্রথমত ট্রেনের কাউন্টারে বিভিন্ন ভ্রাম্যমাণ যাত্রী, রেলস্টেশনের কুলি, স্টেশনের আশেপাশের এলাকার টোকাই, রিকশাওয়ালা ও দিনমজুরদের টাকার প্রলোভন দেখিয়ে লাইনে দাঁড় করিয়ে টিকিট সংগ্রহ করত।
এক্ষেত্রে তাদের প্রত্যেককে ৪টি করে টিকিট সংগ্রহ করার বিনিময়ে ১০০ টাকা করে দেওয়া হতো। এ ছাড়াও কাউন্টারে থাকা কিছু অসাধু টিকিট বুকিং কর্মচারীদের দিয়ে বিভিন্ন সাধারণ যাত্রীদের টিকিট কাটার সময় এনআইডি সংগ্রহ করে রাখে এবং পরবর্তীতে সেগুলো ব্যবহার করে সংরক্ষণকৃত প্রতিটি এনআইডি দিয়ে ৪টি করে ট্রেনের টিকিট সংগ্রহ করে আসছিল। এভাবে তারা প্রতিদিন প্রায় ৫ শতাধিক টিকিট সংগ্রহ করতো। অনেক ক্ষেত্রে টিকিট কাউন্টারে নিজেরা লাইনে দাঁড়িয়ে এবং কৌশলে লাইনে অপেক্ষমান টিকিটপ্রত্যাশী সাধারণ যাত্রীদের এনআইডি ব্যবহার করে ৪টি টিকিট কিনে ৩টি টিকিট নিজেরা তার কাছ থেকে টাকা দিয়ে টিকিটগুলো কিনে নিতো।
তিনি বলেন, গ্রেপ্তাররা ঈদ, পুজা, সাপ্তাহিক ছুটিসহ বিশেষ ছুটির দিনকে উপলক্ষ করে রেলস্টেশনে কর্মরত কিছু অসাধু কর্মচারী এবং অনলাইনে টিকিট ক্রয়ের জন্য ব্যবহৃত ভেন্ডর প্রতিষ্ঠান সহজ ডটকমের কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও সার্ভার রুম ও আইটি সদস্যদের সহযোগিতায় তাদের কাছে সংরক্ষিত জনসাধারণের এনআইডির তথ্য ব্যবহার করে এমনকি সার্ভার ডাউন করে তারা অনলাইনে টিকিট সংগ্রহ করতো।
র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক আরও বলেন, ঈদের ছুটিসহ বিভিন্ন ছুটিকে কেন্দ্র করে গ্রেপ্তাররা প্রতিটি টিকেট ৩-৪ গুণ বেশি মূল্যে বিক্রি করে। প্রতিটি টিকিট তারা দেড় গুণ থেকে দুই গুণে বিক্রি করে এই লভ্যাংশের ৫০ শতাংশ গ্রেপ্তাররা নিতো এবং বাকি ৫০ শতাংশ কাউন্টারে থাকা বুকিং কর্মচারী ও তাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, সহজ ডটকমের কর্মচারী-কর্মকর্তা ও আইটি বিশেষজ্ঞদের দেওয়া হতো।
কমান্ডার মঈন বলেন, গ্রেপ্তাররা বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের দিয়ে অনলাইনে টিকিট কেটে সেগুলো তাদের কাছ থেকে সংগ্রহ করতো। গ্রেপ্তাররা স্টেশনে থাকা তাদের সিন্ডিকেটের সদস্যদের দিয়ে কাউন্টার থেকে স্ট্যান্ডিং টিকেট সংগ্রহ করতো। এসব টিকিটের মূল্য কাউন্টারের বুকিং কর্মচারীদের সঙ্গে তারা ভাগ করে নিতো। ফলে রেলওয়ে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এভাবে গ্রেপ্তাররা অবৈধভাবে বিভিন্ন পন্থায় বিপুল সংখ্যক ট্রেনের টিকিট সংগ্রহ করতো। গ্রেপ্তার সেলিম ও উত্তমের নেতৃত্বে তার সহযোগীরা উপযুক্ত সময় বুঝে সংগ্রহকৃত টিকিট নিয়ে রেলস্টেশনের ভেতরে অবস্থান করে। রেলস্টেশনে এসে টিকিট না পাওয়া সাধারণ যাত্রীদের কাছে গ্রেপ্তাররা টিকিট বিক্রির জন্য ঘুরাঘুরি করে এবং বেশি দামে টিকিট বিক্রি করে। এ ছাড়াও ট্রেন ছাড়ার সময় যত সন্নিকটে আসতে থাকে তাদের মজুত করা কালোবাজারি টিকিটের দাম তত বাড়তে থাকে এবং সুযোগ বুঝে অনেক ক্ষেত্রে টিকিটের দাম দিগুণেরও বেশি বাড়িয়ে দেয়।
কমান্ডার মঈন জানান, গ্রেপ্তার সেলিম দীর্ঘ প্রায় ৩৫ বছর ধরে টিকিট কালোবাজারির সঙ্গে জড়িত। তিনি কমলাপুর রেলস্টেশনে ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি সেলিম সিন্ডিকেটের মূলহোতা। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় টিকিট কালোবাজারির দায়ে ৭টি মামলা রয়েছে এবং এসব মামলায় বিভিন্ন মেয়াদে কারাভোগও করেছেন তিনি। সে জামিনে মুক্তি পেয়ে আবারো টিকিট কালোবাজারির কার্যক্রমে লিপ্ত হয়।
তিনি বলেন, গ্রেপ্তার আনোয়ার হোসেন ওরফে কাশেম প্রায় ১৫ বছর ধরে ট্রেনের টিকিট কালোবাজারির সঙ্গে জড়িত। তিনি গ্রেপ্তার সেলিমের অন্যতম প্রধান সহযোগী। মূলত তার দায়িত্ব ছিল কাউন্টার থেকে ট্রেনের টিকিট সংগ্রহ করা। এর আগে তিনি মাদক মামলাসহ একাধিক মামলায় বিভিন্ন মেয়াদে কারাভোগ করেছেন।
এ ছাড়াও গ্রেপ্তার অবনী সরকার ও হারুন মিয়ার দায়িত্ব ছিল চট্টগ্রাম এলাকার কাস্টমার সংগ্রহ করা। একইভাবে মান্নান এবং আনোয়ার ওরফে ডাবলুর দায়িত্ব ছিল সিলেট এলাকার কাস্টমার সংগ্রহ করা। ফারুক এবং শহীদুল ইসলাম বাবুর দায়িত্ব ছিল ভৈরব ও কিশোরগঞ্জের কাস্টমার দেখাশোনা করা। জুয়েল এবং আব্দুর রহিমের দায়িত্ব ছিল ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও আখাউড়ার যাত্রী সংগ্রহ করা। এছাড়াও গ্রেপ্তার সবার বিরুদ্ধে টিকিট কালোবাজারির মামলা রয়েছে।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গ্রেপ্তার উত্তম প্রায় ১৫ বছর ধরে ট্রেনের টিকেট কালোবাজারির সঙ্গে জড়িত। তিনি বিমানবন্দর রেলস্টেশনের টিকিট কালোবাজারি চক্র উত্তম সিন্ডিকেটের মূলহোতা। তার সহযোগী গ্রেপ্তার আলী ও ফারুকসহ রাজধানীর আশকোনা এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় অবস্থান করে এসব কার্যক্রম পরিচালনা করত। তিনি শারীরিক প্রতিবন্ধী এবং এই সহানুভ‚তিকে কাজে লাগিয়ে রেলস্টেশন এলাকায় সবসময় অবস্থান করে টিকিট কালোবাজারি চক্র গড়ে তোলে। উত্তমের বিরুদ্ধে টিকিট কালোবাজারির দায়ে ৪টি মামলা রয়েছে। এসব মামলায় তিনি বিভিন্ন মেয়াদে কারাভোগ করেছেন। জামিনে মুক্তি পেয়ে আবারও টিকিট কালোবাজারির কাজে লিপ্ত হন।
তিনি আরও বলেন, গ্রেপ্তার মোর্শেদ মিয়া স্থানীয় একটি কলেজ থেকে ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। তিনি প্রায় ৫ বছর ধরে গ্রেপ্তার উত্তমের প্রধান সহযোগী হিসেবে টিকিট কালোবাজারির সঙ্গে জড়িত। তার মূল দায়িত্ব ছিল অনলাইনে টিকিটপ্রত্যাশীদের সঙ্গে টিকিটের দর কষাকষি করে দাম নির্ধারণ করা। টিকিট কালোবাজারির মামলায় তিনি এর আগে কারাভোগ করেছেন। এ চক্রের অন্য সদস্যদের মধ্যে আব্দুল আলীর দায়িত্ব ভৈরব ও কিশোরগঞ্জ আর জুবায়েরের দায়িত্ব ছিল চট্টগ্রাম ও সিলেট এলাকার যাত্রী সংগ্রহ করা।

৩.
রাজধানীতে ট্রাকচাপায়
মোটরসাইকেলের ২
আরোহী নিহত

সাইফুল ইসলাম:
রাজধানীর খিলক্ষেতে ট্রাকের ধাক্কায় মোটরসাইকেলের ২ আরোহী নিহত হয়েছেন। এতে আহত হয়েছেন আরও একজন। ময়নাতদন্তের জন্য পুলিশ তাদের লাশ মর্গে পাঠিয়েছে। আহত দ্বীন মোহাম্মদ (৩৫) কে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। নিহতরা হলেন- রোমান (৩৩) ও সজিব হোসেন (৩৫)। আজ শুক্রবার (২৬ জানুয়ারি) দুপুরে নিউজ পোস্টকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন খিলক্ষেত থানার উপ-পুলিশ পরিদর্শক (এসআই) মো. শহিদুল ইসলাম।
তিনি বলেন, আজ শুক্রবার (২৬ জানুয়ারি) ভোর ৫টার দিকে খিলক্ষেত থানার মস্তুল এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে এসআই শহিদুল ইসলাম আরও বলেন, ঘটনার সময় একটি মোটরসাইকেলে ৩ আরোহী ঢাকার দিকে আসছিলেন। পথিমধ্যে খিলক্ষেত থানাধীন মস্তুল এলাকায় পৌঁছালে দ্রæতগতির একটি ট্রাকের ধাক্কায় মোটরসাইকেলের ৩ আরোহী রাস্তায় ছিটকে পড়েন। এতে ঘটনাস্থলে রোমান নামের একজন প্রাণ হারান। খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থল থেকে গুরুতর আহত মোটরসাইকেল আরোহী সজীব ও দ্বীন মোহাম্মদকে ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগে নিয়ে যাই। সেখানে কর্তব্যরত ডাক্তার সজীবকেও মৃত ঘোষণা এবং দ্বীন মোহাম্মদকে ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেন। আইনি প্রক্রিয়ায় নিহত রোমানের মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি শেষে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। হতাহতের এ বিষয়টি আমরা তাদের পরিবারকে অবগত করেছি। এ ঘটনায় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ঘটনার তদন্তসহ জড়িতদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলেও জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।