সাইফুল ইসলাম:
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটের আগে বিএনপি’র হরতাল-অবরোধ চলাকালে ১৫ দিনের ব্যবধানে রাজধানীর পৃথক দুটি ট্রেনে নাশকতার আগুনে শিশুসহ ৮ যাত্রী পুড়ে অঙ্গার হয়েছে। বহুল আলোচিত জঘন্য এই নাশকতার ঘটনার মূল হোতারা এখনও অধরাই রয়ে গেছে। নির্মম এ ঘটনার এক মাস পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি আইন প্রয়োগকারী সংস্থা। তবে পুলিশ বলছে, পৃথক দুটি ঘটনারই তদন্ত চলছে। ইতোমধ্যেই গোপীবাগে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে নাশকতার ঘটনায় কয়েকজনকে গ্রেফতার দেখিয়ে রিমান্ডে নিয়ে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। ওইসব তথ্য যাচাই-বাছাই করে মূল হোতাদের চিহ্নিত ও গ্রেফতার করার চেষ্টা চলছে। রেলমন্ত্রী বলেছেন, ট্রেনে নাশকতাকারীরা চিহ্নিত হয়েছে। তবে মূল হোতাদের ধরতে কাজ করছে রেলওয়ে পুলিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থার সদস্যরা। আজ মঙ্গলবার (২৩ জানুয়ারি) পুলিশ ও রেলওয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
জানা যায়, গত ১৯ ডিসেম্বর ভোরে রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় নেত্রকোনা থেকে ঢাকাগামী ট্রেন মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসে আগুন দেয় অজ্ঞাতনামা দুর্বৃৃত্তরা। এতে ট্রেনের মাঝখানের ৩টি বগি পুড়ে যায়। আগুনে এক মা ও তার শিশুসহ ৪ জন পুড়ে অঙ্গার হয়ে যায়। পরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকদের চেষ্টায় অঙ্গার হয়ে যাওয়া মায়ের কোল থেকে শিশুটিকে আলাদা করা হয়। নির্মম এই দৃশ্য দেখে অনেকেই হতবাক হয়ে যায়। অনেকে চোখের জল ধরে রাখতে পারেনি। এ ঘটনার রেশ না কাটতেই গত ৫ জানুয়ারি রাজধানীর গোপীবাগে বেনাপোল এক্সপ্রেসে আগুন দেয়া দুর্বৃত্তরা। ওই ঘটনায় ৪ জন যাত্রী নিহত হন। আহত হন অনেক যাত্রী। পৃথক এ দুটি ঘটনায় মামলা হয়। ঘটনার তদন্তে নামে র্যাব-পুলিশসহ আইনপ্রয়োগকারী বিভিন্ন সংস্থা। কিন্তু ঘটনার একমাস পেরিয়ে গেলেও এখনও মূল হোতারা অধরাই রয়ে গেছে। ভুক্তভোগীর স্বজনরা জানান, তদন্তকারী কর্মকর্তারা তাদের আশ^স্ত করেছেন, পৃথক দুটি ঘটনায় ইতোমধ্যেই কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের দেওয়া তথ্য যাচাই-বাছাই করে মূল হোতাদের শনাক্ত ও গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ট্রেনে আগুন লাগানোর ঘটনায় গ্রেপ্তারের কথা বলা হলেও বিএনপি সংশ্লিষ্ট গ্রেপ্তারকৃত ৮ আসামিকে নাশকতার মামলা গ্রেপ্তার দেখিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে গোয়েন্দা পুলিশ। পরবর্তীতে তাদের রিমান্ডে নিয়েও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানো হলে গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে দুই আসামিকে শ্যোন অ্যারেস্ট দেখায় রেলওয়ে থানা পুলিশ। ওই দুজনকে গোপীবাগ ও তেজগাঁওয়ের দুটি মামলাতেই গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
রেলওয়ে থানা পুলিশের দাবি, পৃথক দুটি ঘটনাতেই দুই আসামিকে শ্যোন অ্যারেস্ট দেখিয়ে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। সেসব তথ্য যাচাই-বাছাই করার কাজ চলছে। এর বাইরে নতুন কোনও আসামিকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার বিভিন্ন ইউনিটের সহযোগিতা নিয়ে তারা মূল হোতাদের গ্রেপ্তারের জন্য চেষ্টা করছেন।
ঢাকা রেলওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ফেরদৌস আহমেদ নিউজ পোস্টকে জানান, ট্রেনে আগুন দেওয়ার ঘটনায় কোনও সংস্থা এখনও কোনও আসামি গ্রেপ্তার করে রেলওয়ে পুলিশকে দেয়নি। তারাই কারাগার থেকে দুই আসামিকে শ্যোন অ্যারেস্ট দেখিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। পুলিশ জানায়, তেজগাঁওয়ে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসে আগুন দেওয়ার ঘটনায় তারা বিমানবন্দর স্টেশনের সিসিটিভি ফুটেজ দেখে কয়েকজন সন্দেহভাজনকে শনাক্ত করেছেন। তবে তাদের বিস্তারিত পরিচয় উদ্ধার করা যায়নি। এছাড়া বেনাপোল এক্সপ্রেসে যাত্রীবেশে ট্রেনে উঠে দুর্বৃত্তরা আগুন দিয়েছে। এজন্য বেনাপোল থেকে প্রতিটি স্টেশনের সিসিটিভি ফুটেজ দেখে সন্দেহভাজনদের শনাক্তের চেষ্টা চলছে। এছাড়া তথ্য-প্রযুক্তির মাধ্যমেও অগ্নিসংযোগে জড়িতদের চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে।
এদিকে পৃথক দুটি ঘটনার পর সে সময় এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশিদ বলেন, বিএনপির ১০-১১ জন ট্রেনে আগুন লাগার আগে ভিডিও কনফারেন্স করেন। সেখানে তারা শুরু থেকে সবকিছু পরিকল্পনা করেন। মূল পরিকল্পনাকারীদের ধরতে কাজ করছে গোয়েন্দা পুলিশ।
এদিকে রেলমন্ত্রী মো. জিল্লুল হাকিম বলেন, ট্রেনে নাশকতাকারী কেউই ছাড় পাবে না। ইতোমধ্যেই কয়েকজনকে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। নাশকতাকারীরা চিহ্নিত হলেও মূল হোতাদের ধরতে কাজ করছে রেলওয়ে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থার সদস্যরা।