ডেঙ্গুর উচ্চ ঝুঁকিতে রাজধানীর দুই সিটির ৫৭ ওয়ার্ড

প্রকাশিত: ১:৩৩ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ৫, ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক:

রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশন এলাকার ৫৭টি ওয়ার্ড মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গুর ‘উচ্চ ঝুঁকিতে’ রয়েছে বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক জরিপে উঠে এসেছে। এর মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকার ২৮টি এবং উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকার ২৭টি ওয়ার্ড রয়েছে। উত্তরে ৫৪টি এবং দক্ষিণে ৭৫টি ওয়ার্ড মিলিয়ে ঢাকায় মোট ওয়ার্ড ১১৯টি। এই হিসাবে ঢাকার অর্ধেক ওয়ার্ডই রয়েছে ডেঙ্গুর ‘উচ্চ ঝুঁকিতে’। এদিকে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৬৭৮, যা চলতি বছর এক দিনের পরিসংখ্যানে সর্বোচ্চ। এই সময়ের মধ্যে পাঁচ জন মারা গেছে। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে ৬১ জনের।

গতকাল মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোলরুমের দেওয়া তথ্য থেকে এসব জানা যায়। গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে ৪২৯ জন ঢাকার, ২৪৯ জন অন্যান্য বিভাগের।


স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার জাতীয় ম্যালেরিয়া ও এডিস-বাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির আওতায় গত ১৮ থেকে ২৭ জুন ঢাকায় বর্ষা মৌসুম-পূর্ববর্তী জরিপ চলে। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ৯৮টি ওয়ার্ডে এই জরিপ করা হয়েছে। উত্তরের ৪০টি এবং দক্ষিণের ৫৮টি ওয়ার্ডে গেছেন জরিপকারীরা। এসব ওয়ার্ডের ৪১৪৯টি বাড়ি পরিদর্শন করে ৫৪৯টি বাড়িতে এডিস মশার লার্ভা পেয়েছেন তারা। এর মধ্যে উত্তরে ২৭২টি এবং দক্ষিণে ২৭৮টি বাড়িতে লার্ভা মিলেছে।

মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এসব ওয়ার্ডে এডিস মশার ব্রুটো ইনডেক্স ২০-এর বেশি। কোনো এলাকায় মশার লার্ভার উপস্থিতি হিসাব করা হয় ব্রুটো ইনডেক্সের মাধ্যমে। জরিপে প্রতি ১০০ প্রজনন উেসর মধ্যে ২০টি বা তার বেশি যদি এডিস মশার লার্ভা বা পিউপা পাওয়া যায়, তাহলে সেটাকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ উপস্থিতি’ বলা হয়। এই বিচারে ঢাকা উত্তর সিটির ২, ৩, ৫, ৬, ১০, ১৩, ১৪, ১৫, ১৬, ১৭, ১৮, ১৯, ২০, ২১, ২২, ২৩, ২৫, ২৬, ২৭, ২৮, ২৯, ৩০, ৩১, ৩৩, ৩৫, ৩৭ ও ৩৮ নম্বর ওয়ার্ড ঝুঁকিপূর্ণ।

মিরপুর, পল্লবী, মাজার রোড, পীরের বাগ. মনিপুর, শ্যাওড়াপাড়া, কাফরুল, ইব্রাহিমপুর, খিলক্ষেত, কুড়িল, জোয়ার সাহারা, বনানী, গুলশান, বারিধারা, মহাখালী, রামপুরা, খিলগাঁও, মালিবাগ, কাওরান বাজার, তেজতুরী বাজার, আগারগাঁও, মোহাম্মদপুর, বায়তুল আমান, মগবাজার, ইস্কাটন, বাড্ডা পড়েছে এসব ওয়ার্ডের আওতায়। আর দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৯, ১১, ১২, ১৩, ১৫, ১৬, ১৮, ১৯, ২২, ২৩, ২৬, ৩৩, ৩৪, ৩৬, ৪১, ৪৪, ৪৬, ৪৮, ৫০, ৫১, ৫৪, ৫৫ ও ৫৭ নম্বর ওয়ার্ডে ব্রুটো ইনডেক্স ২০-এর বেশি। গোরান, মেরাদিয়া, বাসাবো, সবুজবাগ, মুগদা, মাদারটেক, ফকিরাপুল, আরামবাগ, শাহজাহানপুর, রাজারবাগ, পুরানা পল্টন, বায়তুল মোকাররম, ধানমন্ডি, রায়ের বাজার, নীলক্ষেত, সায়েন্স ল্যাবরেটরি, এলিফ্যান্ট রোড, মিন্টো রোড, কাকরাইল, হাজারীবাগ, লালবাগ, আজিমপুর, পলাশী, বংশাল, সিদ্দিকবাজার, শাঁখারীবাজার, রায় সাহেব বাজার, ওয়ারী, সূত্রাপুর, মিল ব্যারাক, সায়েদাবাদ, উত্তর যাত্রাবাড়ী, মীর হাজীরবাগ, দোলাইরপাড়, গেন্ডারিয়া, জুরাইন ও কামরাঙ্গীরচর এসব ওয়ার্ডের আওতায় পড়েছে।


সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. নাজমুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘এই ফলাফলের মানে হলো, এসব এলাকায় ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশার উপস্থিতি অনেক বেশি। উত্তর-দক্ষিণ যা-ই বলি না কেন, আমরা সবাই ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে আছি।’ এডিস মশাবাহিত এই রোগে আক্রান্ত হয়ে গত বছর ৬২ হাজার ৩৮২ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হন। তাদের মধ্যে রেকর্ড ২৮১ জনের মৃত্যু হয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, সারা দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে বর্তমানে ১ হাজার ৬৬৯ জন রোগী ভর্তি আছে। এর মধ্যে ঢাকাতেই আছে ১ হাজার ১০০ জন। বাকি ৫৬৯ জন ঢাকার বাইরে অন্য বিভাগে।