ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিষেকে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক

প্রকাশিত: ৩:২৩ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২১, ২০২৫

ডেস্ক রিপোর্ট:

যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয়বার অভিষেক ঘটলো। এর আগে তিনি ২০১৭-২০২১ সাল মেয়াদে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট ছিলেন। ২০ জানুয়ারি ২০২৫, ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই অভিষেক অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছিলেন বেশ কয়েকটি দেশের সরকার প্রধানগণ। দীর্ঘদিনের প্রচলিত মার্কিন প্রথা ভেঙে ডোনাল্ড ট্রাম্প তাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন।ইতিপূর্বে কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট এই রীতি অনুসরণ করেননি। ২০২৪ সালের ৫ নভেম্বরের নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প শুধু নিজেই ভূমিধ্বস বিজয় অর্জন করেননি, সেই সাথে তার দল রিপাবলিকান পার্টি মার্কিন পার্লামেন্টের দুই কক্ষ কংগ্রেস ও সিনেটে সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। এ থেকে ধারণা করা যায় ডোনাল্ড ট্রাম্প তার অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক নীতি বাস্তবায়নে বড় কোনো বাধার সম্মুখীন হবেন না।

বিশ্বের প্রায় সবগুলো রাষ্ট্রই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক নীতির সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যুক্ত। তাই ডোনাল্ড ট্রাম্পের শাসনামলে তার গৃহীত নীতি দেশে দেশে কী প্রভাব পড়বে তা নিয়ে চলছে বিশ্লেষণ। ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচিত হওয়ার তিন মাস পূর্বে ৫ আগস্ট বাংলাদেশে সংঘটিত হয় অবিস্মরণীয় গণঅভ্যুত্থান ও বিপ্লব। পতন ঘটে হাসিনার দীর্ঘ ১৫ বছরের স্বৈরাচারী শাসনের।

পতিত শাসকগোষ্ঠীর অনুগতদের পক্ষ থেকে প্রচারণা চালানো হয়, ট্রাম্প নির্বাচিত হলে আওয়ামী লীগ পুনরায় ক্ষমতায় ফিরবে। অতঃপর ট্রাম্প নির্বাচিত হওয়ার পর তাদের মধ্যে বিশেষ উচ্ছ্বাস দেখা দেয়। আওয়ামী লীগের সর্বাধিনায়ক শেখ হাসিনা তার নেতা-কর্মী-সমর্থকদের ডোনাল্ড ট্রাম্পের ছবি সম্বলিত প্ল্যাকার্ড হাতে ঢাকার রাজপথে মিছিল করার আহ্বান জানান। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রিপাবলিকান দলের নব নিযুক্ত ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্স ডাইরেক্টর তুলসী গ্যাবার্ডকে ঘিরে বাংলাদেশের বিপ্লবী জনগণকে ভয় দেখানোর প্রচারণা শুরু হয়। কিন্তু দিন যতই গড়ায় আওয়ামী প্রচার-প্রোপাগান্ডা ততই অসাড় প্রমাণিত হতে থাকে।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের শাসনামলে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক কেমন হবে তা অনুমান করার জন্য দুটো দিক বিবেচনা করা প্রয়োজন। প্রথম দিক হলো যুক্তরাষ্ট্র-ভারত সম্পর্ক। অর্থাৎ বিগত ২০ বছরের মতো বাংলাদেশ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র ভারতের স্বার্থ ও ইচ্ছাকে প্রাধান্য দেবে কিনা তা বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন।

২০০১ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ দমন ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র-ভারত বিশেষ সখ্যতা গড়ে উঠেছিল। এছাড়া এ সময় চীন বিরোধী জোট গঠনেও যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে কাছে টেনেছিল। এভাবে যুক্তরাষ্ট্র-ভারত যে উষ্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল তা থেকে বাংলাদেশের ওপর ভারতের প্রভাব বিস্তারের ক্ষেত্র তৈরি হয়েছিল।

যুক্তরাষ্ট্র বিগত ২০ বছরের যুদ্ধ-বিগ্রহে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে। এ বিপুল অঙ্কের যুদ্ধ ব্যয় যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। ২০০৮ সালে মার্কিন অর্থনীতি মহামন্দার কবলে পড়ে। এ কারণে যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধ থেকে বেরিয়ে যেতে চায়। ওবামা প্রশাসন ইরাক ও আফগানিস্তান থেকে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সৈন্য প্রত্যাহার করেন।

ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তার প্রথম মেয়াদে সেই নীতিই অনুসরণ করেন। আর বাইডেন প্রশাসনের শুরুর দিকেই ১৫ আগস্ট ২০২১ সালে আফগানিস্তান থেকে সর্বশেষ মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহার করা হয়। তবে বাইডেন প্রশাসন ২০২২ সালে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ এবং ২০২৩ সালের অক্টোবরে ইসরাইল-গাজা যুদ্ধে পরোক্ষভাবে জড়িয়ে যায়।

অবশেষে বাইডেন প্রশাসন ক্ষমতা ত্যাগের মাত্র দুই দিন আগে ইসরায়েল-গাজা যুদ্ধের ইতি টানে এবং ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ সমাপ্তির ভার ডোনাল্ড ট্রাম্পের ওপর একপ্রকার ছেড়ে দেয়। এছাড়া বাইডেন প্রশাসন ইসরায়েল-হিজবুল্লাহ যুদ্ধ বন্ধ করেছে। আর সিরিয়ায় আসাদের পতন পরবর্তীকালে কোনো গোলযোগে হাওয়া না দিয়ে তা সামলানোর দায়িত্বভার তুরস্কের ওপর অর্পণ করেছে।

সুতরাং যুক্তরাষ্ট্রের পরিবর্তিত পররাষ্ট্রনীতি হলো যুদ্ধে না জড়ানো। এর পরিবর্তে চীনের অর্থনৈতিক উত্থানকে মোকাবিলা করা যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান অগ্রাধিকার। ২০ বছর যুক্তরাষ্ট্র যখন যুদ্ধ-বিগ্রহে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরচ করেছে তখন চীন বিশ্বব্যাপী ব্যবসা-বাণিজ্য ও পণ্যের পসরা সাজিয়েছে। তাই যুক্তরাষ্ট্র এখন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে প্রাধান্য বিস্তার করে চীনকে টেক্কা দিতে চাইছে।