ড. ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশের নতুন সম্ভাবনা দেখছেন বিনোদ খোসলা

প্রকাশিত: ৪:১৩ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ২৯, ২০২৪

ডেস্ক রিপোর্ট:

বাংলাদেশের অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন স্বনামধন্য ভারতীয় বংশোদ্ভূত আমেরিকান ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তা এবং ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্ট বিনোদ খোসলা। সান মাইক্রোসিস্টেমের অন্যতম এই প্রতিষ্ঠাতা বলেছেন, অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশ তার সম্ভাবনায় পৌঁছাতে পারলে তাতে ভারতের সর্বোত্তম স্বার্থ রয়েছে।

বিনোদ খোসলা বলেন, একজন গর্বিত আমেরিকান এবং ভারতীয় সন্তান হিসেবে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশে যে সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, তা নিয়ে আমি আশাবাদী
গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার তিন দিন পর ড. ইউনূস বাংলাদেশের অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে শপথ নেন। বিনোদ খোসলা বলেন, ইউনূস, যাকে আমি বন্ধু মনে করি এবং কয়েক দশক ধরে চিনি তিনি শিক্ষার্থী আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা ছাত্রদের অনুরোধে এ দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন।

আমি এমন একজন উদ্যোক্তা, যে নতুন আইডিয়ার শক্তিতে বিশ্বাসী এবং টেকসই উদ্যোগ ও এর প্রভাব নিয়ে আগ্রহী। ইউনূস তার জীবনে যা কিছু অর্জন করেছেন তাতে আমি বিস্মিত। আমি আমার বিনিয়োগের মাধ্যমে বিশ্বে সকল প্রাণের জন্য মঙ্গলজনক এমন প্রযুক্তির জন্য কাজ করছি।

অধ্যাপক ইউনূস অন্তহীন পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং নিরলস প্রচেষ্টার মাধ্যমে দারিদ্র্য হ্রাস, স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষার ইতিবাচক প্রভাব এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক সাফল্যের মডেলগুলোর একটি সিরিজ তৈরি করেছেন।

উদাহরণস্বরূপ ১৯৯৬ সালে তিনি বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে কয়েক হাজার দরিদ্র নারীর হাতে মোবাইল ফোন তুলে দিতে সফল হয়েছিলেন, যাতে তারা নিজ উদ্যোগে অর্থ উপার্জন করতে পারেন।

আমি জনজীবন ও পরিবেশ রক্ষায় উত্সাহী। অধ্যাপক ইউনূস ১৯৯৫ সালে একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন যেটি ১.৮ মিলিয়ন সোলার হোম সিস্টেম এবং ১ মিলিয়ন ক্লিন কুক স্টোভ ইনস্টল করেছে। এটিও মূলত বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলেই হয়েছে।

অধ্যাপক ইউনূস অন্তহীন পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং নিরলস প্রচেষ্টার মাধ্যমে দারিদ্র্য হ্রাস, স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষার ইতিবাচক প্রভাব এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক সাফল্যের মডেলগুলোর একটি সিরিজ তৈরি করেছেন।

উদাহরণস্বরূপ ১৯৯৬ সালে তিনি বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে কয়েক হাজার দরিদ্র নারীর হাতে মোবাইল ফোন তুলে দিতে সফল হয়েছিলেন, যাতে তারা নিজ উদ্যোগে অর্থ উপার্জন করতে পারেন।

আমি জনজীবন ও পরিবেশ রক্ষায় উত্সাহী। অধ্যাপক ইউনূস ১৯৯৫ সালে একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন যেটি ১.৮ মিলিয়ন সোলার হোম সিস্টেম এবং ১ মিলিয়ন ক্লিন কুক স্টোভ ইনস্টল করেছে। এটিও মূলত বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলেই হয়েছে।

গ্রামীণ ব্যাংকের অবদানও এখানে স্মরণীয়, যা ১০ মিলিয়নেরও বেশি দরিদ্র নারীদের ৩৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ দিয়েছে। এই ক্ষুদ্রঋণ থেকে অনেকেই উপার্জনের পথ খুঁজে পেয়েছেন। ভারত এবং অন্যান্য অনেক দেশেও একই মডেলে কাজ হয়েছে।

কিন্তু এখন অধ্যাপক ইউনূস একটি নতুন চ্যালেঞ্জের দিকে মনোযোগ দিয়েছেন। জনসংখ্যার দিক থেকে বিশ্বের অষ্টম বৃহত্তম দেশ বাংলাদেশ, যেখানে ১৭ কোটির বেশি মানুষ বাস করেন। এটি এমন একটি দেশ যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় অর্ধেক জনসংখ্যা বাস করে, অথচ যার আয়তন যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয়েস অঙ্গরাজ্যের সমান।

বাংলাদেশ এবং সারাবিশ্বে এমন অনেক মানুষ আছেন যারা ইউনূসের সাফল্য কামনা করেন। আমি তাদের একজন। কিন্তু এমনও অনেকে আছেন যারা তাকে এবং অন্তর্র্বতীকালীন সরকারকে ব্যর্থ করতে চায়; অনেকে তার নেতৃত্ব নিয়ে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে যাচ্ছেন।

আমি তার মূল্যবোধ, তার কর্মপদ্ধতি এবং প্রাথমিকভাবে তার নেতৃত্বের ফলাফল নিয়ে আমার দৃষ্টিভঙ্গি জানাতে চাই। দায়িত্বের প্রথম দুই মাসে তিনি পুলিশ বাহিনীকে কাজে ফিরিয়েছেন, যা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি করেছে। সনাতন ধর্মাবলম্বীসহ অন্যান্য সংখ্যালঘুদের সুরক্ষার জন্য সক্রিয় ব্যবস্থা নিয়েছেন, ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে কাজ করছেন, সার্ককে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য আঞ্চলিক শক্তিগুলোকে পরামর্শ দিয়েছেন এবং বাংলাদেশের ব্যাংকিং ও আর্থিক খাতে স্থিতিশীলতা আনার ক্ষেত্রে অগ্রগতি হয়েছে (যেটি তিনি দায়িত্ব গ্রহণের সময় বিশৃঙ্খলার মধ্যে ছিল)।

তিনি জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে কার্যকরভাবে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন এবং নিউইয়র্কে থাকাকালীন বিশ্ব নেতাদের সঙ্গে ৫০টিরও বেশি ফলপ্রসূ বৈঠক করেছেন।

আমি তাকে তার ক্যারিয়ার জুড়ে যে মূল্যবোধ এবং পদ্ধতি ব্যবহার করতে দেখেছি নতুন ভূমিকায় কাজ করার সময়ও তিনি তা প্রয়োগ করেছেন। সেগুলো হলো- মূল বিষয়গুলোতে একটি জাতীয় ঐক্যমত তৈরি করা, কোনটি সবচেয়ে ভালো কাজ করে তা নির্ধারণ করার জন্য পরীক্ষা করা, নাগরিকদের (বিশেষ করে তরুণদের) ব্যবহারিক এবং গঠনমূলক কাজে যুক্ত হতে অনুপ্রাণিত করা, ধর্ম, লিঙ্গ বা জাতি নির্বিশেষে সকল মানুষকে সম্মান করা। তিনি বাস্তববাদী ও সেইসঙ্গে প্রচণ্ড উদ্যমী (৮৪ বছর বয়সী হওয়া সত্ত্বেও)।
কিন্তু অনেক চ্যালেঞ্জ আছে। একটি সরকারকে নেতৃত্ব দেওয়া সামাজিক ব্যবসা এবং অলাভজনক প্রতিষ্ঠান চালানোর চেয়ে বহুগুণ বেশি কঠিন হতে পারে। ক্ষমতা হারানো পূর্ববর্তী সরকার দ্বারা সুবিধাপ্রাপ্ত একটি গোষ্ঠীও চায় তার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হোক। বছরের পর বছর ক্ষমতার বাইরে থাকা দলটি দ্রুত ফিরতে চায়। তবে আমি বিশ্বাস করি ইউনূস তার কাজ করে যেতে পারবেন।

গত সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশের জনগণ এবং সারাবিশ্বের শুভাকাঙ্ক্ষীদের কাছে একটি চিঠি যেখানে ৯২ জন নোবেল বিজয়ীসহ ১৯৮ জন বিশ্ব নেতার সই ছিল সেখানে আমি সইও করেছিলাম। সেখানে বলা হয়েছিল, অধ্যাপক ইউনূসকে শেষ পর্যন্ত সমগ্র দেশের, বিশেষ করে সবচেয়ে প্রান্তিক মানুষের উন্নতির জন্য কাজ করার জন্য মুক্ত হতে দেখে আমরা উচ্ছ্বসিত, যে আহ্বান তিনি ছয় দশক ধরে অত্যন্ত জোরালোভাবে এবং সাফল্যের সঙ্গে অনুসরণ করেছেন।

এই ভূমিকায় তার প্রথম দিকের সাফল্য বাংলাদেশের ভবিষ্যতের জন্য শুভ সূচনা। একটি সফল বাংলাদেশ ব্যর্থ বাংলাদেশের তুলনায় ভারতের শক্তিশালী মিত্র হওয়ার সম্ভাবনা রাখে। আমাদের সবার উচিত অধ্যাপক ইউনূসের এই গুরুত্বপূর্ণ অন্তর্র্বতীকালীন ভূমিকার অগ্রগতি অব্যাহত রাখার দিকে মনোনিবেশ করা, কারণ বাংলাদেশের সম্ভাবনায় পৌঁছানোতেই ভারতের সর্বোত্তম স্বার্থ।