ড. ইউনূসের মামলা: গ্রামীণ টেলিকমের লভ্যাংশ নিয়ে চেম্বারে স্থিতাবস্থা

প্রকাশিত: ৭:৫৮ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ৩, ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক:
শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ কল্যাণের শ্রমিকদের ১০৩ কোটি টাকা দিতে লেবার অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনালের রায় বাতিল বিষয়ে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশ ৫ ফেব্র“য়ারি পর্যন্ত স্থিতাবস্থা জারি করেছেন চেম্বারজজ আদালত। ওইদিন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের নিয়মিত ও পূণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য ঠিক করেছেন আদালত।

আজ রোববার (৩ ডিসেম্বর) আপিল বিভাগের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের চেম্বার জজ আদালত এ আদেশ দেন। এ দিন আদালতে শ্রমিকদের আবেদনের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন অ্যাডভোকেট মো. খুরশীদ আলম খান। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল আবু মোহাম্মদ এএম আমিন উদ্দিন। ড. ইউনুসের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ আল মামুন। বিষয়টি নিউজ পোস্টকে নিশ্চিত করেছেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান।
এর আগে গ্রামীণ কল্যাণের সাবেক ১০৬ কর্মী শ্রমিককল্যাণ তহবিল ও শ্রমিক অংশগ্রহণ তহবিল থেকে মুনাফা পাওয়ার অধিকারী বলে শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের দেওয়া রায় আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ও বাতিল ঘোষণা করে রায় দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। এক রিটের চ‚ড়ান্ত শুনানি নিয়ে গত বৃহস্পতিবার (৩০ নভেম্বর) হাইকোর্টের বিচারপতি জাফর আহমেদ ও বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ রায় দেন। শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের দেওয়া রায় অবৈধ প্রশ্নে জারি করা রুল যথাযথ ঘোষণা করে এ রায় দেন আদালত।
হাইকোর্টে রিটের পক্ষে ওইদিন ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ এফ হাসান আরিফ, আবদুল্লাহ আল মামুন ও খাজা তানভীর আহমেদ। অন্যদিকে ১০৬ কর্মীর পক্ষে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান ও আইনজীবী গোলাম রাব্বানী শরীফ।
গ্রামীণ কল্যাণের সাবেক ১০৬ কর্মী শ্রমিককল্যাণ তহবিল ও শ্রমিক অংশগ্রহণ তহবিল থেকে মুনাফা (২০০৬ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত) পেতে শ্রম আইনের ২৩১ ধারায় শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালে মামলা (ব্যাখ্যামূলক) করেছিলেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ৩ এপ্রিল শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনাল রায় দেন। এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে গ্রামীণ কল্যাণের পক্ষে ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাইকোর্টে রিটটি করেন।
রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত ৩১ মে হাইকোর্ট রুল দিয়ে শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের দেওয়া রায়ে ছয় মাসের জন্য স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে আদেশ দেন। রুলে শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের রায় কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। এরপর হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে সাবেক ১০৬ কর্মীর আপিল বিভাগে আবেদন করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ২২ জুন আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে হাইকোর্ট দেওয়া আদেশ স্থগিত করেন। পাশাপাশি আবেদনটি আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য নির্ধারণ করেন। গত ১০ জুলাই আপিল বিভাগ এ সংক্রান্ত রুল হাইকোর্টে নিষ্পত্তি করতে নির্দেশ দেন।
আইনজীবী আবদুল্লাহ আল মামুন ওইদিন বলেছিলেন, শ্রম আইনের ২৩১ ধারা অনুসারে মালিক ও শ্রমিকের মধ্যে কোনো চুক্তি হলে বা অ্যাওয়ার্ড বিষয়ে মতপার্থক্য হলে এর ব্যাখ্যার জন্য সরাসরি শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালে প্রতিকার চাওয়ার সুযোগ আছে। যেহেতু এ ক্ষেত্রে মালিক ও কর্মীর মধ্যে কোনো চুক্তি হয়নি, এ বিষয়ে স্বাক্ষর হয়নি, তাই আপিল ট্রাইব্যুনালে যাওয়ার সুযোগ নেই। আপিল ট্রাইব্যুনাল এখতিয়ার বহির্ভূতভাবে রায় দিয়েছেন। আপিল ট্রাইব্যুনালের রায় বাতিল করেছেন হাইকোর্ট। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করার কথা জানিয়েছেন সাবেক ১০৬ কর্মীর আইনজীবী গোলাম রাব্বানী শরীফ।
রিট আবেদনকারীর আইনজীবীরা জানান, ২০০৬ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত ১০৬ কর্মী চাকরিতে ছিলেন। ২০১৩ সালের সংশোধিত শ্রম আইনে সব প্রতিষ্ঠানের কর্মীকে মুনাফা দেওয়ার বিধান রাখা হলেও এর ভ‚তাপেক্ষ (২০১৩ সালের আগে) কার্যকারিতা দেওয়া হয়নি। যে কারণে ২০০৬ ও ২০১৩ সালের আইন অনুসারে তারা মুনাফা পাওয়ার অধিকারী নন। অথচ, ২০০৬ সাল থেকে ওই কর্মীরা শ্রমিককল্যাণ তহবিল ও শ্রমিক অংশগ্রহণ তহবিলের মুনাফা পাওয়ার অধিকারী বলে শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনাল রায় দিয়েছেন। যে কারণে রিটটি করা হয়।