ঢামেকে ইফতারিতে রোগীর কোনো বাজেট নেই, স্বজনরা কেনেন বাইরে থেকে

প্রকাশিত: ৩:০৯ অপরাহ্ণ, মার্চ ১৮, ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক:

ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে রোগীদের ইফতারের জন্য আলাদা কোনো বাজেট বরাদ্দ নেই। রোজার মাস ছাড়া অন্য দিনের নিয়মেই দেওয়া হয় রোগীদের খাবার। এছাড়া রোগীদের স্বজন ইফতারি কেনেন হাসপাতালের বাইরে বিভিন্ন দোকান থেকে।

সোমবার (১৭ মার্চ) ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে ঘুরে রোগীদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা যায়।

শুক্রবারে মানিকগঞ্জ থেকে আসা নিউরো সার্জারির ফ্লোরে চিকিৎসাধীন দুর্জয়ের মা শিল্পী জানান, আমার ছেলে শুক্রবার মোটরসাইকেলে অ্যাক্সিডেন্ট হলে ঢাকা মেডিকেলে জরুরি বিভাগের নিয়ে আসা হয়, পরে এখানে নিউরোসার্জারি বিভাগে ভর্তি করা হয়। রোগীর জন্য সরকারি বরাদ্দ করা নিয়মিত খাবার দিলেও এখানে ইফতারির কোনো ব্যবস্থা নেই। ইফতারের আগে আমরা হাসপাতালে বাইরে গেটের বিভিন্ন দোকান থেকে খাবার কিনে নিয়ে আসি।ঢামেকের সার্জারি বিভাগে ভর্তি আছেন টাঙ্গাইলের আমির হামজা। তিনি বলেন, হাসপাতাল থেকে নিয়মিত সকালের নাস্তা, দুপুরের খাবার, বিকেলের নাস্তা ও রাতের খাবার দেওয়া হয়, কিন্তু এখানে সরকারিভাবে ইফতারির জন্য রোগীর স্বজনদের কোনো খাবার দেওয়া হয় না। যারা রোজা রাখেন, তারা বাইরে থেকে কিনে এনে ইফতারি করেন। আমাদের বাড়ি টাঙ্গাইলে, এখানে তো আর ইফতারি দেওয়ার মতো নিজেদের কেউ নেই, কিনে খাওয়া ছাড়া তো আর উপায় নেই।

 

হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে ইফতারি কেনার সময় কথা হয় জুলহাসের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমরা গত ৯ তারিখে লক্ষ্মীপুর থেকে ঢাকা মেডিকেলে এসেছি। আমার বাবা অসুস্থ আলী হোসেন নতুন ভবনে মেডিসিন বিভাগে ভর্তি আছেন। রোজা রাখতে হয়, তাই সব সময় হাসপাতালের সামনের দোকান থেকে ইফতারি কিনে নিয়ে যাই। হাসপাতালে তো সরকার রোগীর জন্য দুই বেলা ভাত, দুই বেলা নাস্তা দিচ্ছে, কিন্তু আমরা যারা এখানে রোজা রাখি, তাদের জন্য তো আর আলাদা কোনো ব্যবস্থা নেই। তাই আমাদের তো ভরসা এই বাইরে থেকে খাবার কিনে নিয়ে যাওয়াটাই।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের কিচেনের এক কর্মচারী জানান, আমাদের এখানে ইফতারির জন্য আলাদা কোনো সরকারি বাজেট নেই। রোগী প্রতি ১৭৫ টাকা বরাদ্দ থাকে, এর মধ্যে সকালের নাস্তা হিসেবে পাঁচ পিসের একটি পাউরুটি, একটি ডিম, একটি কলা এবং ২০০ মিলিগ্রামের একটি প্যাকেট দুধ থাকে। দুপুরের জন্য ভাত, মাছ, সবজি ও ডাল, বিকালের নাস্তায় চার পিসের দুই প্যাকেট বিস্কুট, একটি কলা, একটি ডিম এবং রাতের জন্য ভাত, বয়লার মুরগির মাংস, সবজি ও ডাল দেওয়া হয়। বিশেষ দিনে খাবারের কিছু ভিন্নতা থাকে, এছাড়া সারা বছরই রোগীদের জন্য একই ধরনের খাবার দেওয়া হয়।

জামালপুরের মেলান্দ থেকে হাসপাতালে ২০০ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি আছেন আব্দুল বারেক। তার বোন জামাই আতিকুল ইসলাম বলেন, বারেক ভাই সাইকেল নিয়ে চালিয়ে যাওয়ার সময় হঠাৎ সাইকেল থেকে পড়ে মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হন। পরে তার নাক-মুখ দিয়ে রক্ত বের হওয়া শুরু হয়। ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করা হয় ২০০ নম্বর ওয়ার্ডে। সিট না থাকায় হাসপাতালে সিঁড়ির করিডরে আছি। রোগীর জন্য হাসপাতালে খাবার দেওয়া হলেও রমজান মাস উপলক্ষ্যে আলাদা করে কোনো ব্যবস্থা থাকে না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে হাসপাতালের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) আব্দুর রহমান বলেন, আমাদের হাসপাতালে রোগীদের জন্য ইফতারির আলাদা কোনো ব্যবস্থা নেই। যেহেতু রোগীদের নিয়মিত ওষুধ খেতে হয়, তাদের একটি নিয়মের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। আমরা শুধু এখানে রোগীর জন্য সরকারিভাবে বরাদ্দকৃত খাবার দিই, তাদের স্বজনদের জন্য নয়। এখানে খাবারের ভিন্নতা শুধু বিশেষ দিনে হয়। সরকারিভাবে কখনো রবি বা স্বজনদের জন্য ইফতারের জন্য আলাদা বরাদ্দ দেওয়া হয় না বলে জানান তিনি।