নিজস্ব প্রতিবেদক:
কৌশিক হোসেন তাপস কখনও গায়ক, কখনও সুরকার, আবার কখনও সংগীত পরিচালক। গানবাংলা টেলিভিশন চ্যানেলের প্রধান নির্বাহী তিনি। মিডিয়ায় তাঁর উত্থান নিয়ে রয়েছে রহস্য, রয়েছে কুকীর্তির নানা কাহিনি। তবলা বাদক থেকে টিভি চ্যানেলের কর্ণধার বনে যাওয়া তাপস আলোচিত এসব কারণে। দেশে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর আত্মগোপনে থাকা তাপসকে একটি মামলায় গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
গানবাংলায় যাতায়াত আছে এমন কয়েকজন জানান, টিভি চ্যানেলটির অফিসে মাঝেমধ্যেই দেখা মিলত তারকাদের। চলত রাতভর আড্ডা, গান। এসবের মধ্যমণি ছিলেন তাপস ও তাঁর স্ত্রী ফারজানা মুন্নী। অনেকে বলেন, স্ত্রীর হাত ধরে রাতারাতি উত্থান ঘটে তাপসের। মুন্নী গানবাংলা চ্যানেলের চেয়ারম্যান।
গত রোববার রাতে রাজধানীর ভাটারার প্রগতি সরণি থেকে তাপসকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। উত্তরা পূর্ব থানায় দায়ের হওয়া এক মামলার ৯ নম্বর আসামি তিনি। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হত্যাকারীদের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে অর্থের জোগান দিয়েছেন। গতকাল সোমবার আদালতে হাজির করা হলে বিচারক তাঁকে কারাগারে পাঠান।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া শাখা থেকে জানানো হয়, গত ১৮ জুলাই উত্তরার আজমপুর নওয়াব হাবিবুল্লাহ হাইস্কুলের সামনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী ইশতিয়াক মাহমুদ পেটে গুলিবিদ্ধ হন। হত্যাচেষ্টার অভিযোগে গত ২৯ অক্টোবর উত্তরা পূর্ব থানায় মামলা করেন ইশতিয়াক। মামলায় তাপস ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুনসহ ১২৬ জনকে আসামি করা হয়।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ১৮ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অংশ নিতে ইশতিয়াকসহ অন্যরা ৪ নম্বর সেক্টরের আজমপুর নওয়াব হাবিবুল্লাহ হাইস্কুলের সামনে পৌঁছামাত্র আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ সন্ত্রাসী ও ক্যাডাররা হামলা করে। ১ থেকে ২৫ নম্বর আসামির প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ নির্দেশ এবং আর্থিক সহযোগিতায় অন্য আসামিরা ব্যাপক দাঙ্গাহাঙ্গামা সৃষ্টি করে। দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে অতর্কিত হামলা, মারধর ও গুলিবর্ষণ করতে থাকে। আত্মরক্ষায় ছোটাছুটি করার সময় আসামিদের ছোড়া গুলি ইশতিয়াকের পেটে, পিঠে, হাতে ও মাথায় লাগলে গুরুতর আহত হয়ে তিনি রাস্তায় পড়ে যান।
উত্তরা প্র্বূ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবু সাঈদ মিয়া জানান, ডিবির সহায়তায় তাপসকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করে আদালতে হাজির করা হলে ঢাকা মহানগর হাকিম মো. সাইফুজ্জামান তাঁকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। আগামীকাল বুধবার রিমান্ড শুনানির দিন ধার্য রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তাপস একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের কর্মচারী ছিলেন। গানবাংলা চ্যানেলের মালিক ছিলেন রবি শংকর মৈত্র। প্রভাব খাটিয়ে তাঁর কাছ থেকে চ্যানেলটি নিয়ন্ত্রণে নেন তাপস। এর পেছনে গত আওয়ামী লীগ সরকারের একাধিক নেতার হাত ছিল বলে জানা যায়।
অনেকেই বলেন, তাপসের উত্থানে ‘ম্যাজিক’ হলেন তাঁর স্ত্রী রূপচর্চা ও ফ্যাশন এক্সপার্ট ফারজানা মুন্নী। দেশ-বিদেশে পরিচিতি রয়েছে তাঁর। স্ত্রীকে ব্যবহার করেই আওয়ামী সংস্কৃতি অঙ্গনে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন তাপস। একসময় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতেও সম্পৃক্ত হন। তাপসের বিরুদ্ধে নানা অনৈতিক কাজে লিপ্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে। গানের অনুষ্ঠানের নামে তিনি ওই সব কুকীর্তি করতেন বলে জানা যায়।