তামাকের রাজত্বে হারিয়ে যাচ্ছে অন্যান্য ফসল

প্রকাশিত: ১:৪২ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২০, ২০২৫

লালমনিরহাট প্রতিনিধি:

 

লালমনিরহাটে তামাকের রাজত্বে দিন দিন হারিয়ে যেতে বসেছে অন্যান্য ফসলের চাষাবাদ। তামাক নামক বিষপাতা চাষের জেলা হিসেবে শীর্ষস্থানে রয়েছেন লালমনিরহাট জেলা। গতবছরের তুলনায় এ বছর এই পাতার চাষ বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ সেই সাথে কমছে জমির উর্বরতা এবং বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি।

জানা গেছে, তামাকজাত কোম্পানির প্রলোভনে ও অধিক মুনাফার আশায় তামাক চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন এ অঞ্চলের কৃষকেরা। তামাক উৎপাদনের আগেই কোম্পানিগুলোর বিক্রির নিশ্চয়তা, দর নির্ধারণে চাষিদের অতি লাভজনক হওয়ায় দিন দিন বাড়ছে তামাক চাষ, আর কাজে আসছে না কৃষি অধিদপ্তরের পরামর্শ।

সরেজমিনে দেখা গেছে ,কয়েক বছর আগেও লালমনিরহাটের যেসব এলাকায় আবাদি জমিতে ধান, গম, ভুট্টা, সরিষা ও আলুসহ বিভিন্ন আগাম জাতের সবজী চাষ করা হতো, সেসব জমিতে এখন তামাক চাষ হচ্ছে। লালমনিরহাট জেলার ৫ উপজেলাসহ তিস্তা নদীর প্রত্যন্ত চরাঞ্চলের জমিগুলোতে দিন দিন তামাক চাষ বেড়েই চলেছে । এসব তামাকের জমিতে বড়দের পাশাপাশি শিশুদের দিয়ে চলছে পরিচর্যার কাজ।

আদিতমারী উপজেলার সাপ্টিবাড়ি ইউনিয়নের তামাক চাষি লাজু সরকার জানান, লালমনিরহাটের পাঁচটি উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে আদিতমারী উপজেলায় তামাকের চাষ বেশি হয়। অন্যান্য ফসল চাষ করে ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় এবং শ্রমিকের অধিক মূল্য হওয়ায় তারা প্রতি বছর ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। ফলে অধিক মুনাফার আশায় স্বাস্থ্য ঝুঁকি জেনেও তামাক চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।

তিনি আরও বলেন, সিগারেট কোম্পানির মাধ্যমে তামাক চাষিদের জন্য একর প্রতি জমিতে বীজ ও নগদ টাকা দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে ইসুবি সারের জন্য টাকা ও সার আগাম দেওয়া হয়।

আদিতমারী উপজেলা সদরের টিএনটি পাড়ার বাসিন্দা দেলোয়ার হোসেন জানান, তিনি গত বছরের তুলনায় এবছর আরও ২ বিঘা জমিতে তামাক চাষ করেছেন। এ ফসল চাষে অধিক লাভবান হওয়ায় তিনি এ চাষে পরিবারসহ ঝুঁকে পড়েছেন।

লালমনিরহাট সিভিল সার্জন নির্মলেন্দু রায় বলেন, তামাক চাষ ও সেবনে মানবদেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। তামাক পাতার বিড়ি, সিগারেট, গুল, খইনি ও জর্দাসহ নানান ধরনের নেশাজাতীয় দ্রব্য সেবন করায় বাড়ছে শ্বাসকষ্ট, স্ট্রোক, চর্ম , যৌন, ক্যানসারসহ নানা রোগ। তামাক চাষের কারণে কৃষকদের পাশাপাশি স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছেন শিশুসহ, সাধারণ মানুষ।

এ বিষয়ে লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মো. সাইখুল আরিফিন জানান, এবছর লালমনিরহাট জেলার ৫ টি উপজেলা মোট ১৫ হাজার ৫৭ হেক্টর জমিতে তামাক চাষ করা হয়েছে। যা গতবছরের তুলনায় ৯ হাজার ৮ শত ৬৫ হেক্টরের বেশি জমিতে তামাক চাষ বেশি হয়েছে ।

তিনি বলেন, কৃষি জমি এবং জনস্বাস্থ্যের জন্য তামাক চাষ মারাত্মক ক্ষতিকর। তিনি আমাদের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সভা সেমিনার ও উঠান বৈঠকের মাধ্যমে কৃষকদের তামাক চাষের প্রতি নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। তবে তামাকজাত পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো কৃষকদের বিনামূল্যে তামাকের বীজ, সারসহ, বিনা সুদে ঋণ দেওয়া ও অধিক লাভজনক হওয়ায় কোন পরামর্শই কাজে আসছে না। যে কারণে তামাক চাষে আগ্রহী বেশি হচ্ছে এ অঞ্চলের কৃষকরা বলে তিনি দাবি করেন।