তালাকের ভয়ে হাসপাতালে ফেলে যাওয়া কন্যা শিশুর কাছে ফিরেছেন সেই মা

প্রকাশিত: ১:১৩ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২৭, ২০২৪

জেলা প্রতিনিধি চুয়াডাঙ্গা

কন্যা সন্তান জন্ম হওয়ায় চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ফেলে যাওয়া সেই মায়ের সন্ধান মিলেছে। তিনি নিজেই সন্তানের কাছে ফিরে এসেছেন। প্রশাসনের মাধ্যমে শুক্রবার (২৬ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় কন্যা সন্তানকে ফিরে পান তার প্রকৃত বাবা-মা। বর্তমানে ওই নবজাতক ও মা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সকাল পৌনে ৮টায় প্রসব বেদনা উঠলে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে এক কন্যা সন্তানের জন্ম দেন পাপিয়া খাতুন নামে এক প্রসূতি। সেখান থেকে তাকে গাইনি ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। ওয়ার্ডে থাকা অবস্থায় বাচ্চাকে পাশের আরেক রোগীর স্বজন বিলকিস বানুর কাছে রেখে পালিয়ে যান মা ও তার স্বজনরা।

সেসময় ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পাপিয়া-আলমগীর দম্পতির ঘরে আরও তিনটি কন্যা সন্তান রয়েছে। তাই তালাকের ভয়ে তৃতীয়বার কন্যা সন্তান হওয়া নবজাতককে পরিত্যাগ করেন মা। এরপর বিষয়টি জানাজানি হলে পুলিশ, প্রশাসন ও সমাজসেবা অধিদপ্তর নবজাতককে হাসপাতালের তত্ত্বাবধানে রাখে। খবর ছড়িয়ে পড়ে মুহূর্তেই।

পরদিন শুক্রবার বিকেলে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক ড. কিসিঞ্জার চাকমা ও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফাতেমা তুজ জোহরার সঙ্গে যোগাযোগ করেন নবজাতকের বাবা। পরে সকল যাচাই-বাছাই শেষে নবজাতককে প্রকৃত বাবা-মায়ের কাছে হস্তান্তর করে প্রশাসন। বর্তমানে নবজাতক ও মা হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন আছেন।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, হাসপাতালের রেজিস্ট্রারে নিজেদেরকে আলমডাঙ্গা উপজেলার কেষ্টপুর গ্রামের পাপিয়া-আলমগীর দম্পতি হিসেবে পরিচয় দেন। সে পরিচয় অনুসন্ধান করে কাউকে খুঁজে পায়নি পুলিশ। পরে দেখা যায় তাদের নাম ঠিক থাকলেও ঠিকানার তথ্য ভুল দেওয়া হয়েছে। তাদের প্রকৃত ঠিকানা চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার ডিহি কেষ্টপুর গ্রামে। আর এটি তাদের তৃতীয় কন্যা সন্তান।

নবজাতকের বাবা আলমগীর হোসেন বলেন, গর্ভবতী অবস্থায় আমার স্ত্রী পাপিয়া খাতুন তার মায়ের বাড়ি আলমডাঙ্গার পুটিমারী গ্রামে ছিল। গতকাল হাসপাতালে আসার সময় তারা আমাকে জানিয়েছে যে, আমার বাচ্চাটি আর বেঁচে নেই। আমি ধরেই নিয়েছি আমার বাচ্চা মরে গেছে। কিন্তু পরে খবর পেলাম এটিই আমার বাচ্চা।নবজাতকের মা পাপিয়া খাতুন বলেন, বার বার কন্যা সন্তান হওয়ায় তালাকের ভয়ে আমি আমার স্বামীকে বোঝানোর জন্য বাচ্চার মৃত্যুর কথা বলেছিলাম। আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি।

এ ব্যাপারে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান গরীব রুহানী মাসুম জানান, আমরা এখন থেকে শিশুটির পরিবারের খোঁজ রাখবো। তাদের সুবিধা অসুবিধা দেখা হবে। শিশুটি ও তার মায়ের চিকিৎসার বিষয়ে আমরা সাহায্য করছি।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. ওয়াহিদ মাসুদ রবিন বলেন, জরুরি বিভাগের মধ্যেই ওই প্রসূতি স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় কন্যা শিশুটির জন্ম দেন। এক রোগীর স্বজনের কাছে জানতে পেরেছি, ওই দম্পতির দুইটি কন্যা সন্তান রয়েছে। আবারও কন্যা সন্তান হলে স্বামী তালাক দেবে বলে জানিয়েছে। তাই বাচ্চাকে ওই নারীর কাছে রেখে পালিয়ে যান। তবে এ ঘটনার একদিন পর ওই কন্যা শিশুর মা ও বাবা হাসপাতালে এসে নিজেদের সন্তান সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধান থেকে নিয়েছেন। বর্তমানে ওই নবজাতক ও মা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

এ ব্যাপারে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফাতেমা তুজ জোহরা জানান, প্রকৃত অভিভাবকের কাছে নবজাতককে হস্তান্তর করা হয়েছে। এজন্য তাদের কাছ থেকে লিখিত নেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে পরবর্তীতে ওই নবজাতকের খোঁজখবর রাখবে প্রশাসন।